
ফুটবল নিয়ে কথা বলতে গেলে মেসিকে নিয়ে কথা বলা হয়না এমনটা হয়তো এখন দুনিয়ার কোথাও নেই। মুখের উচ্চারণে ফুটবল মানে মস্তিষ্কের ভাবনায় মেসির ছবি। মেসি যেন ফুটবলারদের ভিড়ে একটা নক্ষত্র যাকে আলাদা করা যায় সহজেই।
১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম মাঠে নামা সেই ছোট্ট বালক লিও যেন কিংবদন্তি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে অল্প সময়েই। ১৭ পেরিয়ে ২২ বছর বয়সী ব্যালন ডি অর জয়ী মেসি কিংবা তার পরবর্তী সময়ের মেসিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় লেখনীতে।
সময়ের সঙ্গে ফুটবল জাদুকর হয়ে উঠা মেসি যেন পৃথিবীর সবার রোল মডেল। শুধু কি ফুটবলপ্রেমীদের কাছেই মেসি জাদুকর? না, এই মেসির বাঁ পায়ের জাদুতে অবাক হতে বাধ্য ছিল অনেক ফুটবল কিংবদন্তিও। তাইতো মেসিকে নিয়ে তাদের বিশ্লেষণের কমতি নেই।
বার্সেলোনার কিংবদন্তি কোচ পেপ গার্দিওলার মতে, ‘Don’t write about him, Don’t try to describe him, just watch him.’
মেসির দীর্ঘদিনের সতীর্থ বর্তমান বার্সেলোনা কোচ তো বলেই বসলেন, ‘It is clear that Messi is on a level above all others. Those who do not see that are blind.’
মেসিকে নিয়ে ফুটবল কিংবদন্তিদের এমন মন্তব্য পাওয়া যাবে ভুরি ভুরি। কিন্তু এই লিও মেসির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে অন্ধকারে। বার বার ব্যর্থ হওয়া, ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে অবসরের ঘোষণা যেন হেটার্সদের হাসির খোরাক জোগায়। কিন্তু তারা ভুলে যায় এই মেসি দুঃখকে বরণ করে নিয়ে ফিরে আসতে পারে বীরের মতো। তারা ভুলে যায় মেসি জানে কীভাবে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হয়।
এস্তাদিও দো মারাকানা, রিউ দি জানেইরোতে ২০১৪ ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া মেসি যেন নতুন করে বুকে পাথর বেধে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ নিতে এসেছেন।
সকল বাধা পেরিয়ে, গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়ার পর সমর্থকদের বিশ্বাস রাখতে বলা মেসি তার কথা রেখেছেন। মেসির আর্জেন্টিনা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে এখন। স্বপ্ন পূরণে বাধা আর একটি ম্যাচ। এই মেসি এবং মেসির সতীর্থরা ভয় পান না। মেসির শেষ সুযোগকে কাজে লাগাতে মরিয়া স্কালোনির শিষ্যরা। বিশ্ববাসীর বিশ্বাস স্রষ্টা এবার আর খালি হাতে ফিরিয়ে দিবে না মেসিকে।
কে জানে হয়তো এই একটি বাধা টপকাতে অন্তরে ভয় করছে সমর্থকদের। হয়তো ভয় পাচ্ছেন এই ভেবে যে, কি না কি হয় ফ্রান্সের সঙ্গে। কিন্তু অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে দেখবেন তাদের দলে তো আছে স্বপ্ন পূরণ করতে আসা একটা মেসি। ফ্র্যান্সের অপ্রতিরোধ্য এমবাপ্পেকে নিয়ে ভয় পাওয়ার আগে এটা একটু ভেবে নিবেন আর্জেন্টিনা দলে আছে ম্যাজিকম্যান মেসি।
শুধু কি মেসি! না তাদের দলে আছে এমন কিছু যুবক যাদের শরীরের রক্ত বহমান হয় মেসির বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন নিয়ে।
আপনি জিতবেন, লিও জিতবে, ডি মারিয়া, ডি পল, তরুণ এঞ্জো কিংবা বুড়ো হতে যাওয়া জেনারেল ওতামেন্ডি জিতবে। শুধু কি এরাই জিতবে? না, জিতে যাবে ফুটবল, জিতে যাবে হাজারো তরুণ-তরুণী, জিতে যাবে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপে রূপ নেওয়া ফিলিস্তিনের মেসি ভক্ত সেই ছোট্ট বালক।
এই জয় একটি দলের হবে না, এই জয় হবে পুরো ফুটবল দুনিয়ার। তোমাকে জিততে হবে মেসি। তোমাকে জিততে হবে। স্রষ্টা হয়তো তোমাকে এভাবে সম্মানিত করে জয়ী করবেন বলেই ২০১৪ এর ফাইনালে হারিয়েছে। তবে এবার তোমাকে জিততেই হবে মেসি।
তোমাকে জিততে হবে কারণ তুমি জিতলে ফুটবলের সৌন্দর্য জিতে যাবে। তোমাকে জিততে হবে কারণ তুমি জিতলে ফুটবল পরিপূর্ণ হবে, অন্তত ফুটবলপ্রেমীদের চোখে।
তোমাকে জিততে হবে লাখ লাখ যুবক থেকে শুরু করে বয়স্কের স্বপ্নপূরণ করতে। তোমাকে জিততে হবে গোলপোস্ট পাহারা দেওয়া এমির জন্য, যে তোমার জন্য যুদ্ধে যেতে রাজি। তোমাকে জিতে আসতে হবে তোমার সতীর্থ সকলের জন্য যারা শুধু দেশের জন্য নয়, খেলে তোমার বিশ্ব জয়ের জন্য।
তোমাকে জিততে হবে সকল আর্জেন্টাইনদের জন্য, যারা চায় তোমার হাতে কাপ উঠুক। তোমাকে জিতে আসতে হবে বাংলার মানুষের জন্য, যাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ তোমার আর্জেন্টিনাবাসী।
তবে তুমি না জিতলে তোমার জন্য থাকা ভালোবাসা কিংবা আবেগ একটুও কমে যাবে না। শুধু ফুটবলের জগতে হয়তো একটি পরিপূর্ণতা অর্জন হবে না। তুমি না জিতলে হয়তো জয়ের আনন্দে ভাসবে না দুনিয়া, তবে তুমি ছাড়া ফুটবল অসজ্ঞায়িত এই সত্য কখনো বদলে যাবে না। তুমি না জিতলেও গ্রেটেস্ট অব অল টাইম তোমার নামের সঙ্গে হারিয়ে যাবে না। তবে সবার চাওয়া দীর্ঘদিনের লালন করা তোমার স্বপ্নপূরণ হোক শেষ বেলা।