Home বিনোদন যাদের হারালাম ২০১৯ সালে

যাদের হারালাম ২০১৯ সালে


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : নতুন বছর নিয়ে পরিকল্পনার শেষ নেই। পুরানো বছরের সবকিছু ভুলে যেতে চায় সবাই। কিন্তু কিছু স্মৃতি থাকে যা কখনো ভুলে থাকা সম্ভব নয়। জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়ে যায় সেসব স্মৃতি। ফেলে আসা স্মৃতি আমাদের নাড়া দেয়। ২০১৯ সালে শোবিজ অঙ্গন হারিয়েছে অনেক খ্যাতিমানদের। সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তারা।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। হৃদপিন্ডে ব্লক ধরা পড়ায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তার হৃদপিন্ডে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার ৬৩ বছর বয়সে ঢাকার আফতাবনগরে তার নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। সংগীতে অবদান রাখার জন্যে বুলবুল একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তার সুর করা অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে: ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ইত্যাদি।

ইফতেখারুল আলম
বছরের শুরুতেই ৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ষাটের দশকের সিনেমার প্রখ্যাত প্রযোজক ইফতেখারুল আলম। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হানের পরিচালনায় তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ নির্মিত হয় তার প্রযোজনায়। চলচ্চিত্র জগতের মানুষদের কাছে তিনি ইফতেখারুল আলম কিসলু নামে পরিচিত।

টেলি সামাদ
২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তার বাইপাস সার্জারি করা হয়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে তার রক্তে লোহিত রক্তকণিকার স্বল্পতা দেখা দেয়। এছাড়াও টেলি সামাদের খাদ্য নালীতে সমস্যার পাশাপাশি বুকে ইনফেকশন, ডায়াবেটিস ছিল। টেলি সামাদ ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল দুপুরে অসুস্থতাজনিত কারণে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তার আসল নাম আবদুস সামাদ। তবে দর্শকদের কাছে ‘টেলি সামাদ’ নামেই তিনি বেশি পরিচিতি পান। ১৯৭৩ সালে পরিচালক নজরুল ইসলামের ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। টেলি সামাদ শেষ কাজ করেছেন অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’ ছবিতে। অভিনয়ের বাইরে অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি গানও গেয়েছেন।

সুবীর নন্দী
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী। ১৪ই এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ৩০ এপ্রিল তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে ৫ ও ৬ই মে পরপর দুইদিন হার্ট অ্যাটাকের পর তিনি ৭ই মে ৬৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ বাজারে আসে ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে। সুবীর নন্দী প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আবদুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি।

সালেহ আহমেদ
২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল দুপুর ২ টা ৩৩ মিনিটে ৮৩ বছর বয়সে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অভিনেতা সালেহ আহমেদ। অয়োময়, কোথাও কেউ নেইসহ হুমায়ূন আহমেদের বহু নাটকে সালেহ আহমেদের অভিনয় এখনো টেলিভিশন দর্শকদের মনে আছে। হুমায়ূন আহমেদের আমার আছে জল, শ্রাবণ মেঘের দিন ও আগুনের পরশমণি সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন।

শাহনাজ রহমতুল্লাহ
শাহনাজ রহমতুল্লাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৩শে মার্চ ঢাকার বারিধারায় নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘ ৫০ বছর গান গেয়েছেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া গানই চারটি। এগুলো হলো ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিতে খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনারগাঁয়’ ও ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’।

আহমেদ কায়সার
২ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর চরখালী গ্রামের নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করেন আহমেদ কায়সার। মৃত্যুকালে এই গীতিকারের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এতো কথা বলে’ জনপ্রিয় এই গানের গীতিকার তিনি।

আনিসুর রহমান আনিস
আনিসুর রহমান আনিস ২৮ এপ্রিল ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। রাজধানীর টিকাটুলির বাসায় তিনি মারা যান। ১৯৬০ সালে ‘বিষকন্যা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আনিস অভিনীত প্রথম ছবি জিল্লুর রহমান পরিচালিত ‘এই তো জীবন’। তারপর থেকে তিনি অভিনয় করেই গেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি অভিনয় করছেন। ‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে গোলাম হোসেন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি মঞ্চে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। আড়াই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

