Home ক্যাম্পাস খবর অগোচরে একাদশে ভর্তি আবেদন!

অগোচরে একাদশে ভর্তি আবেদন!

32
0
SHARE

করোনা সংকটের মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু হয়েছে অভিনব কারসাজি। শিক্ষার্থীদের অগোচরে একাদশে ভর্তি আবেদন করা হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানে স্কুল এবং কলেজ রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে এমনটা করা হচ্ছে।

এছাড়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল কলেজগুলো শিক্ষার্থী ভর্তির কোটা পূরণ করতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এসব আবেদন করাচ্ছে। সেক্ষেত্রে স্কুল-কোচিংসহ বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ করে আবেদন করা হচ্ছে। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর তৎপর হয়েছে বোর্ডগুলো। গত দুদিনে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে সরেজমিন ও অন্যান্য বোর্ডে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

নরসিংদীর রায়পুরার সিরাজনগর এম এ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখা থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন রাকিব মেহরাব। সদ্য চালু হওয়া কলেজ ভর্তির জন্য আবেদন করতে গিয়ে দেখেন একই এলাকার দুটি বেসরকারি কলেজ পর্যায়ক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দ দিয়ে আবেদন করা হয়ে গেছে। অথচ এসব কলেজে ভর্তি হওয়ার কোনো ইচ্ছে তার নেই।

চিন্তিত পরিবার স্কুলের সহযোগিতায় ঢাকা বোর্ডে এসে তার আবেদন বাতিল করেন এবং নতুন করে আবেদন করেন। শুধু মেহরাব নয়, প্রতিদিন ঢাকাসহ অন্যান্য বোর্ডগুলোতে ভুতুড়ে আবেদন বাতিল করতে ভিড় করছেন অসংখ্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা বোর্ডে আবেদন বাতিলের জন্য আলাদা বুথ খোলা হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে আলাদা কর্মকর্তা সংযুক্ত করা হয়েছে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, সংযুক্ত স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এলাকাভিত্তিক কোচিং সেন্টার, ব্যক্তিগত শিক্ষক, পরীক্ষার কেন্দ্র, ফটোকপি দোকান থেকে শিক্ষার্থীদের রোল, রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে কিছু ভুঁইফোঁড় কলেজ শিক্ষার্থীদের অজান্তে ভর্তির আবেদন করে রেখেছে। মূলত দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান এসব অনৈতিক কাজগুলো করছে।

এর মধ্যে স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংযুক্ত এ রকম প্রতিষ্ঠান এগিয়ে রয়েছে। দেখা যায় স্কুলের মান ভালো কিন্তু কলেজের মান ভালো না। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীর সকল তথ্য প্রতিষ্ঠানে থাকে। শিক্ষকরা সেসব তথ্য নিয়ে কলেজে ভর্তির আবেদন করেন। কিন্তু শিক্ষার্থী সেখানে ভর্তি হতে অনিচ্ছুক।

রাজধানীর উত্তরা, সাভার, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো কিছু কলেজ গড়ে উঠেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে গড়ে উঠা কলেজে শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। এসব অখ্যাত কলেজগুলো স্কুল থেকে শিক্ষার্থীর তথ্য নিয়ে নিজেরা আবেদন করেন। এসব এলাকার কলেজে ‘শিক্ষার্থী ধরা মানে শিয়াল ধরা’র মতো ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা বলছেন, বেশকিছু কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তারাই এসব আবেদন করে শিক্ষার্থী টানার চেষ্টা করছেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড এ ধরনের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে অভিভাবকদের অনুরোধ করেছে। কোনো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হলে বোর্ডের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে সমাধান নিতে পারবেন।

শরীয়তপুরের পঞ্চপল্লী জি.আর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা সুমাইয়া জাহান ও তার অভিভাবকরা এসেছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে। জিপিএ-৫ পাওয়া ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ— পরীক্ষার আগে তিনি যে কোচিং সেন্টারে ক্লাস করতেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি তার রোল, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এমনকি বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর নেন। কোনো কারণ না জেনেই তিনি সব দিয়ে দেন।

