Home আন্তর্জাতিক চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের আশঙ্কা বাড়ছে

চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের আশঙ্কা বাড়ছে


বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক : তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্যরা। এই প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে খুব সম্ভবত চুক্তিটির মৃত্যুঘণ্টাই বেজে গেল। সেই সঙ্গে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচ্ছেদপ্রক্রিয়াও (ব্রেক্সিট)। যুক্তরাজ্য আদৌ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়তে পারবে কি না, ছাড়লেও কখন, কিভাবে ছাড়বে—তা এখন কঠিন এক প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৬ সালে গণভোটের মাধ্যমে ইইউ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রিটিশরা। কিন্তু ছাড়ার পর দুই পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়েই হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি চলছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ইইউয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের একটি চুক্তি (যেটাকে ব্রেক্সিট চুক্তি বলা হচ্ছে) করলেও ব্রিটিশ এমপিরা তাতে সমর্থন দিচ্ছেন না। এমনকি চুক্তি পাস হলে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বলে টোপ দিয়েও সফল হননি মে।

গত শুক্রবারের ভোটাভুটিতে তৃতীয়বারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি বাতিল হওয়ার পর টেরেসা মে পার্লামেন্টে বলেন, ‘আমরা মনে হয় প্রচেষ্টার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।’

ভোটাভুটির কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক জানান, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে ইইউ নেতারা ১০ এপ্রিল বৈঠকে বসবেন। ইইউ নেতাদের একটা অংশ মনে করে, মের প্রস্তাব তৃতীয়বারের মতো প্রত্যাখ্যান হওয়ার মধ্য দিয়ে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে গেল। কিন্তু এমনটি ঘটলে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা অরাজকতা তৈরি হবে, যারা কিনা এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন রয়টার্সকে বলেন, টেরেসা মের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন আছে। এ ছাড়া ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করার প্রতিশ্রুতিও ট্রাম্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

গত শুক্রবারের ভোটাভুটির আগে টেরেসা মে বলেছিলেন, একটি চুক্তির মাধ্যমে ইইউ ছাড়ার এটাই সম্ভবত শেষ সুযোগ। এ অবস্থায় ভেদাভেদ ভুল সবাইকে চুক্তির পক্ষে ভোট দেওয়ার এক ‘আবেগী’ আবেদনও জানিয়েছিলেন তিনি। দুই বছর দর-কষাকষির পর ইইউয়ের সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তিটি করেছিলেন মে।

ভোটাভুটির পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যকে আগামী ১২ এপ্রিল ইইউ ছাড়তে হবে।’

শুধু মের চুক্তিই নয়, এমপিদের তোলা বিকল্প কয়েকটি প্রস্তাবও এরই মধ্যে পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে বাতিল হয়েছে। এ অবস্থায় কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন, তা মের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি কি এখন ব্রেক্সিট কার্যকরের জন্য ইইউয়ের কাছে আরো সময় চাইবেন, নাকি চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিটের দিকে এগোবেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তাঁর এক মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন, বেক্সিট চুক্তির বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে মে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, তিনি চুক্তিটি চতুর্থবারের মতো পার্লামেন্টে তুলতে পারেন। সেটা হতে পারে আগামীকাল সোমবার। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্তই নেন না কেন, তাঁর হাতে আর সপ্তাহ দুয়েক সময় আছে।

এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি, তাতে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। গত শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেন, ইইউয়ের উচিত চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়া।

অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুরজ বলেছেন, যুক্তরাজ্য যতক্ষণ না কোনো চুক্তিতে পৌঁছবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সূত্র : রয়টার্স।