Home ব্রেকিং প্রশস্ত রাস্তা ও নাগরিক সুবিধা থাকলেই উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে নতুন...

প্রশস্ত রাস্তা ও নাগরিক সুবিধা থাকলেই উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে নতুন ড্যাপের লক্ষ্য পরিকল্পিত শহর

37
0
SHARE

ঢাকার সমস্যা কমিয়ে পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। রাজউক বলছে, শহরের বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সুবিধাদি ও পরিষেবার বিপরীতে জনসংখ্যা নির্ধারণ করে শহরের সার্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন এলাকার উন্নয়নে কতটুকু অনুমোদন দেওয়া হবে, তা নির্ভর করবে ওই এলাকার সুবিধা প্রাপ্তির ওপর।

নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, ঢাকায় ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক সুবিধা ও সড়কের প্রশস্ততা অনুযায়ী। যেসব এলাকায় প্রশস্ত রাস্তা ও নাগরিক সুবিধা যেমন- পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ অন্য সুবিধা বেশি থাকবে সেসব এলাকায় বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা নিয়ে বাধা থাকবে না। অন্যদিকে, যেসব এলাকায় বা প্লটের সামনে প্রশস্ত রাস্তা নেই সেসব এলাকার ভবন নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে নতুন ড্যাপে। প্লটের সামনে প্রশস্ত রাস্তা কম হলে সেসব ভবন নির্মাণে মানতে হবে ড্যাপের নতুন নিয়ম। এর মানে পাঁচ কাঠার একটি জমির সামনে যদি প্রশস্ত রাস্তা না থাকে তাহলে সেখানে চারতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। আগে একই পরিমাণ জমিতে আটতলা ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যেত।

সার্বিক বিষয় নিয়ে ডিটেল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শহরে নাগরিক সুবিধাগুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে ড্যাপকে সাজানো হয়েছে। কোন এলাকায় কতটুকু সুবিধা আছে, সেসব বিবেচনা করে সেই এলাকায় উন্নয়নের অনুমোদন দেওয়া হবে। এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব নির্ধারণ করে জনঘনত্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যদিও জনঘনত্বের পরিকল্পনা তিন বছর পরপর হালনাগাদের সুযোগ রাখা হয়েছে। আগে পাঁচ কাঠার একটি জমিতে আগে ৮ ও ১০ তলার নকশা পাওয়া যেত এখন পাওয়া যাবে পাঁচতলার। প্লট বা জমির সামনের রাস্তা যত প্রশস্ত হবে সেখানে ফ্লোর স্পেস বেশি হলে ভবনের উচ্চতাও বাড়ানো যাবে। রাস্তার প্রশস্ততা কম হলে ভবনের ফ্লোর কমিয়ে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে ড্যাপে।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, সামনে যতটুকু প্রশস্ত রাস্তা আছে তার ওপর নির্ভর করে প্ল্যান পাওয়া যাবে। আগে যদি একটি প্ল্যানে আটতলা পেতেন তাহলে নতুন ড্যাপের বিধি অনুযায়ী পাবেন তিন থেকে চারতলা। ফলে ফ্ল্যাটের কোয়ান্টিটি কমে যাচ্ছে। এ কারণে দাম বাড়বে এবং তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবে। যারা স্বল্প বেতনে বেসরকারি চাকরি করেন তাদের বেতনের ৬০ শতাংশ টাকা বাড়িভাড়া পরিশোধে চলে যায়। এমন সব মানুষের স্বপ্ন থাকে একটা ফ্ল্যাট কিনবেন সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে। নতুন ড্যাপের কারণে দাম বেড়ে গেলে সাধারণ এসব মানুষের পক্ষে আর ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে না।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, ভবনের উচ্চতা নির্ধারণের কারণে একটি ছোট জায়গায় চারতলার প্ল্যান অনুমোদন পেলে সেই জমির মালিক কিন্তু ডেভেলপার কোম্পানিকে ফিফটি ফিফটি রেশিওতে আর দেবেন না। নিজে যখন পারবেন তখন চেষ্টা করবেন। ফলে ফ্ল্যাট নির্মাণের সংখ্যাও কমে আসবে। এখনো ঢাকায় সিংহভাগ জায়গায় দুই থেকে তিনতলা করে বাড়ি আছে। সেসব জায়গায় আর ফ্লোর বাড়বে না। ফলে আবাসনের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি থেকে যাবে। এ কারণে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে। এছাড়া ভবন নির্মাণের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা শ্রম দেন তাদের কাজের পরিধিও কমে যাবে।

এ বিষয়ে ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপে এফএআর বা ভূমির সাপেক্ষে ভবনের মোট মেঝের ক্ষেত্রফলের অনুপাত বৈশ্বিক শহরগুলোর তুলনায় বেশি দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য শহরে প্লটকেন্দ্রিক উন্নয়ন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সার্বিক বিষয় নিয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাস্তবিক অর্থে ড্যাপে প্রস্তাবিত সব পরিকল্পনা কৌশলের সফলতা নির্ভর করবে তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ওপর। এবারের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় আধুনিক নগর পরিকল্পনার বেশকিছু কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। এজন্য ঢাকা মহানগর এলাকায় স্থানীয় সরকারগুলো যেমনÑ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতি সংস্থাগুলোকে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

image_pdfimage_print