ওয়েব্রিজ জটিলতাঃ বেনাপোল বন্দরে আটকে আছে শতাধিক পণ্যের চালান

মোঃ ফারুক আহম্মেদ : বেনাপোল স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজের স্কেল নিয়ে কাস্টমস ও বন্দরের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতার কারণে গত ১০ দিন ধরে বেনাপোল কাস্টমস ইনভেজটিকেশন রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট (আইআরএম) পরীক্ষণ আমদানিকৃত কমার্শিয়াল পণ্যের পরীক্ষণ রিপোর্ট দিচ্ছেন না। এতে বেনাপোল বন্দরে পণ্য আটকে আছে। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্য চালানগুলো বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগে বন্দর স্কেলে ট্রাকসহ পণ্যের মোট ওজন নিশ্চিত করা হয়। পণ্য আনলোড হওয়ার পরে আবার খালি ট্রাক ওজন করে পণ্যের নিট ওজন নিশ্চিত করে ওজন স্লিপ দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েক মাসে বেনাপোলের কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বন্দরের দেয়া ওজন স্লিপের ওজন কমিয়ে নকল স্লিপের সংযুক্ত করে পণ্য খালাস করে নিয়ে গেছে।

ওজন স্লিপে ওজন কমানোর কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় পণ্যের সঠিক ওজন নিশ্চিত করতে ৭ আগস্ট ১১টি পণ্য চালানের ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহম্মেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বন্দর পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওজন স্লিপের সত্যতা যাচাই না করে কাস্টমসের চিঠির বিপরীতে কাস্টমস কমিশনার বরাবর অন্য একটি চিঠি দেয়।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য স্থলবন্দরের ওয়েব্রিজগুলোর প্রতিটি পণ্য চালানের ওজন স্লিপে কাস্টমস ও স্থলবন্দরের প্রতিনিধির যৌথ স্বাক্ষরে সম্পাদিত হয়। বেনাপোল স্থলবন্দরের অটোমেশন কার্যক্রম সফটওয়্যারের আপগ্রেডেশন কার্যক্রম চলমান। এ ঘটনায় কাস্টমস হাউজ (আইআরএম) কর্তৃক পণ্য পরীক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। পরীক্ষণ রিপোর্ট না হলে সে চালানের শুল্কায়নও সম্ভব নয়। এ কারণে বন্দর থেকে আমদানি করা কমার্শিয়াল পণ্য খালাস হচ্ছে না।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে ওয়েব্রিজের ওজন নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ১০ দিন ধরে কমার্শিয়াল পণ্য কাস্টম (আইআরএম) পরীক্ষণ গ্রুপ পরীক্ষণ করলেও রিপোর্ট না হওয়ায় শুল্কায়ন হচ্ছে না। যে কারণে বন্দর থেকে খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ তবে বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওয়েব্রিজের ওজন নিশ্চিতসহ স্লিপে উভয়ই স্বাক্ষর করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী। বন্দর থেকে পণ্য খালাস না হওয়ায় শতাধিক কমার্শিয়াল পণ্য চালান বন্দরে আটকে আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা।

বেনাপোল কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, কয়েক মাসে বেনাপোলের কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বন্দরের দেয়া ওজন স্লিপ নকল করে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে খালাস করেছে। ওজন স্লিপে ওজন কমানোর কারণে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় পণ্যের সঠিক ওজন নিশ্চিত হওয়ার জন্য ৭ আগস্ট ১১টি পণ্য চালানের বন্দর স্কেলের ওজন নিশ্চিত হতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বলেন, পণ্য পরীক্ষণের সময় তো কাস্টমস কর্মকর্তারা ডিজিটাল স্কেলে ওজন নিশ্চিত করে থাকেন। আসলে সমস্যা কোথায় হচ্ছে আমার জানা নেই।

