
বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা প্রতিবেদক : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং দুই সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচরাণা মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারির) রাত পোহালেই কাল ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটির পর দক্ষিণ সিটিতেও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। নির্বাচন উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার শেষদিনের প্রচার চালিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলামসহ অন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ পদে আওয়ামী লীগসহ চারটি রাজনৈতিক দলের চারজন ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।
এ কারণে নির্বাচনী প্রচার ছিল অনেকটাই নিরুত্তাপ। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার ছিল চোখের পড়ার মতো। ঢাকা উত্তর সিটিতে যুক্ত হওয়া ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৬ জন এবং সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে ৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ২১ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে সাতজন প্রার্থী রয়েছেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১২৫ জন ও সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে ২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।
উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা ও ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাসেম জানান, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে প্রচার বন্ধ। বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো ভোট কেন্দ্রে আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড হলেই সে কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।
ইসির যুগ্মসচিব (জনসংযোগ) এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা যন্ত্রচালিত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তবে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মহাসড়ক ছাড়াও আন্তঃজেলা ও মহানগরে প্রবেশ ও বের হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক এবং প্রধান প্রধান সংযোগ সড়কে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।
কর্মকর্তা আরও জানান, ইসির অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক, নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শকের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য যানবাহন চলাচলও এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী : ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শাফিন আহমেদ (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) শাহীন খান (বাঘ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রহিম (টেবিল ঘড়ি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোট কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এ সিটিতে ভোট কেন্দ্র এক হাজার ২৯৫টি ও ভোটকক্ষ ছয় হাজার ৪৮২টি। ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন।
এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন ও নারী ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। উত্তরে নতুন করে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডে ভোটার ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ছয়টি। এসব ওয়ার্ডে ভোটার চার লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন; পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ জন ও নারী দুই লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন। ভোট কেন্দ্র ২৩৫টি ও ভোটকক্ষ এক হাজার ২৫২।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৯ জন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন করে ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে মোট ২৭টি মোবাইল টিম ও ১৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে রয়েছে র্যাবের ২৭টিম ও বিজিবির ২৫টি প্লাটুন সদস্য। নির্বাচনের আচরণবিধি প্রতিপালন ও অনিয়মের শাস্তি প্রদানে ৫৪ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন।
শেষদিনের প্রচারণা : আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শেষদিনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশেনের মেয়র ও উত্তর-দক্ষিণের ৩৬ নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভোটার ও সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন তারা।
প্রচারের শেষদিনে উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন নির্বাচনী মাঠ। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শাফিন আহমেদও প্রচারে কাটিয়েছেন ব্যস্ত সময়। অন্যদিকে শেষদিনে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভোটার ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি ও নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন আতিকুল ইসলাম। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে সবাইকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে আমি সবাইকে নিয়ে সুস্থ, সুন্দর ও আধুনিক ঢাকা গড়তে চাই। কারণ আমি বিশ্বাস করি- আমি বলে কিছু নেই।
আমরা সবাই মিলেই গড়ব আমাদের স্বপ্নের ঢাকা। শেষদিনে নির্দিষ্ট কোনো কর্মসূচি ছিল না তার। আবদুল্লাহপুরের তুরাগ এলাকা থেকে বেলা ১১টার দিকে দিনের প্রচারণা শুরু করেন তিনি। পরে হরিরামপুর, দিয়াবাড়ী, রানাভোলা, কামারপাড়া, উত্তরা এলাকায় শেষদিনের নির্বাচনী প্রচারণা চালান আতিকুল। এ সময় নির্বাচনী লিফলেট ও প্রচারপত্র বিতরণ করে তিনি সবার কাছে দোয়া ও নৌকায় ভোট চান।
আতিকুল ইসলাম বলেন, নৌকা উন্নয়নের মার্কা। নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নেই। নৌকার সবগুলো শুধু ফ্রন্ট গিয়ার ফ্রন্ট্র গিয়ার ফ্রন্ট্র গিয়ার। দিনের মধ্যভাগে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা এলাকায় তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালান। নির্বাচিত হলে জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ সিটি কর্পোরেশন থেকে বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে দেয়ার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাফিন আহমেদ নির্বাচনী প্রচারের শেষদিনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কাছে গিয়ে তিনি ভোট চেয়েছেন। এদিন দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন শাফিন আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের সেবা দেয়ার জন্য। আমি সাধারণ মানুষ, সাধারণ মানুষের হয়েই থাকতে চাই। আমি কখনও ভিআইপি হতে চাই না।
শাফিন বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের ঢাকার পথিকৃৎ হচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিলোত্তমা ঢাকার শুরু এরশাদের হাত দিয়েই। আমরা এরশাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিতে চাই। পান্থপথ, বেড়িবাঁধ, রোকেয়া সরণি, আর্মি স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে সব উন্নয়নের সঙ্গেই এরশাদের ছোঁয়া লেগে আছে। ঢাকাবাসী এখনও মনে রেখেছে এরশাদ এবং লাঙ্গলের অবদান। তাই রাজধানীর উন্নয়ন ভাবতে গেলেই এরশাদের অবদান স্মরণ করতে হবে।
শেষদিনের প্রচারণায় উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরাও দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেছেন। ভোটাদের কাছে গিয়ে তারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। মাদকের বিস্তার রোধ ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট চেয়েছেন প্রার্থীরা।
শেষদিনের প্রচারণায় পিছিয়ে ছিলেন না সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। এদিন পাড়া-মহল্লা-বাজারের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতে গিয়ে নারী ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন তারা।