
আগামী ২ বছরের মধ্যে দেশের বিচারিক ব্যবস্থা পুরোপুরি পেপারলেস করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেছেন, সারা বাংলাদেশের জুডিশিয়াল সিস্টেমকে কীভাবে সম্পুর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর, আরো স্বল্প সময় ও খরচে মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিতে পারি, বিচারক ও আইনজীবিদের কাজ করতে পারি সে জন্য আমার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এর অধীনে ২ হাজার ২শ’ ২৪ কোটি টাকার প্রকল্প চূড়ান্ত করেছি। খুব অল্প দিনে মধ্যে এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কোর্টরুম আমরা ডিজিটাইজ করবো। অডিও রেকর্ডিং পুল সিস্টেম থাকবে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল টার্মিনাল হবে। ১৪টি সেন্ট্রাল জেল ডিজিটাল করা হবে। আসামিরা যেন জেল থেকে শুনানীতে অংশ নিতে পারে এজন্য ৯টি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৬৪টি জেলা কারাগারে ক্যামেরা ট্রায়াল রুম করা হবে। নিরাপ্তার খাতিরে বৈঠক ব্যবহার করা হবে। বিচারিক তথ্যের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে জেআরপি’র অধীনে সুপ্রিম কোর্টে একটি ফোর টায়ার ডেটাসেন্টার স্থাপন করা হবে।
শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতসমূহের বিচারিক সেবা ও তথ্য প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করণে অনলাইন কজলিস্ট, জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং মাইকোর্ট অ্যাপ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।
এটুআই-এর কারিগরি সহযোগিতায় আইন ও বিচার বিভাগ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর আয়োজনে অনুষ্ঠানে আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের পক্ষে অনলাইন সিস্টেম তিনটির উদ্বোধন করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
এর আগে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ডিজিটাল বিচারিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা বিচারকদের ২ হাজার ল্যাপটপ, অফিস স্ট্যাফদের জন্য ডেস্কটপ এবং আইনজীবী ও বিচারকদের ৭৫ হাজার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমসহ প্রত্যেকটি বার অ্যাসেোসিয়েশনে একটি করে সইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ডিজিটাল ইকো সিস্টেম গড়তে ৩টি বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে পলক বলেন, গত ১৩ বছর ধরে আইসিটি উপদেষ্টা আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ভেরিফায়েবল আইডি, ট্রাঞ্জেকশন প্লাটফর্ম ও ইন্টার অপারেবল প্লাটফর্ম তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে করোনা কালে এগুলোকে জোড়া লাগিয়েই আমরা অনলাইনে অফলনাইনের সব কাজ সচল রাখতে পেরেছি। মাত্র দুই মাসের মধ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট ইন্ট্রুডিউস করতে পেরেছি।
বক্তব্যে এটুআই, ইউএনডিপি ও আইসিটি বিভাগ মিলে এই অবকাঠামোগুলো তৈরির পর এই অর্থবছরে বিচার ও স্বাস্থ্য বিভাগে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ঘোষণা দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনো দেশকে অনুকরণ করে নয়; আমাদের এটুআই, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট, ল’লেজিলেস্টিভ মিনিস্ট্রি আমরা সবাই মিলে নিজস্ব একটি মডেল উদ্ভাবন করছি। আশা করছি স্বল্প খরচে নতুন একটি মডেল আমরা সারা বিশ্বে উপহার দিতে পারবো।
অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী জানান, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে মূলত আমার আদালত মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহক তার মামলার সর্বশেষ তথ্যাদি, সর্বশেষ আদেশ, পরবর্তী তারিখ এবং মামলার অবস্থা ইত্যাদি জানতে পারবেন। পাশাপাশি কজলিস্ট ও ড্যাশ বোর্ডের মাধ্যমে আদালত কতৃপক্ষও বিচারাধীন এবং নিষ্পত্তি হওয়া মামলা সম্পর্কিত সকল ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা ,মনিটরিং ও ট্র্যাকিং সিস্টেম হিসেবে এর মাধ্যমে আদালতসমূহের প্রকৃত অবস্থা, বিচারকর্মের গতি-প্রকৃতি এবং বিচারিক নানান পরিসংখ্যান জানতে পারবেন। ইতিমধ্যেই ৮টি জেলায় এই প্রকল্পের অধীনে ৩৬ জন বিচারককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সকল নাগরিক যেন এর আওতায় আসেন এ জন্য ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার ছাড়াও ৩৩৩ সে ফোন করে বিচারিক তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মোঃ গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি জনাব সুদীপ্ত মুখার্জি। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের সুফল তুলে ধরেন প্রশিক্ষণ নেয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ বেগম শারমিন নিগার।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে অনলাইন কজলিস্ট (মামলার কার্যতালিকা), জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। কোন নির্দিষ্ট কার্যদিবসে আদালতে বিচারাধীন মামলার তালিকা জনগণ কিংবা বিচার সংশ্লিষ্ট যেকেউ causelist.judiciary.org.bd ওয়েবসাইট ও আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপ ভিজিট করে তাঁর মামলার সর্বশেষ তথ্যাদি পাবেন। ওয়েবসাইটে প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পরে জেলা এবং সর্বশেষ সংশ্লিষ্ট আদালতের নাম সিলেক্ট করে বিচারপ্রার্থীগণ তাঁদের মামলার সর্বশেষ আদেশ, পরবর্তী তারিখ এবং মামলার অবস্থা জানতে পারবেন।
জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড বা বিচার বিভাগীয় ড্যাশবোর্ড-এর মাধ্যমে অধস্তন আদালতসমূহে বিচারাধীন এবং নিষ্পত্তি হওয়া মামলা সম্পর্কিত সকল ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা হবে। এতে অধস্তন আদালতের মনিটরিং ও ট্র্যাকিং সিস্টেম হিসেবে এর মাধ্যমে আদালতসমূহের প্রকৃত অবস্থা, বিচারকর্মের গতি-প্রকৃতি এবং বিচারিক নানান পরিসংখ্যান জানা যাবে।
বিচারপ্রার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ, বিচারকগণ এবং আইনজীবীবৃন্দ স্ব-স্ব প্রয়োজনে আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীগণ অধস্তন আদালতের জন্য প্রস্তুতকৃত সকল ডিজিটাল সেবাসমূহ গ্রহণ করতে পারবেন। বিচারক, আইনজীবী এবং জনসাধারণ পৃথকভাবে এই অ্যাপের বিভিন্ন ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। গুগল-প্লে-স্টোর থেকে আমার আদালত (মাইকোর্ট) সার্চ করে যেকেউ এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউএনডিপি বাংলাদেশ, এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিচারকগণ এবং গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।