বেনাপোল প্রতিনিধি




স্কুল থেকে একসময় ঝরে পড়া দুই ভাই হলেন বিসিএস ক্যাডা

স্কুল থেকে একসময় ঝরে পড়া দুই ভাই হলেন বিসিএস ক্যাডার
মো. আনিসুর রহমানের বেড়ে ওঠা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ছোট প্রতিষ্ঠানে বেসরকারি চাকরি করতেন। মা গৃহিণী। থাকতেন পল্লবী এলাকার একটি টিনশেড বাসায়। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে আনিসুর সবার বড়। আনিসুরসহ চার ভাই পড়তেন পল্লবী মাজেদুল ইসলাম মডেল হাইস্কুলে। একবার স্কুলে প্রথম সাময়িক পরীক্ষার আগে সবার বকেয়া বেতন ও পরীক্ষা ফি ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিতে না পারায় চার ভাইয়ের কাউকেই পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি।

প্রধান শিক্ষকের কাছে পরীক্ষায় বসার আবেদন করেও সম্মতি পাননি তাঁরা। বাধ্য হয়েই স্কুল ছেড়ে দিতে হয়। বন্ধ হয়ে যায় চার ভাইয়ের লেখাপড়া। প্রতিবেশীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে অন্য কিছু করার কথা বলেন। কিন্তু আনিসুরের মা তা হতে দেননি। শুরু হয় আনিসুর ও তাঁর মায়ের জীবনসংগ্রাম। ভাঙারি ব্যবসায়ী এক চাচার কাছ থেকে টাকা ধরে করে পরবর্তী সময় আনিসুর ভর্তি হন রূপনগর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে। সেখানে এক শিক্ষকের সহায়তায় নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যান। টিউশনি করে অন্য ভাইদের আবার পড়াশোনা শুরু করার ব্যবস্থা করেন। এই চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মো. আনিসুর রহমান ও ছোট ভাই মো. রাফসান রুবেল এবার একই সঙ্গে ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। মো. আনিসুর রহমান প্রশাসন ক্যাডারে (মেধাক্রম ২৪) ও মো. রাফসান রুবেল কৃষি বিপণন ক্যাডারে (মেধাক্রম ৮) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।


স্কুল থেকে ঝরে পড়ার সেই দিনের কথা মনে হলে এখনো চোখ টলমল করে ওঠে আনিসুরের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘টাকার অভাবে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি না পাওয়ায় স্কুলের গেট দিয়ে আমরা চার ভাই পরীক্ষা না দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম, সেই গেট দিয়েই আমাদের সহপাঠীরা পরীক্ষার হলে যাচ্ছিল। দু-একজন জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাস, পরীক্ষার আর কিছুক্ষণ বাকি আছে।” আমি কিছু না বলে ছোট ভাইদের সঙ্গে নিয়ে অন্য রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম। সে পথটা মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ পথ। কাঁদতে কাঁদতে বাসায় যাওয়ামাত্রই মা আমাদের দেখে তিনিও কান্না শুরু করেন। আমাদের অসময়ে বাড়িতে দেখেই মা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর সন্তানেরা টাকার অভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি। সেদিন আমার মায়ের কান্নার দৃশ্য, আমার ছোট ভাইদের কান্নার দৃশ্য আমার কাছে আজও পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টের দৃশ্য। সেই দৃশ্য আমি আজও ভুলিনি আর কখনো ভুলবও না। সেই কান্নার দৃশ্য আমাকে আমার অতীত মনে করিয়ে দেয় এবং আমাকে আরও বেশি পরিশ্রম করার শক্তি জোগায়।’

