Home জাতীয় জাতির পিতার খুনিদের উদ্দেশ্য যেন সফল না হয়: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতার খুনিদের উদ্দেশ্য যেন সফল না হয়: প্রধানমন্ত্রী


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা প্রতিনিধি:  বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে দলের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই খুনি, যে দলটি খুনিদের মদদ দিয়েছে ও পুরস্কৃত করেছে, খুনি যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে, সেই দলটিকে খুনিদের দল ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? আর কোনো দিন ওই হায়েনাদের হাতে দেশ যেন চলে না যায় সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে দলের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই খুনি, যে দলটি খুনিদের মদদ দিয়েছে ও পুরস্কৃত করেছে, খুনি যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে, সেই দলটিকে খুনিদের দল ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে? আর কোনো দিন ওই হায়েনাদের হাতে দেশ যেন চলে না যায় সে জন্য দেশবাসীকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে খুনিরা জাতির  পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল সেটা যেন সফল না হয়, এটাই তার সরকারের লক্ষ্য। বরং জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন সেটাই যেন সফল হয়।

শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডকে কারবালার পুনরাবৃত্তি অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু চিন্তা করে দেখুন, যেভাবে পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী-শিশুকে হত্যা করেছিল- ১৫ আগস্ট ঠিক একই রকমের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। কারবালার প্রান্তরে যেভাবে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হলো। ১৯৭৫ সালে যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ৩২ নম্বরে। একাত্তরের যে জাতি বুকের রক্ত দিয়ে নিজেদের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল- তারাই পঁচাত্তরে বিশ্বের কাছে একটি খুনি জাতি হিসেবে পরিচিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিএনপি নেতারা নতুন সাফাই গাইতে শুরু করেছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘৭৫ সালে বিএনপির তো জন্মই হয়নি। তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিএনপি কীভাবে জড়িত হলো? কিন্তু তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। যে দলের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই খুনি এবং খুনের সঙ্গে জড়িত- তার পক্ষে তো সাফাই গাওয়ার কিছু নেই। আর এটাও তো সবার জানা, আদালতই জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান কেবল বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতই ছিলেন না, এই হত্যার বিচার যাতে না হয় সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন। ইনডেমনিটি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। খুনিদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই ঘটনা তদন্তে স্যার টমাস উইলিয়ামের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক দল এ দেশে আসতে চাইলেও জিয়াউর রহমান অনুমতি দেননি, তাদের ভিসাও দেননি। বিএনপি খুনিদের দল না হলে কেন তদন্তে আসতে দেয়নি? কেন ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল? কেন খুনিদের পুরস্কৃত করেছিল?

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ১৫ আগস্টের খুনিদের মদদ দিয়েছে, পুরস্কৃত করেছে। যেভাবে জিয়াউর রহমান খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন, সেভাবে তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে খুনিদের পুনর্বাসন করেছেন। এরশাদও খুনিদের মদদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। এমনকি খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খুনি কর্নেল রশিদ ও বজলুল হুদাকে সংসদ সদস্য করে সংসদকে কলঙ্কিত করেছিলেন। রশিদকে বিরোধীদলীয় নেতাও বানিয়েছিলেন। তাহলে বিএনপি যে খুনিদের দল নয়- এটা তারা বলেন কীভাবে? প্রধানমন্ত্রী হয়ে খালেদা জিয়া যেভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন, তাহলে সেই দল খুনিদের না হয় কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে ১১ হাজার কারাবন্দি যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেন। যুদ্ধাপরাধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করেন, অনেককে মন্ত্রীও করেন। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেন। অর্থাৎ জিয়া যেভাবে গণহত্যাকারী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের মন্ত্রী করেন, খালেদা জিয়াও সেভাবেই রাজাকার আলবদরদের হাতে শহীদের রক্তরঞ্জিত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। খুনিদের হাতে যারা এভাবে জাতীয় পতাকা তুলে দেয় আর মন্ত্রী বানায়- তারা খুনির দল ছাড়া আর কী?

সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হন। দেশের ভেতর আওয়ামী লীগের যেসব বড় বড় নেতা খুনি মোশতাকের সঙ্গে গিয়েছিলেন- তারাও কোনো না কোনোভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। তারা পরে জিয়ার সঙ্গেও গেছেন। তারাও বেইমান ও মোনাফেক। তাদের অনেকে এখনও বেঁচে আছেন, বড় বড় কথাও বলেন।

বক্তব্যের শুরুতে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার নৃশংসতম ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। একপর্যায়ে কেঁদেও ফেলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে কালিমালিপ্ত দিন। নিজের জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে যিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন- সেই বঙ্গবন্ধুকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হলো! আর হত্যা করল কি-না এই বাংলাদেশেরই মানুষ- যাদের বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন।

তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধী ও ফিদেল কাস্ট্রোসহ অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে আগেই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কখনও বিশ্বাস করতে পারেননি, এভাবে বাংলাদেশের মানুষ তাকে হত্যা করতে পারে। আর যারা হত্যা করেছিল, তারা সবাই কিন্তু আমাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। মেজর ডালিম, ডালিমের বউ ও শাশুড়ি তো দিনরাত এই বাড়িতেই পড়ে থাকত। বঙ্গবন্ধু ঘুণাক্ষরেও বিশ্বাস করতে পারেননি এরা তাকে হত্যা করতে পারে? এভাবে বেইমানি মোনাফেকি কেউ করতে পারে? সেই কলঙ্কজনক ইতিহাসই রচিত হয়েছিল বাংলাদেশে।

২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন, দুর্নীতি-লুটপাট, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলাসহ দুঃশাসনের বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপির জন্মটাই হচ্ছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। তাদের এই চরিত্রটা এতটুকু বদলায়নি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হয়েছে তখনই, যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় এসেছে। পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় ছিল, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন কখনোই চায়নি। বরং এই স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় এসে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এবং পরাজিত শক্তি পাকিস্তানকে খুশি করতে এ দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেছিল।

১৯৮১ সালে দেশের ফেরার পর থেকে দেশের মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণে তার দীর্ঘ সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মৃত্যু হাতে করে দেশে ফিরেছি। আর দেশে আসার পর যখন দেশের মানুষের উন্নয়ন করতে পেরেছি- তখনই ভেবেছি দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে। বাবা-মা, ভাই সবাইকে হারিয়েছি, তাই হারানোর ভয় নেই। কোনো চাওয়া-পাওয়ারও কিছু নেই। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাজনীতি করেছি- তাই কোনো কিছুতে ভয় পাইনি।

তিনি বলেন, মানুষ একটা শোকই সহ্য করতে পারে না। আর আমরা এতগুলো শোককে সহ্য করে চলেছি। সেই শোক আর ব্যথা-বেদনা নিয়েই দেশের মানুষের জন্য কাজ করে গেছি যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। তাদের জীবন এতুকটু উন্নত হলেও বাবার আত্মা শান্তি পাবে। ৪৪ বছর হলো বঙ্গবন্ধু আমাদের ছেড়ে গেছেন। কিন্তু তার দেশের মানুষ এখন শান্তিতে রয়েছে, ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পায় না। এখনও আরও অনেক কাজ করতে হবে। দেশটাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আলহাজ্ব এ্যাডভোকেট নুরুল অমিন রুহুল এমপি ,উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন মহানগর নেতা আখতার হোসেন ও আজিজুল হক রানা।