Home জাতীয় পুলিশে আসছে বড় ধরনের রদবদল ও পদোন্নতি

পুলিশে আসছে বড় ধরনের রদবদল ও পদোন্নতি

56
0
SHARE

পরিক্রমা ডেস্ক : শিগগির পুলিশে আসছে বড় ধরনের রদবদল ও পদোন্নতি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মূলত এ পদোন্নতি ও বদলির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। ওই সূত্রটি বলছে, এরই মধ্যে একটি তালিকা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি ঘষামাজা চলছে। ঈদের পরপরই পুলিশের উচ্চপর্যায়ে রদবদল ও পদোন্নতির ঘোষণা আসছে।

পদোন্নতির তালিকায় অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি), উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। আর বদলির তালিকায় আছেন তিন রেঞ্জ ডিআইজি, দুই মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন পুলিশ সুপার। যাদের বদলি করা হবে ওই কর্মকর্তাদের পুরো আমলনামা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে সরকারের হাইকমান্ড। পদোন্নতি পেতে ও পছন্দের জায়গায় বদলি হতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে তদবিরের হিড়িক পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশের উচ্চপর্যায়ের বদলির তালিকায় আছেন অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার। বদলির পাশাপাশি পুলিশে পদোন্নতিও দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। পদোন্নতির তালিকায় আছেন অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত আইজিপি হওয়ার তালিকায় আছে ১৫ ও ১৭ ব্যাচের তিন কর্মকর্তার নাম। অতিরিক্ত ডিআইজি থেকে ডিআইজি হচ্ছেন ১৮, ২০, ২১ ও ২২ ব্যাচের ৯-১০ জন। পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি হচ্ছেন ২২ ও ২৪ ব্যাচের ১৮-২০ জন। আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপার হচ্ছেন ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ ব্যাচের ৪৫-৫০ জন। তালিকাভুক্ত বাকিদের পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে সূত্র জানায়।

মূলত দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পাওয়ার হতাশা দূর করতে পুলিশে এ ধরনের কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এসব পদোন্নতিকে ‘নির্বাচনী’ পদোন্নতি আখ্যা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা যোগ্য তারাই ভালো জায়গায় পদোন্নতি পাবেন। তদবির করে কেউ পছন্দের পদ পাবেন না। পুলিশ থেকে যে তালিকা আসে তা পর্যালোচনা করে পোস্টিং দেওয়া হয়। তাছাড়া বদলি ও পদোন্নতি একটা চলমান প্রক্রিয়া। সেই আলোকে পুলিশ এগিয়ে চলছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সামনে সংসদ নির্বাচন। সবকিছু ‘হিসাব-নিকাশ’ করেই পদোন্নতি ও বদলির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যাদের পদোন্নতি ও বদলি করা হবে তাদের একটি তালিকা এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। তালিকাটি যাচাই-বাছাই করছেন আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা। ঈদের পরই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

তারা বলেন, ‘পছন্দের জায়গা পেতে অনেকেই তদবির করছেন। তদবিরের কারণে আমরা খুবই বিরক্ত। বিশেষ করে রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপি পদে বেশি তদবির করা হচ্ছে।’

পুলিশ সূত্র জানায়, বদলির তালিকায় যারা আছেন তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি রয়েছেন। তারা ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তা। তাদের স্থানে যেতে ২০ ব্যাচের কর্মকর্তারা তদবির করছেন। রংপুর ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারও বদলি হওয়ার কথা রয়েছে। তারপরই আছেন জেলার পুলিশ সুপার। এ সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। বেশ কটি জেলায় ২৪ ব্যাচের পুলিশ সুপার দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বদলি করার কথা ভাবছে পুলিশ সদর দপ্তর। আবার এই ব্যাচের কয়েকজন পুলিশ সুপার সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা নিজেদের এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো রেখেছেন। তাদের জেলায় উপপরিদর্শক (এসআই) ও কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। ১০১ টাকা ফি দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যরা চাকরি পেয়েছেন। এসব কারণে তাদের আপাতত বদলি করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কয়েকজন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আছেন তারা ভালো না করার পাশাপাশি রাজনৈতিক দিক থেকেও পিছিয়ে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আছেন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শী। অভিযোগ আছে, তারা ‘তদবির ও অর্থের’ জোরে জেলার এসপি হয়েছেন। তাদের বদলি করার সম্ভাবনাই বেশি।

সংসদ নির্বাচনের সময় ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের এসপিরা জেলার দায়িত্ব পালন করবেন বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, পদ না থাকায় পদোন্নতি পাচ্ছেন না অনেকে। এতে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাডার কর্মকর্তাদের হতাশা দূর করার জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ক্যাডারে চাকরি শুরু হয় সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদ দিয়ে। ১০ বছর চাকরির পর এসপি পদে পদোন্নতি হওয়ার কথা। এ কর্মকর্তারা ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১তম বিসিএস ব্যাচের। ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১০ সালে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পান এবং পরবর্তী তিন ব্যাচের কর্মকর্তারা পরবর্তী বছরগুলোতে চাকরিতে যোগ দেন। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের (বিসিএস) শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে এসপি পদটি পঞ্চম। অবিলম্বে পদ সৃষ্টির উদ্যোগ না নিলে ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত এসপি পদে থেকেই অবসরে চলে যেতে হতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের (পিএইচকিউ) ডেটাবেজ অনুযায়ী, পুলিশে বর্তমানে ৩ হাজার ১২৪ জন প্রথম শ্রেণির বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২২২ এএসপি, ১০০১ অতিরিক্ত এসপি, ৫৯৩ এসপি, ২০০ অতিরিক্ত ডিআইজি, ৮৫ ডিআইজি, ২০ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, ৪ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-১) এবং একজন মহাপরিদর্শক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ৬৪ জেলার এসপি, ৮টি বিভাগের ডিআইজি ও সব মেট্রোপলিটন এলাকায় কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি রেঞ্জ ডিআইজি বদলি হতে পারেন। তার মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেনকে জায়গায় ২০ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা আসার জন্য জোর তদবির করছেন। একজন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা হিসেবে আনোয়ার হোসেনের সুনাম রয়েছে পুলিশে। গত সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। রাজশাহী ও বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বদলি হওয়ার কথা রয়েছে। জেলায় পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কর্মকর্তাদের এসপি হিসেবে পদায়ন করা হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বছরখানেক আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের কাঠামো থেকে বিভিন্ন পদবির ক্যাডার পদ বিলুপ্ত করে ঊর্ধ্বতন ধাপে সমসংখ্যক ক্যাডার পদ সৃষ্টি করার জন্য চিঠিতে বলা হয়। ইতিমধ্যে পুলিশের অধিকাংশ দাবি পুরন করা হয়েছে। এখনো ডিআইজি, এডিশনাল ডিআইজি ও এসপির পদ খালি আছে। এরইমধ্যে সুপারনিউমারারি এর মাধ্যমে ২৪ ব্যাচের সবাই অতিরিক্ত ডিআইজি ও ২৮,২৯,৩০,৩১ ব্যাচের সবাই পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি চাচ্ছেন। আশাকরি বিষয়টি সমাধান করা হবে শীঘ্রই।

image_pdfimage_print