আরও পড়ুন
‘যোগ্যতা থাকলে বিসিএসে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপার না’
মিরপুরের রূপনগর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক সুফিয়া হোসেনের সহযোগিতায় আনিসুরের জীবনযুদ্ধ কিছুটা সহজ হয়। আনিসুর রহমান বলেন, ‘সুফিয়া হোসেন ম্যাডাম স্কুলে বিনা বেতনে পড়াতেন। ম্যাডাম একদিন ডেকে বললেন, “তোমাকে আরও পড়াশোনা করতে হবে। তুমি আমার বাসায় এসে পড়বে।” কিন্তু আমার মা-বাবার তো টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই জানালে ম্যাডাম বললেন, “আমি টাকার জন্য পড়াই না, আসতে বলেছি আসবে।” পরদিন ম্যাডামের বাসায় গিয়ে শুরু হলো ইংরেজি পড়া। ম্যাডাম তো টাকা নিতেন-ই না, উল্টো আমাকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা দিতেন। আমি শুধু একটা কথাই ভাবতাম, মানুষ এত ভালো হয় কী করে? আমি যতটুকু ইংরেজি শিখেছি, তা ম্যাডামের কাছ থেকেই শিখেছি। পরবর্তী সময় ইংরেজি পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা, ছোট ভাইবোন এবং পরিবারের খরচ চালিয়েছি। ম্যাডামের সেই ঋণ হয়তো কখনো শোধ করতে পারব না, তবে চেষ্টা করি টাকার অভাবে যাদের পড়াশোনা থমকে যায়, তাদের সাহায্য করতে।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে পাস করা আনিসুর রহমানের ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা ছিল তৃতীয় বিসিএস। এর আগে ৩৮ ও ৪০তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যোগদান করেননি। ২০১৯ সাল থেকে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) কর্মরত আছেন। চাকরি করার পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা—তিনটি ধাপের মধ্যে লিখিত ধাপ সবচেয়ে কঠিন মনে হয় বলে জানান আনিসুর। তিনি বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় পাঁচ দিনে মোট ২১ ঘণ্টা লিখতে হয়। আমার মতো যাঁরা চাকরি করে, বিসিএস পরীক্ষা দেন, তাঁদের জন্য এটা অনেক কঠিন। কারণ, চাকরি করলে শুধু পরীক্ষার দিনই ছুটি পাওয়া যায়, পরীক্ষার আগে-পিছে পাওয়া যায় না। তাই টানা পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমিও একটি পরীক্ষার আগে অসুস্থ হয়েছিলাম।’আনিসুরের ছোট ভাই মো. রাফসান রুবেল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে বিএসসি করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএতে। এখনো এমবিএ করছেন। ৪১তম বিসিএসে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই সফলতা পেয়েছেন। কৃষি বিপণন ক্যাডারে মেধাতালিকায় অষ্টম হয়েছেন তিনি। বর্তমানে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত।
মো. আনিসুর রহমানের মতো একজন বড় ভাই পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন ছোট ভাই রাফসান রুবেল। তিনি বলেন, ‘পুরো যুদ্ধটাই আসলে বড় ভাইয়ের একার। ভাই আমাদের পরিবারের ফাদার ফিগার। নিজে পড়াশোনা করার পাশাপাশি আমাদের সবার দায়িত্ব নিয়ে মানুষ করেছেন। বড় ভাইদের কেন মাথার ছায়া বলা হয়, সেটা আমি আমার জীবনে প্রমাণ পেয়েছি।




রিজভীর বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকার মানহানির মামলার আবেদন হিরো আলমের

‘মানহানি’র অভিযোগ এনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।

সোমবার (৭ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে উপস্থিত হয়ে এ আবেদন করেন।

এর আগে বেলা ১২টার পর আদালতে উপস্থিত হন হিরো আলম। এরপর তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মনসুর এ আবেদন করেন। মামলার আবেদনে চার জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

গতকাল রবিবার অভিযোগ নিয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে যান হিরো আলম। সেখান থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় আদালতে মামলা করার। পরে সেখান থেকে সরাসরি আদালতে গেলেও মামলা না করেই ফিরে যান তিনি। এর একদিন পরে এসে আবার মামলার আবেদন জানালেন হিরো আলম।

এর আগে ডিবি কার্যালয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রিজভী আমাকে পাগল এবং অশিক্ষিত বলেছেন। তিনি আমাকে কেন পাগল ও অশিক্ষিত বলবেন? আমি কখনও বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলিনি। তারা কেন আমাকে অবমাননা করে কথা বলবে? রিজভী আমাকে অবমাননা করে কথা বলেছেন।’