তার অভিযোগ, তারাই আমার আবেদন করে দিয়েছে। যেসব কলেজকে পছন্দ দিয়েছে তার কোনোটিতেই তিনি ভর্তি হতে চান না। আবেদন বাতিলের জন্য বোর্ডের কন্ট্রোল রুমে অনেকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ঢাকায় এসেছেন। তার সঙ্গে কলেজ পরিদর্শকের রুমে সামনে অন্তত প্রায় একই ধরনের অভিযোগ নিয়ে আরও শ’খানেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ভিড় করেছেন।

তবে বোর্ডের কলেজ পরিদর্শনের কাছে একটি আবেদন করলেই খুব সহজেই ভর্তি বাতিল করে দিচ্ছে।

কলেজ শাখা সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া আবেদনের একটি তালিকা তারা করছেন। যেসব কলেজের ভুয়া আবেদনের সংখ্যা বেশি হবে সেসব কলেজের আগের বছরে কত শিক্ষার্থী আবেদন করে কতজন ভর্তি হয়েছিল এবার কতজন আবেদন করে কতজন ভর্তি হবে তা যাচাই-বাছাই করা হবে।

কোনো ধরনের অসংলগ্ন তথ্য মিললেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজধানীর কয়েকটি কলেজের বিরুদ্ধে ভুতুড়ে আবেদন করার অভিযোগ পুরনো। বেশ কয়েকটি কলেজকে এজন্য শোকজ করা হয়েছিল। তারা এবারো সক্রিয়।

করোনার সময় শিক্ষার্থী পাবে না এমনটি ধরে নিয়েই তৃতীয় পক্ষ দিয়ে এসব ভুয়া আবেদন করাচ্ছে বলে জানতে পেয়েছে বোর্ড। নাম সর্বস্ব এসব কলেজের বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ চলছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, গত বছর সাড়ে তিন হাজার ভুয়া আবেদনের অভিযোগ পেয়েছিলাম। এ বছর এখন পর্যন্ত ছয় শতাধিক আবেদন পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেলে দ্রুত ভুয়া ভর্তির আবেদন বাতিল করে নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভুয়া আবেদন চিহ্নিত করা হবে। অভিযুক্ত কলেজকে কারণ দর্শানো হবে। প্রয়োজনে পাঠদানের স্বীকৃতি স্থগিত করা হবে।

ঢাকা বোর্ডের সহকারী কলেজ পরিদর্শক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠাগুলোকে আরও সচেতন হওয়া জরুরি। সন্তানের রোল-রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ছবি এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর অন্যকে কেন দেবেন? এসব তথ্য নিয়েই অখ্যাত কলেজগুলো আবেদন করে। নিজে সচেতন না হলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

ঢাকা বোর্ডের বাইরে অন্যান্য বোর্ডেও চলছে শিক্ষার্থীর অজান্তে একাদশে ভর্তির আবেদন। চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে ৪৬টি কলেজের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্ত্তী বলেন, এবার বিজ্ঞান কলেজের বিরুদ্ধে একজন ছাত্রের অভিযোগ পেয়ে খতিয়ে দেখছি। শিক্ষার্থীর অজান্তে অন্য কেউ যদি ভর্তির আবেদন করার অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা। আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নোটিস দিয়েছি।

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরুর প্রথম ধাপে এখন পর্যন্ত সারা দেশের ১২ লাখের বেশি ভর্তিচ্ছু আবেদন করেছে। আর শুধু ঢাকা বোর্ডের কলেজগুলোতেই আবেদন করেছেন তিন লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।

গতকাল মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত এ আবেদন পড়েছে। গত ৯ আগস্ট সকাল ৭টা থেকে চলতি  শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হবে।

image_pdfimage_print