সাইফুল আজম কাশেম
১১ মার্চ সোমবার সকালে তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা যান নির্মাতা সাইফুল আজম কাশেম। সাইফুল আজম কাশেম একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন। তার পরিচালিত বেশকিছু দর্শকপ্রিয় ছবি হলো- ‘অন্তরালে’, ‘বৌরাণী’, ‘সানাই’, ‘ধনদৌলত’, ‘দুনিয়াদারী’, ‘হালচাল’, ‘ভরসা’, ‘সোহাগ’, ‘ঘরসংসার’, ‘স্বামীর আদেশ’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’।

হাসিবুল ইসলাম মিজান
১৮ এপ্রিল ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন হাসিবুল ইসলাম মিজান। শাকিব খান, শাবনূর অভিনীত সাড়া জাগানো ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ ছবির পরিচালক তিনি। এরপর এই নির্মাতা কপাল, জন্ম, হৃদয়ে আছো তুমি ছবিগুলো নির্মাণ করেন।

খালিদ হোসেন
নজরুলসংগীতের বরেণ্য শিল্পী, গবেষক, স্বরলিপিকার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতগুরু খালিদ হোসেন ২২ মে ২০১৯, বুধবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। খালিদ হোসেনের গাওয়া নজরুলসংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আরো আছে একটি আধুনিক গানের অ্যালবাম ও ইসলামি গানের ১২টি অ্যালবাম।

মমতাজউদ্দীন আহমেদ
জুন মাসে সবাইকে ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক মমতাজ উদ্দীন আহমদ। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। চলতি বছরের ২ জুন না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

নাজমুল হুদা মিন্টু
চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজমুল হুদা মিন্টুও গত ২ জুন মারা গেছেন। ‘সূর্য ওঠার আগে’, ‘চৌধুরী বাড়ী’, ‘ডাক পিয়ন’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘দিনের পর দিন’, ‘সংঘর্ষ’, ‘মধুমালতি’, ‘ঘরে বাইরে’সহ বেশ কিছু সিনেমা নির্মাণ করেন তিনি।

খলিলুর রহমান বাবর
চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক খলিলুর রহমান বাবর মারা যান ২৬ আগস্ট। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ‘বাংলার মুখ’, ‘রংবাজ’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। মাঝে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও তিনি আত্মপ্রকাশ করেন।

কালা আজিজ
কালা আজিজ খ্যাত বাংলা চলচ্চিত্রের সুপরিচিত মুখ অভিনেতা ডায়াবেটিস ও কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের কিছু অংশে পচন ধরে ২৩ নভেম্বর ঢাকার কাওলা এলাকায় নিজের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। কয়েক’শ বাংলা চলচ্চিত্রে ভিলেনের সহযোগী হিসেবে অভিনয় করেছেন আজিজ। কয়েক দশক ধরে তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্র অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে ডিপজল, মিশা সওদাগর, মিজু আহমেদের সঙ্গে বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি।

মাহফুজুর রহমান খান
চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান ৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ৭০ বছর বয়সে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপূর্বে অসুস্থতার ফলে তাকে ২৫ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পেশাদার চিত্রগ্রাহক হিসেবে মাহফুজুর রহমান খান ১৯৭২ সালে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করেন। তিনি আলমগীর কবির, আলমগীর কুমকুম, হুমায়ুন আহমেদ, শিবলি সাদিকদের মত কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত প্রায় সব চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক ছিলেন। তার চিত্রগ্রহনে ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমার জন্মভূমি, অভিযান, মহানায়ক, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, ঢাকা ৮৬, অন্তরে অন্তরে, পোকা মাকড়ের ঘর বসতি, আনন্দ অশ্রু, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, নন্দিত নরকে, হাজার বছর ধরে, বৃত্তের বাইরে, ঘেটুপুত্র কমলা।

হুমায়ূন সাধু
২৯ সেপ্টেম্বর হুমায়ুন সাধু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন এবং পরবর্তীতে ২০ অক্টোবর রাতে আবারো তিনি একই রোগে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার মেটাল রহিম মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত ধরে শোবিজে হুমায়ূন সাধুর পথচলা শুরু। অভিনয় দিয়ে দর্শকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন, নাটক নির্মাণ করেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।

শাহাদত হোসেন সুজন
১৫ ডিসেম্বর সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর দুপুর পৌনে তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। টিভি ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেনের সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সুজন। সুজন সিসিমপুরে পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন।

পৃথ্বী রাজ
গত ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও জিলাপিতে কাজ করার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তরুণ শিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক পৃথ্বী রাজ।