উল্লেখ্য,গত ১৮ জুলাই রাজশাহী নগরীর ভুবন মোহন শহীদ মিনার পার্কে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে হিরো আলমকে ‘অর্ধ পাগল’ ও ‘অশিক্ষিত’ হিসেবে অভিহিত করেন রুহুল কবির রিজভী। এই মন্তব্যের বিষয়ে ডিবি প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন হিরো আলম।

রিজভীর এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে অশিক্ষিত বলে আপনারা নিজেদেরও অশিক্ষিত বলে গালি দিচ্ছেন। কারণ, আপনাদের দলের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদ জিয়া কিন্তু এইট পাস। তিনি এইট পাস, আমি সেভেন পাস, এক ক্লাস নিচে।’




জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষে : প্রধান নির্বাচন কমিশনার

পরিক্রমা ডেস্ক : অক্টোবরের আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অথবা নভেম্বরের শুরুতে ঘোষণা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

আজ রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ চার দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।




কুমিল্লা নামে বিভাগ আমার ব্যক্তিগত চাওয়া নয়, কোটি মানুষের দাবি : আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার

পরিক্রমা ডেস্ক : কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেছেন, “কুমিল্লা’ নামে কুমিল্লা বিভাগ চাওয়ার কথাটা আমার ব্যক্তিগত কথা না। কুমিল্লার কোটি মানুষে দাবি এটা। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু কন্যা গণমানুষের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করবেন না।”

স্থানীয় সময় গত ৯ জুলাই লন্ডনের রয়্যাল রিজেন্সি হলে অনুষ্ঠিত গণসংবর্ধনা ও কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে একথা বলেন তিনি। দ্য কুমিল্লা কনসোর্টিয়াম ইউকে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি বাহার আরও বলেন, “ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অনেক স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়েছে। এই কুমিল্লা খুনি খন্দকার মোশতাকের কুমিল্লা নয়, এমনকি সে কুমিল্লার স্থায়ী বাসিন্দাও নয়। কুমিল্লায় অসংখ্যা জ্ঞানী ও গুণী মানুষের জন্ম, তাই আমরা সবাই ‘কুমিল্লা’ নামেই বিভাগ চাই।”

অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, দ্য কুমিল্লা কনসোর্টিয়াম ইউকের প্রধান উপদেষ্টা রুহুল আমিন, আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম দুদু, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা ও যুগ্ম-আহবায়ক আইনজীবী সোহেল কারিমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।




শুদ্ধাচার পুরস্কার পেলেন মাউশি মহাপরিচালক

পরিক্রমা ডেস্ক : শুদ্ধাচার চর্চার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।

পুরস্কারের অংশ হিসেবে এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ, ক্রেস্ট ও সনদ পাবেন তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং এর আওতাধীন সংস্থায় শুদ্ধাচার চর্চার স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে আরও রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বাজেট শাখার উপসচিব নূর ই আলম, উন্নয়ন অনুবিভাগের মোহাম্মদ রুবায়েত হোসাইন এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন, সেবা উন্নয়ন ও উদ্ভাবন শাখার আকলিমা খাতুন।




বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আরো ২৯ লাখ ডলার দিচ্ছে জাপান

পরিক্রমা ডেস্ক : জাপান সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখতে প্রায় ২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি চুক্তি সই করেছে। যা ৩৯১ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ইউএনএইচসিআরের ঢাকাস্থ কার্যালয়ে এ চুক্তিতে সই করেন ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।

জাপানের এ অনুদানে ইউএনএইচসিআর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় ও বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন পাটি, কম্বল ও সাবান বিতরণ করে যেতে সক্ষম হবে। এছাড়া শরণার্থীদের ঘর এবং বিভিন্ন অবকাঠামো যেমন ড্রেন, সেতু, হাঁটার পথ, সিঁড়ি, পাহাড়ি ঢাল ধরে রাখার দেয়াল মেরামত ও মজবুত করা হবে।

ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও বলেন, জাপানের কাছ থেকে সহায়তাটি এল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যখন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আবারও তাদের জীবন পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে সাম্প্রতিক কিছু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ও ঘূর্ণিঝড় মোকায় ক্যাম্পের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর। এ অনুদান আমাদের সাহায্য করবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ও ভবিষ্যত দুর্যোগের ঝুঁকি থেকে শরণার্থীদের রক্ষা করতে। ক্যাম্পে বিশেষ করে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

