Home জাতীয় বড় হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা

বড় হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা

34
0
SHARE

দেশে দিন দিন ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রমের বিকাশ ঘটছে। ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২৭.৫৪ শতাংশই রয়েছে ইসলামি ব্যাংকগুলোর কাছে। এ ছাড়া মোট বিতরণ করা ঋণের ২৫.৩৩ শতাংশ দিয়েছে তারা। প্রবাসী আয়েরও ৩৩ শতাংশ আসে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে।

বিশ্বে ব্যাংক ব্যবস্থা ৬০০ বছর আগে যাত্রা শুরু করলেও ইসলামি ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয় ১৯৬৩ সালে। আর বাংলাদেশে তা শুরু হয় ১৯৮৩ সালে দেশি-বিদেশি উদ্যোগ ও সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বর্তমানে দেশে ইসলামি ধারার ব্যাংকের সংখ্যা ১০। এর মধ্যে সাতটি ব্যাংকই অবশ্য একটি পরিবারের।

আরও অনেক ব্যাংক বিশেষায়িত শাখা ও উইন্ডো খোলার মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এ ছাড়া অন্য অনেক প্রচলিত ব্যাংকও এখন ইসলামি ধারার সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানত ও ঋণের ২৭ শতাংশ হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকগুলোর। তবে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো কতটা শরিয়াহ মেনে ব্যবসা করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশে ইসলামি ধারার ব্যাংকিং শিক্ষার কোনো কাঠামোও গড়ে ওঠেনি। ফলে প্রচলিত ধারার ব্যাংকাররাই পরিচালনা করছেন ইসলামি ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রম।

দেশে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবসা ক্রমেই বড় হচ্ছে। তবে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর ব্যবসাই শুধু বাড়ছে না, বরং দেশের ব্যাংক খাতের অনেক কিছুর শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে এই ব্যাংক। বিদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয়ও আসে ব্যাংকটির মাধ্যমে।

ইসলামি ব্যাংকগুলোর ব্যবসা সম্পর্কে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। তাই এখানে ইসলামি ব্যাংকের চাহিদা এমনিতেই তুঙ্গে। এ জন্য অনেকেই এই ধারায় যুক্ত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের নামে যে ব্যবসা হচ্ছে, তার পুরোটাই একটা কৌশলমাত্র। তাদের কাছে প্রচলিত ব্যাংক থেকে ভিন্ন কিছু নেই। আবার ইসলামি ব্যাংক হলে সিআরআর ও এসএলআরে সাড়ে ৭ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। ইসলামি ব্যাংক ব্যবসার জন্য কোনো আলাদা উদ্যোগ প্রয়োজন হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানত ছিল ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমানতের ২৭ দশমিক ৫৪ শতাংশই ইসলামি ব্যাংকগুলো পেয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের আমানতে ইসলামি ব্যাংকগুলোর হিস্যা ছিল ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে আইবিবিএলের আমানতই ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা।

গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৬৩ হাজার ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অংশ ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে এখন প্রবাসী আয়ের ৩৩ শতাংশই আসে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। সবচেয়ে বেশি আসে আইবিবিএলের মাধ্যমে।

সাধারণ ব্যাংকের চেয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলোর ব্যবসা দ্রুত বড় হচ্ছে। এ নিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেই মূলত গ্রাহকেরা ইসলামি ব্যাংকে আসেন। তাঁরা অন্য ব্যাংকে গেলে প্রশ্ন করেন, সুদ কত দেবেন? আর ইসলামি ব্যাংকে এলে বলেন, সুদ যেন হিসাব না করা হয়। টাকাটা যেন বৈধ ব্যবসায়ে যায়, সেটাও চান অনেকে। আবার জমা টাকার বিপরীতে মুনাফা নেবেন না, এমন গ্রাহকও ইসলামি ব্যাংকে আসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচলিত ব্যাংকগুলো যে প্রকল্পে অর্থায়ন করছে, সেই একই প্রকল্পে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগ করছে। যাঁরা বিনিয়োগের অর্থ নিচ্ছেন, তাঁদের কাছে ইসলামি বা প্রচলিত ধারার ব্যাংক বলে কিছু নেই। এ ছাড়া ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর কোনো ব্যবসার লোকসান ভাগাভাগি হয়েছে, এমন নজির নেই বললেই চলে।

এ সম্পর্কে বিআইবিএমের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, ইসলামি ব্যাংকের মূল ভিত্তি হলো মুনাফা ও লোকসানের ভাগীদার হওয়া। সেটা পৃথিবীর কোথাও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না, বাংলাদেশও চেষ্টা করছে না। ইসলামি ব্যাংকগুলো শুধু মুনাফার দিকে না তাকিয়ে ব্যবসায়ীর সার্বিক উন্নতির জন্য তাঁর পাশে থাকতে পারে। পরিবেশের ক্ষতি হবে, এমন প্রকল্পে বিনিয়োগ না করলেও পারে। এতে মনে হবে, দেশে কিছুটা হলেও ইসলামি ব্যাংকিংয়ের চর্চা হচ্ছে। অন্য বিধিবিধানের চেয়ে এগুলো পালন করা সহজ।

বর্তমানে দেশে মোট ১০ হাজার ৭৬৭টি ব্যাংক শাখার মধ্যে ১ হাজার ৭৫৫টি ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর। ইসলামি ব্যাংকগুলো শাখা কার্যক্রমের পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপশাখার মাধ্যমেও সেবা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটিএম ও সিআরএমের মাধ্যমে টাকা জমা এবং উত্তোলনের সুবিধা তো আছেই।

জানতে চাইলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুর রহমান বলেন, আসলে ইসলামি ব্যাংকিং হলো কাগজে-কলমে। বাস্তবে ইসলামি ব্যাংকিং মানা হয় না। মানার চেষ্টাও নেই। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে দেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বাজার বড় হচ্ছে। এ ছাড়া কার্যক্রম শুরুর প্রায় ৪০ বছর পর এসেও এখনো ইসলামি ব্যাংকিংয়ের জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা ও আইন করা হয়নি। ইসলামি ব্যাংকের জন্য পৃথক আইন এখন সময়ের দাবি।

image_pdfimage_print