Home ক্যাম্পাস খবর শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখর আইআইইউসি ক্যাম্পাস

শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখর আইআইইউসি ক্যাম্পাস


পরিক্রমা ডেস্ক : সীতাকুণ্ডের কুমিরায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) পঞ্চম সমাবর্তন গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন ১৫ হাজার স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। তাদের পদচারণায় দিনভর মুখর ছিল পাহাড়ের পাদদেশে ছায়া সুনিবিড় ক্যাম্পাস। প্রকৃতির ছোঁয়ায় মুগ্ধ হন অতিথিরাও।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মনোনীত প্রতিনিধি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক উপাচার্য ড. আইনুন নিশাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ, আইআইইউসি উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মছরুরুল মওলা, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, শরিয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শাকের আলম শওক, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আকতার সাঈদ।

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষ হতে হবে। গ্র্যাজুয়েটদের এক থেকে দুই শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হতে পারেন। বাকিরা দক্ষতা না থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছেন।

উপমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি ছিল। তারা ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাদের অনেকেই ইসলামকে ব্যবহার করে মনে সংকীর্ণতার চাষ করেছেন। অথচ ইসলাম সহনশীলতার চর্চা করতে শিক্ষা দেয়। বর্তমানে যাদের দিয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন হয়েছে তারা অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

উপমন্ত্রী আরও বলেন, আইআইইউসি ইসলাম ও নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। তবে ইসলাম ও মওদূদীবাদ এক নয়। মওদূদীবাদ সংকীর্ণতা ও অস্থিতিশীলতার শিক্ষা দেয়। পাকিস্তান আমলে ইসলাম ও রাজনীতিকে এক করা হয়েছিল। যার কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই অস্থিতিশীলতা থেকে বাঙালির মুক্তির জন্য ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মহীনতা এক নয়। বর্তমান সরকার ইসলামের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

সমাবর্তন বক্তা ড. আইনুন নিশাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। যার যে বিষয় ভালো লাগে তাকে সে বিষয় পড়তে হবে। যেমন আজকে যারা ব্যবসায় অনুষদের ডিগ্রি নিয়েছেন তারা অর্থনীতি কিংবা কাছাকাছি কোনো বিষয়ে অধ্যয়ন করতে পারেন।

আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী বলেন, বিশ্বের নানা প্রান্তে যখন আমি যাই, তখন আইআইইউসির গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তখন আমার গর্ববোধ হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রতিটি প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সম্পৃক্ত। মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমি আইআইইউসির জন্য অনুদান এনেছি। আইআইইউসি দেশের উচ্চশিক্ষায় আজ অনন্য অবদান রাখছে। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে ২০১৬ সালের স্প্রিং সেমিস্টার থেকে ২০২০ সালের অটাম সেমিস্টার পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ৩৬১ জনকে সনদ বিতরণ করা হয়। এদের মধ্যে স্নাতক পর্যায়ে ৯ হাজার ৪৫৯, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৫ হাজার ৯০২ জন।

চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক দেওয়া হয় ৩৬ শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় ১৩৭ জন শিক্ষার্থীকে। আইআইইউসি এই সমাবর্তনে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করেছে বোর্ড অব ট্রাস্টি চেয়ারম্যান স্বর্ণপদক। প্রথমবারের শরিয়াহ অনুষদের শিক্ষার্থী জোবাইদুন নাহার পান্নাকে এ পদক দেওয়া হয়।