কক্সবাজারের পাশাপাশি ভাষানচরে জাপানের অনুদানে শরণার্থীদের অংশগ্রহণে চলমান কিছু প্রকল্প সহায়তা পাবে, এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা বাড়াতে কিছু কাজ করা হবে, যেমন পরিসেবাগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা।

জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, জাপান সরকারের সহায়তা রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণ উভয়ের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, আমরা ইউএনএইচসিআরকে ২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার দিতে পেরে আনন্দিত। আশা করি, এ সহায়তা আশ্রয় নির্মাণ এবং পুনর্বাসন, এবং সাইট রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে অগ্নিপ্রতিরোধসহ শরণার্থীদের সুরক্ষাকে শক্তিশালী করবে।

জাপান মিয়ানমারে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে সহায়তাসহ টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাবে এবং শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য ইউএনএইচসিআরের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করবে।

২০১৭ সালের আগস্টে শরণার্থী সংকট শুরুর সময় থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক কার্যক্রমের অটল সমর্থক হিসেবে আছে জাপান। এ নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশে কর্মরত এনজিওগুলোকে জাপান এখন পর্যন্ত ২শ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছে।

এ চুক্তির ঘোষণা এল ইউএনএইচসিআরের ডেপুটি হাইকমিশনার কেলি ক্লেমেন্টসের বাংলাদেশ সফরের ঠিক পরপরই। যিনি সফরকালে শরণার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনীয় মানবিক ও জীবিকামূলক চাহিদার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তহবিলের অভাবে শরণার্থীদের জন্য খাদ্যসহ জীবন রক্ষাকারী সরবরাহ কমে গিয়েছে।

কক্সবাজারে ও ভাষানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দানকারী স্থানীয় বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তার জন্য মানবিক সংস্থাগুলো এবার ৮৭৬ মিলিয়ন ডলারের তহবিলের আবেদন করেছে।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত, জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানটি প্রায় ২৮ শতাংশ অর্থায়ন পেয়েছে। একটি বৃহদাকার মানবিক বিপর্যয় এড়াতে স্থিতিশীল ও টেকসই অর্থায়নের প্রয়োজন।




সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি: একদিন আগেই শেষ বাংলাদেশ ম্যাচের টিকিট

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিতে কম্বোডিয়ায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামীকাল (১৫ জুন) স্বাগতিকদের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলবে হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।এরইমধ্যে ম্যাচটির ভেন্যু অলিম্পিক স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। নমপেনের এই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার।

কম্বোডিয়ার বিপক্ষে এই ম্যাচে বাংলাদেশ দল জয় ভিন্ন কিছু ভাবছে না বলে জানিয়েছেন কাবরেরা। আজ ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ বলেন, ‘নিজেদের মাটিতে কম্বোডিয়া খুব ভালো প্রতিপক্ষ। তবে আগামী ম্যাচে আমরা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে চাই। এই ম্যাচটি সাফের আগে আমাদের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ’

‘এ বছর আমাদের বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট রয়েছে। বিশ্বকাপ বাছাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ তবে এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ সাফ টুর্নামেন্টে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট,’ যোগ করেন কাবরেরা।

অবশ্য কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জয় পাওয়া সহজ হবে না বলে জানিয়েছেন দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তিনি বলে, ‘কম্বোডিয়ায় বেশ কয়েকজন ভালো মানের ফুটবলার রয়েছে। আমরা তাদের বিপক্ষে ভালো খেলে জিততে চাই। ’




বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রক্তের অভাবে কেউ মারা যেতে পারে না

