
মির্জা আব্বাসের জেলে থাকা ৩২ দিন ফেরত চাওয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেছেন, আরে মির্জা সাহেব, খুনি জিয়াউর রহমানের সময় আমি ১ হাজার ৮০ দিন জেলে ছিলাম। মাথা নত করি নাই। কেঁদে বালিস ভিজাই নাই। আর বলি নাই, ১ হাজার ৮০ দিন আমাকে ফেরত দেন।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) ১৪ দল আয়োজিত ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।
যারা রাজনীতি করেন তাদের জেলে যেতে হবে উল্লেখ করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বঙ্গবন্ধু ফাঁসির মঞ্চে গেছেন কারও কাছে মাথা নত করেননি। আমরা সেই নেতার কর্মী। আমরা বালিস ভিজাই না। আমরা শপথ নিই। ইনশাল্লাহ রাজপথেই মোকাবিলা হবে।
এ সময় ‘শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার’সহ বেশকিছু স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা আছে বলেই দেশ ভালো আছে। শেখ হাসিনা আছে বলে আমরা শান্তিতে আছি। এটা যারা কেড়ে নিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। আমরা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিতে পারি না।
তিনি বলেন, আজ আমাদের একদিকে যেমন ধৈর্য ধরতে হবে আরেকদিকে শপথ নিতে হবে আরেকটা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। সেই শকুনেরা আবার হানা দিচ্ছে। জাতিকে আজ মুক্তিযোদ্ধা দ্বারা ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আজকে ইতিহাস নিয়ে বিকৃতি হচ্ছে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান নিয়ে তারা কথা বলে। তাদের ঔদ্ধত্য কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে আমাদের বুঝতে হবে।
ষড়যন্ত্র শুধু দেশে না, আন্তর্জাতিকভাবেও ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের অন্যতম এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, এটা মোকাবিলা করতে গেলে একাত্তরের মতোই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আজ প্রস্তুতি নেয়ার দিন, খেলার দিন, বিজয়ের দিন। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
মায়া চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি একটা দুইটা না, ৫৪টা দল করেছে। আরো ৪৫০ দল করলেও ১৪ দল রাজপথে মোকাবিলা করবে। আপনারা মনে করিয়েন না ১৪ দল চুপ করে ঘরে বসে আছে। মাঠে নামছি, ইনশাল্লাহ বিজয় ছিনিয়েই আমরা ঘরে ফিরব। এই ১৪ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
রাজপথ আমরা কাউকে ইজারা দেই নাই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, এই রাজপথ আওয়ামী লীগের, রাজপথ ১৪ দলের, রাজপথ মুক্তিযোদ্ধার, রাজপথ গণতন্ত্র যারা রক্ষা করে তাদের। এই রাজপথে যদি আর কোনোদিন মানুষ হত্যা করেন, বাসে আগুন দেন, নৈরাজ্য করেন, নির্বাচনে যাবেন না, ভোটে যাবেন না, পেছন দিক দিয়ে ক্ষমতায় যাবেন এটা হতে দেবো না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে তিনি বলেন, সেদিন লাখো মানুষ আমাদের বরণ করেছে বেলা ৪টায়। সবার মুখে বিজয়ের আনন্দ ছিল কিন্তু চোখে ছিল অশ্রু। তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কোথায় আছেন, কখন আসবেন। উনি না আসা পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বাদ আমরা পাব না। আমার মা-বোনেরা বিজয়ের দিন থেকে শুরু করে রোজা রেখেছেন, নামাজ পড়েছেন, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছেন বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। আল্লাহ তাদের ফরিয়াদ রক্ষা করেছেন। ১০ তারিখ বঙ্গবন্ধু আসলেন, আমরা স্বাধীনতার পূর্ণতা পেলাম।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় আমরা জাতির পিতাকে হারালাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় ষড়যন্ত্র ছিল, পচাত্তরের ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে এই বীরবিক্রম বলেন, ৩রা নভেম্বর চার নেতাকে জেলখানায় হত্যাকাণ্ড একই সূত্রে গাঁথা। সেই চার নেতাকেও প্রেতাত্মারা হত্যা করেছে। সেই একই প্রেতাত্মারা, খুনিরা, জিয়াউর রহমানেরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯বার হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আইভি আপাসহ কয়েকজন শহিদ হয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। এই ছিল ইতিহাস।
একটানা চতুর্থবার (২০ বছর) শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসাতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় ১৪ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন মায়া চৌধুরী।