Home জাতীয় ফিলিং স্টেশনে তেলের ভয়ংকর ফাঁকি

ফিলিং স্টেশনে তেলের ভয়ংকর ফাঁকি


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা : রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে করিম অ্যান্ড সন্স নামে একটি ফুয়েলিং স্টেশনে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি টিম। ওই স্টেশনে জ্বালানি তেল দেওয়ার জন্য  দুটি ডিসপেনসিং মেশিনে কারসাজির প্রমাণ মেলে। একটি মেশিনে প্রতি ৫ লিটার অকটেনে ৫৪০ মিলিলিটার এবং অন্যটিতে ৪৯০ মিলিলিটার জ্বালানি কম দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় পরিমাপযন্ত্রে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিম ওই ফুয়েলিং স্টেশনটিকে আড়াই লাখ টকা জরিমানা করে। এটি গত শনিবারের ঘটনা।

ওই দিনই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিম ঢাকার রমনা ফুয়েলিং স্টেশনে অভিযান চালায়। শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই ফুয়েলিং স্টেশনটি বন্ধ রাখা হয়, বাড়তি দামে তেল বিক্রি করার জন্য। ফুয়েলিং স্টেশনটিতে ২৭ হাজার ৬২৩ লিটার অকটেনের মজুদ পাওয়া গেলেও বিনা নোটিসে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সেটি বন্ধ রাখার প্রমাণ মেলে। শুধু তাই নয়, স্টেশনটির কাগজপত্র তদারকি করে দেখা যায় এর ট্রেড লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ; এমনকি বিস্ফোরক পরিদফতর, ফায়ার সার্ভিসসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য লাইসেন্সও ছিল না স্টেশনটিতে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের ফুয়েলিং স্টেশনগুলোর একই অবস্থা। বেশির ভাগই তাদের ডিসপেনসিং ইউনিটগুলোয় কারসাজি করে মাপে কম দিচ্ছে জ্বালানি তেল। অনেক স্টেশনে আবার জ্বালানিতে ভেজালও মিলছে। এতে ব্যক্তিগত গাড়ি বা যাত্রী ও পণ্য বাহী যানগুলো কেবল মাপে কম পাচ্ছে তাই নয়, ভেজাল জ্বালানি দেওয়ার কারণে ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।

