Home ব্রেকিং ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল

ছাত্রদলের নতুন সভাপতি খোকন, সম্পাদক শ্যামল


বিশেষ প্রতিনিধি:

নানা নাটকীয়তার পর নতুন নেতৃত্ব পেলো ছাত্রদল। রাজধানীর শাহাজাহানপুরে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের বাসায় রাতভর ভোট গ্রহণ শেষে ভোর রাতে ঘোষণা করা হয় নতুন নেতৃত্বের নাম। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।

মোট ৫৬৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৫৩৩ জন উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে ৪৮১ জনের প্রদত্ত ভোটের ভিত্তিতে সংগঠনটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। ষষ্ঠ কাউন্সিলে ভোটের লড়াইয়ে সভাপতির পদে প্রতিযোগী ছিলেন নয় জন আর এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ১৯জন। ১১৭টি সাংগঠনিক শাখার সভাপতি পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। ফজলুর রহমান খোকন পান ১৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ পান ১৭৮টি ভোট। সাধারণ সম্পাদকের পদে ইকবাল হোসেন শ্যামল পান ১৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দবী জাকির হোসেন পেয়েছেন ৭৮ ভোট।

১৯৯২ সালের পর প্রথম নির্বাচন তাই রাতভর অপেক্ষা কখন ঘোষণা হবে নতুন কমিটির। প্রায় ২৮ বছর পর সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন জোরদারের কথা জানান নতুন নেতারা।

মধ্যরাতে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর গণনা শেষে ভোরে ফল ঘোষণা করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ছাত্রদলের এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকনসহ অন্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

খোকন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিনি সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র। তিনি ছাত্রদলের গত কেন্দ্রীয় সংসদে গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদকে দায়িত্ব পালন করেছেন। শ্যামল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রদলের শীর্ষনেতা নির্বাচনে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম ভোট হল। ১৯৯২ এর কাউন্সিলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সভাপতি এবং সিলেটের গুম হওয়া বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে কয়েক মাস পরই কমিটিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো। সর্বশেষ কমিটি গঠন হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আকরামুল হাসান। শুরুতে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন পর এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেয়া হয়েছিল।

গত ৩ জুন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলে প্রত্যক্ষ ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দলটি। ওই সময় কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বয়সের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলে বৃহৎ এই ছাত্র সংগঠনটির একাংশ প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে। এসময় বিরোধীতাকারীরা নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বয়সসীমা তুলে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনরত অবস্থায় ভাংচুর করে। তখন ১২ ছাত্রদল নেতাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিএনপি নেতারা আইনজীবীদের সাথে কথা বললে তারা জানান কাউন্সিল করায় আইনগত কোনো বাধা নেই। এর পরপরই বুধবার বিকালে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের ডাকে ষষ্ঠ কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

নয়া পল্টনের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠক করেন লন্ডনে থাকা তারেক রহমান। তখন তৃতীয় তলায় কনফারেন্স কক্ষে প্রার্থীরা বসেছিলেন। এরপর সন্ধ্যায় প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের কাছের শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের বাড়িতে যেতে বলা হয়। তখন জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটগ্রহণ হবে।”

কাউন্সিলর ও প্রার্থীরা কার্ড দেখিয়ে ঢোকার পর রাত পৌনে ৯টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
চারটি বুথে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে তারেক রহমান কাউন্সিলর ও প্রার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।

ভোটগ্রহণ শুরুর পর খাইরুল কবির খোকন বলেন, “নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচনের কাজটি শুরু করেছি।”
ভোটগ্রহণ বিরতি ছাড়াই চলে রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত; এরপর গণনা শেষে ফল ঘোষণা হয়।

ছাত্রদলের কাউন্সিলে নির্বাচন পরিচালনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন। তার সঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন সাবেক দুই সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও আজিজুল বারী হেলাল। সাবেক ছাত্রদল নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু ও সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ভোট চলাকালীন এবং গণনার সময় সারারাত মির্জা আব্বাসের বাড়ির আঙ্গিনায় অবস্থান করেছেন ছাত্রদলের ভোটার ও প্রার্থীরা।

ছাত্রদলের নির্বাচিতদের ধৈর্য ধরে ও হঠকারিতা না করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। নির্বাচিতদের নিয়ে স্লোগান না দেওয়ার কথাও জোর দিয়ে বলা হয়। এছাড়া কারও উস্কানিতে পা না দিয়ে অত্যন্ত সতর্কভাবে সামনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।