
স্টাফ রিপোর্টার : পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠিতে গ্রাহকদের প্রায় শতকোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে আস্থা এবং আদমকাঠি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পরিচালকরা। এদের পেনশন ডিপোজিট স্কীম পদ্ধতিতে ৫-৬ বছরে দ্বিগুণ মুনাফার লোভে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েকে হাজার সদস্য। দীর্ঘ দিন ধরে এসব সদস্যদের ডিপিএস মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও টাকা দিতে না পারায় জনরোষে পড়েছিলেন পরিচালকরা। পরে গতকাল থেকে হাজার হাজার সদস্যের জমাকৃত প্রায় শতকোটি টাকা হাতিয়ে গাঁডাকা দিয়েছেন তারা। সুধু পরিচালকরা না, জনরোষে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সমিতি দুটির বেতনভুক্ত সাধারণ কর্মীরাও।
গ্রাহকদের অভিযোগ, উপজেলার গণপতিকাঠি গ্রামের বিশ্বজিৎ হালদার খোকনের পরিচালিত আস্থা সমবায় সমিতি যার রেজিস্ট্রেশন নং (পিডি-৭৭) ১০-১২ শাখা অফিসের মাধ্যমে সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় সংগ্রহ করেন। একইভাবে আদমকাঠি ক্ষুদ্র সমবায় সমিতির রেজিঃ নং (পিডি-১৪) পরিচালক নামধারী মালিক হরন্ময় মন্ডল, সুব্রত মজুমদার, বিপুল কির্তনীয়া গং ২০-২৫ কোটি টাকা সঞ্চয় সংগ্রহ করে আত্মগোপনে রয়েছে। পরিচালকরা পালিয়ে থাকায় সদস্যরা তাদের সঞ্চয়কৃত টাকা উদ্ধার করতে পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন দ্বারে দ্বারে । সমিতির নিবন্ধন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এনজিওর আদলে সুদের কারবার করা সমিতির বিষয়ে বরাবর নীরব ভুমিকায় থেকেছে নিবন্ধন সংস্থা সমবায় দপ্তর। আস্থা সমিতির ২০-৩০ জন মাঠ কর্মীও সদস্যদের ভয়ে পরিবার নিয়ে আত্মগোপন রয়েছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, সমবায় দপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে স্বরূপকাঠিত শতাধিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত এনজিওর স্টাইলে সুদের ব্যবসার পাশাপাশি বেআইনি পেনশন ডিপোজিট স্কীম (ডিপিএস) পদ্ধতিতে হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে কোটি কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। এসব সমিতি ৫-৬ বছরে দ্বিগুন মুনাফার লোভ দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করে। সমিতির পরিচালকদের প্রধান টার্গেট থাকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী সদস্যদের।
পলাতক অবস্থায় থাকা আস্থা সমবায় সমিতির মাঠ কর্মী ভরতকাঠি গ্রামের অঞ্জু রানি মুঠোফোনে জানান, তার মাধ্যমে অনেক মানুষ ওই সমিতিতে টাকা জমা রেখেছেন। যার পরিমাণ কোটি টাকারও বেশি হবে। তিনি শুধু ঋণ বিতরণ ও কিস্তি আদায় করতেন। অফিসে গিয়ে মালিক (পরিচালক) বিশ্বজিৎ এর কাছে বড় অঙ্কের সঞ্চয়ের টাকা জমা দিত অঞ্জু। লোকজনও অঞ্জুকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। হয়রানির ভয়ে তিনি এলাকা থেকে দুরে পালিয়ে রয়েছে। একই কথা বলেন দৈহারী এলাকার মাঠ কর্মী মনি মন্ডল।
একই উপজেলার শশীদ গ্রামের বিনয় ভূষণ নামের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ২০ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। কাটা দৈহারী গ্রামের মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি আদমকাঠি সমিতিতে একলাখ টাকা জমা রেখে ফেরত পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।
এবিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেকগুলো অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমতি চেয়ে জেলায় চিঠি দেয়া হয়েছে। সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে ডিপিএস করা বেআইনি। অডিটের নামে সমিতির আকার ভেদে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা ডিপিএস এর বিষয় গোপন করে। আমরা এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। ত্রিশ হাজার টাকা বৈধ ও অবৈধ ভাবে নিয়ে নিবন্ধন দেয়ার প্রশ্ন না করার অনুরোধ করেন। সমবায় দিবস সমিতির লোকজন টাকা তুলে আয়োজন করেন। এছাড়া প্রতিটি জাতীয় দিবসে সমিতি কর্তৃক টাকা তোলার বিষয় অস্বীকার করেন।
এ বিষয় অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, অনেকে নালিশ নিয়ে আসছে কিন্তু সমিতির পরিচালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সমবায় কর্মকর্তাকে সমিতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে এবং টাকা জমা রাখা মানুষ জনকে মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মোঃ জাকির হোসেন