Home ব্রেকিং বিদ্যুৎ খাতে এখন ১০ ভাগ দুর্নীতিও নেই সাক্ষাৎকারে পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ...

বিদ্যুৎ খাতে এখন ১০ ভাগ দুর্নীতিও নেই সাক্ষাৎকারে পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন

53
0
SHARE

আশিক সরকার :

অন্য যেকোনো সেক্টরের চেয়ে বিদ্যুৎ খাত অনেক বেশি দুর্নীতিমুক্ত। বর্তমানে এ খাতে দুর্নীতি ১০ ভাগও নেই। এমনটিই দাবি করেছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন। নিজ দফতরে সময়ের আলোর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিদ্যুতের সিস্টেম লস, প্রিপেইড মিটার, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, লোডশেডিং, উৎপাদন, সঞ্চালন লাইন, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল, বিশেষ আইন, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ার বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি রোধে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সেক্টর তো অন্য সেক্টর থেকে একেবারে আলাদা নয়। যারা কাজ করে তারা এই দেশেরই মানুষ। একসময় দেখা গেছে, বিদ্যুতের মিটার রিডারদের ৫-৬ তলা ২ থেকে ৩টা বাড়ি। প্রকৌশলীরা সিস্টেম লসের নামে নানাভাবে অর্থ উপার্জন করত। এই সেক্টর শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে সেটা বলব না। এখন তার ১০ ভাগও নেই। এখানে বড় চুরির কোনো সুযোগ নেই। প্রিপেইড মিটারে বেশি খরচ হচ্ছে, গ্রাহকদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত বিল আসার কোনো কারণ নেই। এনালগ মিটারে ম্যানিপুলেট করার সুযোগ থাকে, সেটা গ্রাহক, বিদ্যুতের লোক বা তৃতীয় কোনো লোকও করতে পারে। অনেকে বেশি ব্যবহার করেও মিটার ডাইভার্ট করে অন্যের ওপর চাপিয়ে নিজের বিল কমাত। এখন সেই সুযোগ নেই। অভিযোগ তারাই করত যারা ম্যানিপুলেশন করে বিল কম দিত। যারা ম্যানিপুলেটের সঙ্গে জড়িত তারা এগুলো বাজারে ছড়াচ্ছে। যাতে কর্মসূচি বানচাল হয়ে যায়, তারা আবার ধান্দা করতে পারে।

সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত ৯৯.৫০ পারসেন্ট হয়ে গেছে। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই শতভাগ করে ফেলব।

চাহিদা না থাকায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে অর্থ দিতে হচ্ছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, চাহিদা অনুযায়ী আমরা পরিকল্পনা করেছি। স্থাপিত ক্ষমতা ২১ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমান চাহিদা ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। এখন এই ৭ হাজার মেগাওয়াট নিয়ে কথা হচ্ছে। এভাবে পরিকল্পনা না করলে লোড শেড করা লাগত। গ্যাস এবং কয়লার অভাবে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারিনি। যেকোনো দেশে রিজার্ভ মার্জিন রাখতে হয়, আমাদের ১৪৮টি কেন্দ্র এর মধ্যে ২০-২৫টি রুটিন মেইনটেন্যান্সে থাকে। কারণ অনবরত ২৪ ঘণ্টা তো চালানো যায় না। মেইনটেন্যান্স করতে হয়। বন্ধ রাখতে হয়।

চাহিদার চেয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বেশি, তারপরও লোডশেডিং আছে, এ বিষয়ে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, লোডশেডিংয়ের সংজ্ঞা হচ্ছে উৎপাদন স্বল্পতার জন্য গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে না পারা। এই লোডশেডিং উৎপাদন স্বল্পতা নয়, মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য বন্ধ রাখতে হয়। তখন গ্রাহক মনে করে লোডশেডিং।

রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল আর কতদিন চলবেÑ এ বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, রেন্টাল কিছু আছে, কুইক রেন্টাল এখন নেই। ২০০৯ থেকে ১২ সালে কুইক রেন্টালের ৩ বছরের চুক্তির জন্য ভাড়া চুক্তি করেছিলাম। তখন ভাড়া বাবদ ও বিদ্যুতের জন্য টাকা দেওয়া হতো। কিন্তু মেয়াদ শেষের পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কোনো ভাড়া দেওয়া হবে না, রক্ষণাবেক্ষণ ও তেলের জন্য টাকা দেওয়া হবে এই শর্তে মালিকরা রাজি হয়। ফলে আগে যেখানে ১০ টাকা লাগত এখন ৫ টাকায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আমরা নতুন করে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করিনি। পুরনোগুলো উইনউই সিচুয়েশনে আমরা চালাচ্ছি।

সিস্টেম লস কমানোর বিষয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, সিস্টেম লস এখন ৮ পারসেন্ট বা তার কম। ইন্ডিয়ার কোনো কোনো রাজ্যে ৩০ পারসেন্টও সিস্টেম লস আছে। এক্ষেত্রে আমরা মিরাকল সাকসেস অর্জন করেছি। প্রিপেইড মিটার করার ফলে এখন চুরি করতে পারে না।

পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় যে মানুষটা চেয়ারে থাকে সেটাও মেটার করে। এটা জাতির জন্য ক্ষতির। এটা দাম নির্ধারণে প্রভাব পড়ে।

বিদ্যুতের বিশেষ আইন আবারও নবায়নের বিষয়ে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, এই আইনের মাধ্যমেই কিন্তু আমরা ৩-৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। এই আইনটা নবায়ন করা হচ্ছে, যাতে যখন প্রয়োজন হবে তখন যেন ব্যবহার করা যায়। এখন প্রয়োজন নেই, কালকে যে প্রয়োজন হবে না তা কে বলতে পারে।

কবে জনগণ সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ পাবে, এ বিষয়ে মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সাশ্রয়ী শব্দটা আপেক্ষিক, ২০০৯ সালে আমাদের আয় ছিল জনপ্রতি ৫৫০ ডলার, এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। তার মানে যে ৫ টাকা দিয়ে কিনতে পারত সে এখন সেটা ২০ টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য অর্জন করেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। আমরা সব গ্রাহকের কাছ থেকে একই দাম রাখি না। লাইফ লাইন গ্রাহকের কাছ থেকে ৩ টাকা ২০ পয়সা রাখি আর গুলশান-বনানীর গ্রাহক যারা এসি ইউজ করে তাদের কাছ থেকে ৯ টাকা নিই। আরও সাশ্রয়ী করার জন্য চেষ্টা করছি। সাশ্রয়ী মূল্যে দেওয়ার জন্য সরকার প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা সাবসিডি দেয়।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে পিছিয়ে থাকার বিষয়ে এই মহাপরিচালক বলেন, বিল্ডিংয়ের ছাদে, ইরিগেশনে চলে গেছি, যেখানে নৌ পরিবহন নেই সেখানে ভাসমান সোলার সিস্টেম করব।

image_pdfimage_print