১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

আজ একটা ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবো। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকট সাধারণত যারা ভোগেন তারা আমাদেরই স্বজন, ভাই বোন। প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায়না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বোচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো চব্বিশ ঘণ্টায় প্রয়োজন দুইশ ব্যাগের, সরবরাহ আছে একশ পঞ্চাশ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও পঞ্চাশ জন রক্ত পাবেন না।  অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এসময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত।
আগামীকাল ১৪ জুন বিশ্ব স্বেচ্ছা রক্তদাতা দিবস। ২০০৪ সালে দিবসটি প্রথম পালিত হয়েছিল। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা ও স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘গিভ ব্লাড গিভ প্লাজমা শেয়ার লাইফ শেয়ার অফেন’। আন্তর্জাতিকভাবে এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ আলজেরিয়া।আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যু ঝুঁকি। তাই আমি মনে করি ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের দেশে রক্তের অভাবে মানুষ মারা যাওয়া খুবই অন্যায়। তাই আজ আমাদের শ্লোগান হোক বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে রক্তের অভাবে কেউ আর মারা যাবেনা। আমাদের দেশে একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসতো পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তারপর ও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যেই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।

এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কেনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে।আমাদের দেশে বছরে প্রায় ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এ রক্তের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না। কিডনী জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালিসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগেন ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারিরীক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকেন একব্যাগ রক্তের জন্য।

যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে তখন প্রাণ ভরে তার জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত। ভালো কাজে মানুষ সবসময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছে দেখে তার আরো বন্ধুও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হয়।  রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্যে তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন তার সামাজিক অঙ্গীকার।

একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সে মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার ২ সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি ৪ মাস

পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে ৩ বার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।

ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদরোগ ও হার্ট এটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’

ঋগ্‌বেদে বলা হয়েছে ‘নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।

অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চাই না। কারো সুঁইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তাছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয় তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেয়া হয়, বাহিরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন, রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি- অনুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।

রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড পেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।

এছাড়া যারা নিয়মিত রক্তদান করেন তাদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্যে হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পরে। এছাড়া রক্তে মাত্রাতিরিক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্তদান করলে স্ট্রোকের আশংকা ৮৮% কমে যায়। এছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।

এছাড়া দেখা যাচ্ছে রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে সেগুলো লিভারে জমা হয়। যা পরবর্তীতে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। অতএব রক্তদান করলে অনেকের ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন তার শরীরে ৬০- ১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়। তার কোনো ক্ষতি হয় না। রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে তার পুরনো  রক্তগুলো চলে যায়, ফলে শরীরে নতুন রেড সেল তৈরির জন্যে স্টিমুলেশন হয়। নতুন রক্ত তৈরি হবে। আর নতুন রক্ত তৈরির মাধ্যমে তার শরীর সুস্থ থাকে এবং তারুণ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়।

বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের অন্যতম প্রধান উপাদান ছিল সততা, উদরতা, মানবতা। ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবরে পিজি হাসপাতালে তিনি তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘আপনাদের মানবতাবোধ থাকা দরকার, মনুষ্যত্ব থাকা দরকার, সততা থাকা দরকার-না হলে কোনো জাতি কোনও দিন বড় হতে পারে না।’  ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে ছাত্রলীগের সম্মেলনে স্পষ্টভাবে তিনি বলেছিলেন, ‘যতদিন এ দেশের দুঃখী মানুষ পেট ভরে খেতে না পারে, যতদিন অত্যাচার ও অবিচারের হাত থেকে তারা না বাঁচবে, যতদিন না শোষণমুক্ত সমাজ হবে, ততদিন সত্যিকারের স্বাধীনতা আসতে পারে না।’ আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর জীবন দেখি, তাহলে পরিষ্কার হয়ে যাবে সত্যিকারের দেশপ্রেম কাকে বলে। সততা, নৈতিকতা, শুদ্ধাচার, দেশপ্রেম সকল দিক থেকে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিরল দৃষ্টান্ত।

