Home অন্যান্য ডেঙ্গু মোকাবেলায় একটি চেকলিস্টের খসড়া

ডেঙ্গু মোকাবেলায় একটি চেকলিস্টের খসড়া

40
0
SHARE

ঢাকাসহ আরও কয়েকটি শহরের বাসিন্দাদের গত বছরের একটি বিরাট সময় ডেঙ্গু উদ্বেগের মধ্যে পার করতে হয়েছিল। মশাবাহিত এ রোগের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া উপায় ছিল না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শুধু জুলাই মাসের প্রথম ২৪ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৬ হাজার ৪২১ জন এবং গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালগুলোয় ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল।
সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় অতিরিক্ত বেড দিয়ে রোগী ম্যানেজ করা হয়েছিল। অনেকে সিটের অভাবে ভর্তিই হতে পারেননি।
আবার বছর ঘুরে ওই সময়গুলো কড়া নাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কি এবারও ঘটবে? আমরা কি গতবার অপেক্ষা স্মার্টলি ডেঙ্গু মোকাবেলা করতে পারব? নগরবাসী কি ডেঙ্গু ঝুঁকিহীন মৌসুম পার করতে পারবে? এ ব্যাপারে যুগান্তরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডেঙ্গু সম্পর্কিত সচেতনতামূলক সম্পাদকীয়টি প্রণিধানযোগ্য।
এতে বলা হয়েছে: চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪১ জন, জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ১৯৯ জন। আর গত বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন যথাক্রমে ৩৮, ১৮ ও ১৭ জন।
বর্তমানে বিগত বছরের এ সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২.৭ গুণ। অর্থাৎ এ বছর ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে।
এ মশা যেখানে গেছে সেখানেই ডিম পেড়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে এসব ডিম দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। যখনই বৃষ্টির পানি জমতে শুরু করবে তখনই এ ডিম থেকে বেরিয়ে আসবে মশা।
২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরে এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেঙ্গু-পরবর্তী জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বলা হয়- ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ১১টি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এতে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এখনই সারা দেশে ডেঙ্গুর সম্ভাব্য প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।
২০১৭-এর ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত রাজধানীর ৮টি এলাকায় এডিস মশা নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরের এডিস মশা ওষুধপ্রতিরোধী। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে গত বছর আদালতের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ক্লাইমেট সেনসেটিভ এ ডিজিজটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
এ বছর দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, সর্বোচ্চ আর্দ্রতা, সর্বোচ্চ উষ্ণতা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় এর ভয়াবহ প্রভাব চলছে। ষাটের দশকে এ জ্বর আমাদের দেশে ‘ঢাকা ফিভার’ নামে পরিচিত ছিল। কারণ, তখনও এ জ্বর সম্পর্কে খুব বেশি জানা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশে ২০০০ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এক জরিপে দেখা গেছে, এতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৫৫৫, আর মৃত্যু হয়েছিল ৯৩ জনের। একটি পত্রিকার মতে, পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫ লাখ রোগীর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মৃত্যুবরণ করে, যার একটি বড় অংশ শিশু।
মৃত্যুহার চিকিৎসা ছাড়া ১-৫ শতাংশ এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসায় ১ শতাংশের কম। বেশিরভাগ লোকই কোনো স্থায়ী সমস্যা ছাড়াই ডেঙ্গু থেকে আরোগ্য লাভ করে।
১৯৬০ সাল থেকে ২০১০-এর মধ্যে ডেঙ্গুর ঘটনা ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, গ্লোবালাইজেশন এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলাফলকে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মনে করা হয়। ডেঙ্গুজ্বরের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় প্রথম সহস্রাব্দের এক চীনা মেডিকেল এনসাইক্লোপেডিয়ায়।
এখানে উড়ন্ত পতঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জলীয় বিষের কথা বলা হয়েছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, ১৮৭১-৭২ সালের দিকে। ১৯৭৫ সালের পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় এটি নির্দিষ্ট সময় পরপর দেখা দিচ্ছে।
ভৌগোলিক বিভাজন অনুযায়ী বিষুবরেখার চারপাশে মোট ২.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মহামারীপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে।
তাই এশিয়ায় ডেঙ্গু মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফিলিপাইনের স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি ছিল। গত বছর থাইল্যান্ডে ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল, মৃত্যুবরণ করে ৬২ জন। মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার, মৃত্যুবরণ করে ১ জন। শ্রীলংকায় ২২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়।
ডেঙ্গু মোকাবেলায় এখন থেকেই কার্যক্রম শুরু করতে হবে। প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে, নতুবা এটি মহামারী আকার ধারণ করবে। এডিস ইজিপ্টি নামের মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস মানব শরীরে প্রবেশ করে।
এটি পরিষ্কার পানিতে জন্মগ্রহণ করে। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি এড়িয়ে চলে বলে অনেকেই একে অভিজাত মশা বলে থাকেন।
তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে অব্যবহৃত পানির বোতল, কৌটা, প্লাস্টিক কনটেইনার, ফুলদানি, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার- এগুলো বাসাবাড়ির আশপাশে ও লোকালয়ে যথেচ্ছাচারভাবে ফেলে না রেখে ব্যবহার শেষে ধ্বংস করে দিতে হবে।
অনেক স্থাপনার বাউন্ডারি ওয়ালের পাশে বাঁধানো জায়গায় দিনের পর দিন পানি জমে থাকে, এতে ডেঙ্গু মশা জন্মানোর আশঙ্কা বাড়ে। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট সর্বোপরি পুরো শহর ও এলাকাকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
গত বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলেছিলেন, নিয়মিত সকাল-বিকাল এলাকায় ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও সপ্তাহে এক বা দু’দিনের বেশি তাদের দেখা মেলেনি। এখনও নিয়মিত মশার ওষুধ দেয়া হয় না।
বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের এলাকায় সর্বশেষ কবে কখন মশার ওষুধ দেয়া হয়েছে, বিষয়টি তারা মনেই করতে পারছেন না।
ইতিমধ্যে মশার উপদ্রব শুরু হয়ে গেছে; সারা দিন, সারাক্ষণ মশার কামড়ে নগরবাসীর জীবন ওষ্ঠাগত, তাই দেরি না করে এখন থেকেই নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো শুরু করতে হবে।
সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে মশা নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, স্থাপনার ভেতর ও চারপাশে মশার ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে আর্থিক লগ্নি থাকলেও অন্তত মশার উপদ্রব থেকে তো রক্ষা পাওয়া যাবে।
আমাদের দরজা-জানালা দিয়ে মশা ঘরে ঢোকে। তাই মৌসুম শুরুর আগেই বাসাবাড়ির প্লাস্টিকের নেট মেরামত করে নেয়া যেতে পারে।
বাসার পর্দা ঢাকা যে জানালাটি একটি দিনের জন্যও খোলা হয়নি, সেটি একবার খুলি না কেন? ময়লা-আবর্জনা, ঝুল নিয়মিত পরিষ্কার করি না কেন? ঘরের মধ্যে ওই জায়গাগুলোতেই তো মশা-মাছি, পোকা-মাকড় লুকিয়ে থাকে। বাসাবাড়ির আসবাবপত্রের ফাঁকে মশা-মাছি তার আস্তানা খুঁজে পায়।
তাই আসবাবপত্র এমনভাবে রাখতে হবে, যেন ময়লা পরিষ্কারের জন্য তার চারপাশে অন্তত ঝাড়ু ঘোরানোর জায়গা থাকে। কিছুদিন পরপর ঘরের ফার্নিচারের পুনর্বিন্যাস করলে ঘরও দেখতে সুন্দর লাগে, একই সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকে।
আমাদের অনেকেই রাতে ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করেন না। ঘরের মধ্যে যদি মশা থাকে, তাহলে অবশ্যই মশারি ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে। আরামপ্রিয় এ জাতি দুপুরে খাওয়ার পর সুযোগ পেলেই একটু ঘুমিয়ে নেয়। মশার প্রকপের এ সময়গুলোয় দিনের বেলা ঘুমালেও মশারি নেয়া দরকার।
বাসার দরজার সামনে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের ৬০ শতাংশ মানুষের মশা দূর করার জন্য অ্যারোসল ও মশার কয়েল কেনার পর্যাপ্ত টাকা নেই। তাই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বস্তিবাসী ও দরিদ্র জনগণের মধ্যে বাড়তি ব্যবস্থা হিসেবে মশার কয়েল, অ্যারোসল, মশারি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
কিছু কিছু লোশন, ক্রিমের নাম শোনা যায় যেগুলো শরীরে মেখে রাখলে নাকি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মশা কামড়ায় না। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বিষয়টি পরীক্ষা করা যেতে পারে। যদি এটি সঠিক হয় এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকে তাহলে এ ব্যাপারে জনগণকে অবহিত ও ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।
গত বছর অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক-হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে মর্মে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শোনা গিয়েছিল। যখন মানুষজন সংকটাপন্ন অবস্থায় দিশেহারা, তখন সব ক্লিনিক-হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রের তরফ থেকে আরও মানবিক আচরণই সবাই প্রত্যাশা করে থাকে।
আমাদের হাসপাতালগুলোর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সত্যিই খুব অবাক করার বিষয়। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ঢুকলেই চারদিকের অপরিচ্ছন্নতা মনকে বড় বেশি ভারাক্রান্ত করে তোলে।
ওইসব প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিন-রান্নাঘরের অবস্থা তো আরও করুণ, তাই তো অনেক ক্ষেত্রে ওইসব রান্নাঘরেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হয়। অনেক প্রাইভেট হাসপাতালে কেবিন-ওয়ার্ডের বেডে তেলাপোকা, মশা, মাছি ও অন্যান্য পোকা-মাকড়ে ভরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগীদের আরও অসুস্থ করে তুলেছিল, অ্যারোসল ব্যবহার করেও কাজ হয়নি। আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। হাসপাতালের পরিবেশ অবশ্যই রুচিকর, আরামদায়ক ও রোগীবান্ধব পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
রোগীর অবস্থা জটিল আকার ধারণ না করলে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সাধারণত বিশ্রাম ও লিকুইডজাতীয় খাবার গ্রহণ। তাই ডেঙ্গুর সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পরিবর্তে স্ব স্ব বাসায় চিকিৎসাসেবা প্রবর্তনের বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে।
শহরের এলাকাগুলোকে ক্লাস্টারে বিভক্ত করে ওই এলাকায় অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি বাসায় বাসায় গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ প্রদান করেন তাহলে হাসপাতালগুলোর ওপরে চাপ কমবে এবং রোগীরাও নিজ নিজ বাসায় স্বস্তির সঙ্গে বিশ্রাম নিয়ে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারবে।
ডেঙ্গু রোগের ধরন ও গতি-প্রকৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, ফলে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধের দিকেই আমাদের নজর দিতে হবে বেশি।
তাই ডেঙ্গু মোকাবেলায় চিকিৎসকের ভূমিকা অপেক্ষা ব্যক্তি সচেতনতা, পরিবার, সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তব্যপরায়ণতা ও কর্মতৎপরতা বেশি থাকা দরকার।

image_pdfimage_print