রাজধানীর একটি ফুয়েলিং স্টেশন থেকে নিজের মোটরসাইকেলের জন্য ৫০০ টাকার অকটেন কেনেন ইসতিয়াক আহমেদ নামে এক যুবক। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে তেল কম দেওয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ওই যুবক এরপর ‘সঠিক পরিমাণে তেল চাই’ প্ল্যাকার্ড ধরে প্রতিবাদে দাঁড়িয়ে যান। এর পরই ফুয়েলিং স্টেশনগুলোয় অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বিএসটিআইয়ের কয়েকটি টিম। সারা দেশেও অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দৈবচয়ন ভিত্তিতে শনিবার আমাদের টিম রাজধানীর দুটি ফুয়েলিং স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের পর যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে একটি ফুয়েলিং স্টেশনে মাপে কম দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। একটি স্টেশনে দেখা গেছে তাদের লাইসেন্সসহ কাগজপত্রই ঠিক নেই। ভোক্তা’র মহাপরিচালক জানান, মতিঝিলের করিম অ্যান্ড সন্স ফুয়েলিং স্টেশনে জ্বালানি দেওয়ার জন্য ছয়টি ডিসপেনসিং ইউনিট ছিল। টিম যাওয়ার খবরে চারটি মেশিন তারা ঠিক করে ফেলেন। বাকি দুটি মেশিন পরীক্ষা করে দেখা যায় গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ ফুয়েল কম দিচ্ছেন তারা। অর্থাৎ ওই মেশিন দিয়ে এত দিন কোনো গাড়ি ৫০ লিটার তেল নিলে গড়ে প্রায় ৫ লিটার তেল কম মিলেছে। এটি ভয়াবহ প্রতারণা। সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অনুমান করছি সারা দেশেই ফুয়েলিং স্টেশনগুলোয় এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। এ কারণে দেশব্যাপী ম্যাজিস্ট্রেটসহকারে অভিযান পরিচালনা করা দরকার। ইতোমধ্যে আমাদের টিম মাঠে নেমেছে। এ ছাড়া বিএসটিআই ও বিস্ফোরক পরিদফতরে রবিবার চিঠি পাঠানো হয়েছে সারা দেশে এ ধরনের অভিযান পরিচালনার জন্য। আমরা মনে করি কোনো ডিসপেনসিং মেশিনে কারসাজি বা ভেজাল তেলের প্রমাণ পাওয়া গেলে অথবা কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকলে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে যেন সিলগালা করে দেওয়া হয়।’মানসম্মত জ্বালানি তেল সরবরাহ ও মাপে কম দেওয়া প্রতিরোধে পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সঙ্গে গতকাল একটি সভা করেছেন বলেও জানান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ফুয়েল স্টেশনগুলোর ডিসপেনসারে মিটার টেম্পারিং ও কারচুপির মাধ্যমে ভোক্তাকে পরিমাপে কম তেল সরবরাহসহ ভেজাল তেল দেওয়ার অভিযোগ আসছে। এ ছাড়া কিছু ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে দাহ্য পদার্থ বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র এবং মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা পরিচালনার প্রমাণ মিলেছে। এ অবস্থায় ফিলিং স্টেশনগুলোর ফুয়েল ডিসপেনসিং ইউনিটের মিটার টেম্পারিংসহ ভেজাল তেল সরবরাহ বন্ধে তেলের নমুনা পরীক্ষা ও ব্যবসা পরিচালনার কাগজপত্র হালনাগাদ যাচাইয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। গতকাল এ চিঠিটি বিএসটিআই ও বিস্ফোরক পরিদফতরে পাঠানো হয়। বরিশাল, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় ফুয়েলিং স্টেশনগুলোয় অভিযান পরিচালনা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কয়েকটি টিম। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, জেলার পদুয়ার বাজারের রিভার?ভিউ সিএনজি ফি?লিং স্টেশন ও কালাকচুয়ার ইস্টজোন ফিলিং স্টেশনকে জ্বালা?নি তেলের প?রিমা?পে কম দেওয়ায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, পরিমাপে কম দেওয়ার অপরাধে মহানগরের হাজী ইসরাইল ফিলিং স্টেশনকে ৫০ হাজার ও কলেজ রোড ফিলিং স্টেশনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের টিম। গতকাল দুটি ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে ৫ লিটার পেট্রোল ও অকটেন পরিমাপ করে ৩০০ মিলিলিটার কম পান কর্মকর্তারা। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পরিমাপে কম দেওয়ায় জেলা সদরের পাবইকান্দি এলাকায় হিমু ফিলিং স্টেশনকে দেড় লাখ ও গোল্ডেন অয়েল কোং অ্যান্ড ফিলিং স্টেশনকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, পলাশবাড়ীতে পরিমাপে কম পেট্রোল বিক্রি করায় গতকাল রূপ ফিলিং স্টেশনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে অভিযান পরিচালনা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় একটি ফিলিং স্টেশনে পরিমাণে তেল কম দেওয়ায় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আলিগঞ্জে মেসার্স জননী ফিলিং স্টেশনে ৫ লিটার ডিজেলে ২৩০ মিলিলিটার কম পাওয়া যায়। চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর গতকাল দুপুরে লোকনাথপুর গ্রামের মেসার্স কে এম ফিলিং স্টেশন ও দামুড়হুদা ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের দায়ে জরিমানা করে। নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিন তেলে মাপে কম দেওয়ায় রানীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শাহী ফিলিং স্টেশনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।