আগেও বলেছি আমাদের ভরসার জায়গাটা তারুণ্য। আমাদের দেশে এখন জনশক্তির বোনাসকাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট) চলছে। অর্থাৎ এসময়ে মোট জনশক্তির মধ্যে তরুণ জনশক্তি বেশি। আমার বিশ্বাস, এই তরুণরাই বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত উত্তরাধিকারী হবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারে। তাই আজ আমাদের নতুন প্রজন্মকে, তারুণ্যকে বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ মানবিক, সৎ স্বপ্নবিলাসী জীবন সম্পর্কে জানতে হবে। কীভাবে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন, দেশ, জাতি নিয়ে তাঁর স্বপ্ন, চিন্তা, কাজ সবকিছু বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে। একসঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, পারিবারিক-সামাজিক বন্ধন সবকিছুই। অর্থাৎ আমরা দাতা ছিলাম, এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সাথে সাথে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করবো। মনে রাখতে হবে, দাতা কখনো গরীব হতে পারেনা।

আমাদের দেশে বুধবার দিবস পালনে সরকারি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি এবারও ব্যতিক্রম উদ্যোগ এগিয়ে আসছে সাড়ে চার লক্ষাধিক সুসংগঠিত ডোনার পুল নিয়ে গঠিত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে দেশে প্রথমবারের মতো দুই শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদাতা ও দুই শতাধিক থ্যালাসেমিক রক্তগ্রহীতার মিলনমেলা এবং বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করছে কোয়ান্টাম। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা নীরবে তাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ রক্ত দান করে যান। রক্তদানের সময় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানেনও না, এ রক্ত কোন মানুষটির শরীরে বইবে। একইভাবে রোগীদের কাছেও অচেনা থেকে যান রক্তদাতারা। দাতা-গ্রহীতার আনন্দ আর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের এমন মেলবন্ধনে উদ্বুদ্ধ হবেন নতুন রক্তদাতা এমনই আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।

প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্ত ও রক্ত উপাদানের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে কোয়ান্টাম বছরে সরবরাহ করে এক লক্ষাধিক ব্যাগ। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়ে তুলেছে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্যে এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্ত উপাদান।

লেখক: অর্থনীতিবিদ, আইটি ও উদ্যোক্তা বিশেষজ্ঞ। সাবেক উপাচার্য, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।




জাপানে সহকর্মীর গুলিতে দুই সৈন্য নিহত

জাপানে সহকর্মীর গুলিতে দুই সৈন্য নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন। বুধবার দেশটির গিফু শহরে অবস্থিত জাপানিজ সেলফ ডিফেন্স ফোর্সেস-এর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গ্রাউন্ড সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (জিএসডিএফ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে সরাসরি গুলিবর্ষণের মহড়ার সময় সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের একজন প্রার্থী তিনজন কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।’

এই ঘটনায় একজন নিহত এবং দু’জন আহত হয়েছেন বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হলেও জিএসডিএফ পরে জানায়, ‘যে তিনজনকে গুলি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্য আরও একজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।’

জাপান সরকারের মুখপাত্র হিরোকাজু মাতসুনো এর আগে বলেন, স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় এই হামলার ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার আরও বিশদ কোনও বিবরণ না দিয়ে কেবল একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সেসময় জানান তিনি।

জাপানের পাবলিক ব্রডকাস্টার এনএইচকে জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি একজন তরুণ সৈনিক এবং ঘটনার সময় তিনি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছিলেন।

পরিচয় প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে স্থানীয় পুলিশের একজন মুখপাত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সন্দেহভাজন ১৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে ঘটনাস্থল থেকে অন্যান্য সৈন্যরা আটক করে। প্রশিক্ষণের ওই অঞ্চলটি ক্যাম্প মোরিয়ামার মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং এটির আয়তন ৬৫ হাজার বর্গ মিটারের বেশি।

জাপানে হিংসাত্মক অপরাধ এবং গুলিবর্ষণ অত্যন্ত বিরল। কারণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে বন্দুকের মালিকানা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। তবে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনা উদ্বেগ বেশ বাড়িয়েছে।

২০২২ সালের জুলাইয়ে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে প্রচারণা চালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে মারা যান। এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার দিকে বিস্ফোরক যন্ত্র নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। যদিও সেসময় তিনি অক্ষত অবস্থায় রক্ষা পান।