নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ। কলেজের নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ, যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। সর্বশেষ গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়োগের দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতে এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে কলেজের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের গভর্নিং বডি নিয়োগের দাবিতে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারী এক নারী শিক্ষার্থীর গায়ে হাত দেন কলেজের এক শিক্ষক।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে মহানগর মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির পদটি শূন্য হয়। সেখানে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক মাসের মধ্যে সভাপতি নিয়োগের কথা থাকলেও তার কোনো ফলাফল না পাওয়ায় আন্দোলন শুরু করেন তারা। এতে কলেজের শিক্ষকগণ বাধা দিতে আসেন। ঘটনার একপর্যায়ে ওই ছাত্রীকে হেনস্তা করা হয়।
ভুক্তভোগী ফারিয়া আহমেদ ফারহা বলেন, গত এক মাস ধরে আমাদের কলেজ অভিভাবকহীন। আমরা একজন যোগ্য ব্যাক্তিকে গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে চেয়ে আবেদন করি। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না কলেজের কিছু স্বার্থবাদী শিক্ষক। আমরা এ দাবি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে একটা আবেদন দেওয়ার জন্য কলেজের সামনে এসে জড়ো হতে থাকি। সেখানে ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন এসে আমাদের কার্যক্রমে বাধা দেন। বাধা না মানলে আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি যখন বলি- ‘আপনি একজন ছেলে মানুষ হয়ে মেয়ের গায়ে হাত দিতে পারেন না।’ তখন তিনি মহিলা শিক্ষক রাজিয়াকে ডেকে এনে আমার আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেন। এমনভাবে কার্ডটি টান দেন যে, আমার হিজাব খুলে যায়। এতে আমি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি। আমি নিজেকে অরক্ষিত মনে করে সূত্রাপুর থানায় ফোন দিলে, তারা আমাকে সাহায্যের জন্য আসেনি।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আ ন ম সাইফুদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ থাকায় গত দুদিন ধরে কলেজে যাই না। তাই আজকের ঘটনা সম্পর্কে অবগত নই। কিন্তু শুনেছি অনার্স পড়ুয়া কিছু শিক্ষার্থী কলেজে ঢুকেছে এবং স্যারদের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু কি বিষয়ে কথা হয়েছে, তা জানি না।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক সেলিম হোসেন বলেন, আমার নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। আমি এগুলো করিনি। অধ্যক্ষ সাইফুদ্দিন একজন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক। তার অধ্যক্ষ পদ ধরে রাখার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়েছেন।
কলেজ শিক্ষিকা রাজিয়া বলেন, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। যদি থেকে থাকি, তাহলে যে শাস্তি দিবেন, মেনে নিব।
এদিকে, শিক্ষিকা রাজিয়ার উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, ওই শিক্ষিকা তখন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতির ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে।