
বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা প্রতিবেদক :একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশজুড়ে ৬৪ ভাগ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব কেন্দ্রে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের সকল ভোটকেন্দ্রগুলোর তালিকা করে পর্যালোচনা সম্পন্ন করেছে পুলিশ। সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থায় বাড়তি অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে পুলিশ। সংস্থাটির তালিকা অনুযায়ী, ভোটকেন্দ্রগুলোকে ‘সমতল এলাকা’ ও ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরপর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দুই এলাকাতেই আলাদাভাবে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ‘সাধারণ’ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের মতে ৩০ ডিসেম্বর ভোটাররা সারা দেশে ৪০ হাজার ২৭৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেবে ভোটাররা।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, এরমধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাকি ১৪ হাজার ৪৪৬টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ হিসেবে মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬৪ ভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাকি প্রায় ৩৬ ভাগ সাধারণ কেন্দ্র।
পুলিশ বলছে, যেসব ভোটকেন্দ্রের কাছাকাছি প্রার্থীর বাড়ি রয়েছে এবং যেসব কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে সেসব কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি বিশেষ এলাকার মধ্যে পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটে এমন কেন্দ্রের তালিকাও করা হয়েছে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২ হাজার ১১২টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৬৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৪৩টি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩০৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২১০টি গুরুত্বপূর্ণ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার ১৯৬টির মধ্যে ১৬৮টি গুরুত্বপূর্ণ, বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার ১৯৭টির মধ্যে ১২৬টি গুরুত্বপূর্ণ, সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার ২৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০২টি, রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকার ১৯৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি গুরুত্বপূর্ণ এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার ৪২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকা রেঞ্জের মধ্যে মোট ৭ হাজার ৩৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪ হাজার ৭৪টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ৫ হাজার ৭৯৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩ হাজার ৮৮১টি গুরুত্বপূর্ণ, রাজশাহী রেঞ্জের ৪ হাজার ৮৯৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ৮০৭টি গুরুত্বপূর্ণ, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ২ হাজার ৭১১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৭৫৩টি গুরুত্বপূর্ণ, রংপুর রেঞ্জের ৪ হাজার ১৪৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ৯০৭টি গুরুত্বপূর্ণ, খুলনা রেঞ্জের ৪ হাজার ৫২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ৮৪৯টি গুরুত্বপূর্ণ, বরিশাল রেঞ্জের ২ হাজার ৩৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৬৯৭টিই গুরুত্বপূর্ণ, সিলেট রেঞ্জের ২ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্রের ১ হাজার ২৯৩টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা গণমাধ্যমকে জানান, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সাধারণ কেন্দ্রের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
সাধারণ এলাকার ভোট কেন্দ্রের পাহারায় একজন পুলিশসহ ১৪ জন, মেট্রোপলিটন এলাকার ভোট কেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ ১৫ জন এবং দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার ভোট কেন্দ্রে দুইজন পুলিশসহ ১৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এবারই প্রথমবার গ্রামপুলিশ সদস্যদের ভোট কেন্দ্রের পাহারায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
ভোট কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন।
তারা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষে ঢুকতে পারবেন না। অবশ্য রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করবেন।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আচরণবিধি প্রতিপালনে দেড় হাজারের বেশি জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয় লাখের বেশি সদস্য মাঠে নামছেন। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩ জন এবং ৩০০ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ৪০ হাজার ১৮৩টি।
ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আদলে এবারের ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে সেনা ও অন্যান্য বাহিনী মোতায়েনে সংখ্যার ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য আনা হচ্ছে। তারা বলেন, এবার ভোট বর্জনে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় সহিংসতা কম হবে ধরে নিয়েই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।