Home জাতীয় সমাজের সর্বস্তরের নষ্টদের মুখোশ উন্মুচন সময়ের দাবি

সমাজের সর্বস্তরের নষ্টদের মুখোশ উন্মুচন সময়ের দাবি

34
0
SHARE

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ায় অনেকে গা ঢাকা দিয়েছে।নড়েচড়ে বসছে কেউ কেউ। রাগব বোয়ালদের শুরুতে না ধরায় তারা সতর্ক হয়ে গেছে। অর্থকড়ি লুকানোর সুযোগ পাচ্ছে।একসঙ্গে সর্বত্র অভিযান চালালে কাঙ্ক্ষিত ফল শতভাগ মিলত বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

অর্থকড়ি কীভাবে ক্ষমতাসীনদের পিয়নসমদেরও টাকার কুমিরে পরিণত করেছে, গত কদিনের মিডিয়ার খবরে তা দেশবাসী অবগত হয়েছে।ব্যাংকে নিরাপদে টাকা সংরক্ষণের জন্য যে ভোল্ট ব্যবহার করা হয়, সে অর্ধডজন ভোল্ট এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় টাকা রাখার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। একটি ব্যাংকে যত টাকা থাকে, তার চেয়ে কম টাকা নেই তৃতীয় সারির আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায়।

যুবলীগ অফিসের একজন পিয়ন, পরে কম্পিউটার অপারেটর সর্বশেষ দফতর সম্পাদক নাকি বর্তমানে শত শত কোটি টাকার মালিক! যুবলীগ টাকা বানানো এবং কামানোর অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে সমাজে পরিচিতি পাচ্ছে। নীতি-নৈতিকতা-আদর্শ বলতে যা বোঝা,য় এভাবে যুবসমাজের সব ম্লান হয়ে যাচ্ছে। অবক্ষয় তাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ কদিনে যে কয়টি অভিযান চলেছে, তাতে অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও মাদকের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্টতই পাওয়া গেছে।২৪ সেপ্টেম্বর একটি খবর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এসেছে যে, ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার স্কুলপড়ুয়া ছেলেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ হাতিরঝিল থানা পুলিশ আটক করেছে। কবছর আগে চাঁদপুর শহরে কজন আওয়ামী লীগ নেতার সন্তানদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ ছিল।

বর্তমান সমাজ ও দেশটা আমাদের সবার। একে গড়ার দায়িত্বও সবার। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় যুবসমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোনদিকে যাচ্ছে, তার আলামত অভিযানের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। এসব সমাজের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। যে বা যারা এসব করছে এবং যারা এগুলোর পেছনে রয়েছে, তারা সমাজকে অধঃপতনের জন্য যে দায়ী; সেটা তো আর হলফ করে বলার দরকার নেই।

মিডিয়ায় খবর এসেছে, ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় এ চারজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘অবৈধ লেনদেন কিংবা অর্থ পাচার হয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। কে কোন ব্যক্তি কিংবা কি তার পরিচয়, সেটা আমাদের কাছে মূখ্য নয়। আমরা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। সুতরাং তাদের অ্যাকাউন্টে অবৈধ কোনো লেনদেন হয়েছে কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’ আরো কজন এমপির বিরুদ্ধে এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হবে বলে সূত্র জানায়। এর মধ্যে পুরান ঢাকার দখলদার ও ধনকুবের এক এমপি এবং মিরপুরের দখলদার দুই এমপির নাম নাকি শীর্ষে।

ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বাসাসহ আরেক বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যােব ৫ কোটি নগদ টাকা এবং ৭৩০ ভরি সোনা ও ৫টি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর উৎস নাকি জুয়ার টাকা। জুয়া, অস্ত্র, মাদক আর নারীর আদম ব্যবসার হোতাও নাকি তারা। একইভাবে দখলদার। ঢাকার সম্পত্তি দখলে তাদের হাত রয়েছে। তারা এসব করত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে।

নেত্রকোনায় একটি পাকা সড়ক মেরামতের এক মাস না যেতেই খানাখন্দে ভরে যাওয়ার চিত্র ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এসেছে। আরো এসেছে জি কে শামিম কোন ঠিকাদারকে শতকোটি টাকা দিতেন, সে নামসহ খবর। শোনা যায় বালিশ ও পর্দা সমাচার। সর্বোপরি শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কে টাকার ভাগাভাগি একটি ছাত্র সংগঠনের দুজন ছাত্রনেতার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।এসব অশুভ দিক আমাদের গ্রাস করছে, যা সমাজ ও আমাদের জন্য মোটেও শুভ নয়।

রাজনীতি রাজার নীতি। হালে রাজনীতি নীতিহীনদের কব্জায় পড়ে দিক হারিয়েছে। হারিয়েছে চরিত্র। মানবসেবার রাজনীতিতে আজ ঢুকে গেছে অপরাজনীতি। নীতি-আদর্শের বদলে সেখানে স্থান পেয়েছে সম্পদরাজি অর্জনের অপসংস্কৃতি। অপসংস্কৃতির বলি হচ্ছে উঠতি যুবসমাজ। যুবসমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে চলমা্ন অভিযানে সমাজের সর্বস্তরের নষ্টদের মুখোশ উন্মুচন সময়ের দাবি।

image_pdfimage_print