Home জাতীয় ইরাকে বৈধভাবে যাওয়া শতাধিক বাংলাদেশী জিম্মি

ইরাকে বৈধভাবে যাওয়া শতাধিক বাংলাদেশী জিম্মি


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক :যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে বৈধভাবে পাড়ি দেয়ার পরও দুই মাস ধরে শতাধিক বাংলাদেশী জিম্মি হয়ে রয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ‘ডাক্তার’ লিটন নামে এক ব্যক্তি তার নিজস্ব ‘জেলখানায়’ তাদেরকে আটকে রেখে নির্যাতন চালাচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে, আটক কর্মীর বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ হিসাবে তিনি টাকাও দাবি করছেন। তার কথামতো যারা টাকা দিচ্ছেন না ওইসব কর্মীকে থাকা-খাওয়ার কষ্ট দেয়ার পাশাপাশি মারধরও করা হচ্ছে। বিষয়টি ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস অবগত রয়েছে বলে আটককর্মী মোহাম্মদ আহম্মদ আলী, মানিক মিয়া ও মোহাম্মদ সাবির হোসেনের স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার ইরাকে অবস্থানরত ‘ডাক্তার লিটন’ এর (+৯৬৪৭৫০৫৯০০২৩১) মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি টেলিফোন ধরেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মগবাজার, পুরানা পল্টন ও বনানীর একটি রিক্রুটিং এজেন্সির অফিস থেকে এসব কর্মী ইরাকের উদ্দেশ প্রায় দুই মাস আগে পাড়ি জমান। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখা থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তারা ইরাকে যান। কিন্তু ওই দেশে যাওয়ার পর এসব কর্মীকে কাজে যোগদান করানোর কথা। কিন্তু তাদের কাজ না দিয়ে ইরাকের রাজধানী বাগদাদ এলাকার নিয়োগকারী কোম্পানির অদূরে একটি ঘরের মধ্যে তাদের তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। কী কারণে তাদের আটক করা হলো সে ব্যাপারে প্রথম দিকে শ্রমিকেরা এবং দেশে থাকা তাদের স্বজনরা না জানলেও পরে তাদের জানানো হয়, তাদের ইরাকে আসা বাবদ যে টাকা দেয়ার কথা সেটি নাকি তাকে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ডাক্তার নামধারী লিটন এসব কর্মীর স্বজনদের কাছে তার নিজের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলে। কিন্তু অসহায় গরিব এসব কর্মীর স্বজনরা তাকে জানিয়ে দেন, তারা এমনিতেই সুদে হাওলাত করে সন্তান বিদেশে পাঠিয়েছেন। এখন কোত্থেকে তারা আবার টাকা দেবেন?

গতকাল মগবাজার এলাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি মামুন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা নিয়ম মেনে কর্মী পাঠিয়েছি। একজন কর্মী পাঠাতে সর্বোচ্চ লাভ হতো ১২ হাজার টাকা। কিন্তু এখন আমার এসব লোককে লিটনের হেফাজত থেকে ছাড়াতেই ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়ে গেল! তারপরও লিটন এখনো আমার ৩০ জন কর্মীকে ইরাকের একটি ঘরে আটকে রেখেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লিটন আমার সাথে প্রতিটি কর্মীর ভিসার জন্য ২ হাজার ডলার করে চুক্তি করেছে। তার চুক্তি মোতাবেক পুরো টাকা দেনা হয়েছে। এখন সেখানে যাওয়ার পর তিনি ২৫ শ’ ডলার করে দাবি করছেন। এখন এই টাকা না দিলে তিনি লোক ছাড়বেন না। এখন তার আত্মীয়স্বজনরা আমাকে বার বার ফোন দিচ্ছেন। আমিতো নিয়ম মেনেই এসব লোককে ইরাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। তাহলে কেন আমাদের লোকগুলোকে লিটন জিম্মি করে রাখলেন? আমার লোকগুলোর মধ্যে ১০ জনের একটি তালিকা দিয়ে ইরাকের বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো তাদের ছাড়ানোর ব্যাপারে কোনো সুরাহা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর রেজাউল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যশোরের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বৈধভাবে লোকগুলো পাঠিয়েছি। তারপরও লিটন কী কারণে আমাদের লোকগুলোকে এভাবে দিনের পর দিন আটকে রাখছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। তাদেরকে মারধরও করা হচ্ছে। আমরা লিটন সাহেবকে লোকগুলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলে তিনি উল্টো বলেন, দূতাবাস আমার কী করবে? দূতাবাস আমার সবসময় পকেটে থাকে? এই অবস্থায় আমরা এখন অসহায়। সূত্র: নয়া দিগন্ত