Home আন্তর্জাতিক বনরুই থেকে করোনা ছড়িয়েছে: ন্যাচার জার্নাল

বনরুই থেকে করোনা ছড়িয়েছে: ন্যাচার জার্নাল


চীনে পাচার হওয়া মালয় প্রজাতির বনইরুয়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের দুটি ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ভাইরাসের সঙ্গে সঙ্গে মিল আছে মানুষের শরীরে পাওয়া ‘কোভিড ১৯’ এর। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের বরাত দিয়ে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বনরুই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাই পথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একটি, জড়িবুটি ওষুধ তৈরিতেও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বিবিসিকে বলেন, রাই পথে আসা মালয় প্রজাতির বনরুইয়ে এ ভাইরাস পাওয়া যাবার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে, এই প্রজাতির বনইরুয়ের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকলো কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল-নাকি দক্ষিণ পূর্বএশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল সেখানেই ঘটেছিল? তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে বনরুইয়ের ভূমিকা বুঝতে হলে আরো পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা প্রয়োজন। যদিও ‘সার্স কোভ–২’ এর প্রাদুর্ভাবের সরাসরি ‘হোস্ট’ হিসেবে বনরুইয়ের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হবার দরকার আছে। তবে ভবিষ্যতে যদি এরকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।’
ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট পিটার ডাসক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বনরুইয়ের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া মহামারির সম্পর্ক রয়েছে। মার্কিন এই প্রতিষ্ঠানটি বন্যপ্রাণি থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগ বালাই নিয়ে গবেষণা করে থাকে।
তিনি বলেন, ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়িয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। সম্ভবত বাদুড় থেকে। পরে ওই বাদুড় থেকে আরও একটি স্তন্যপায়ী প্রাণির দেহে এই ভাইরাস ছড়ায়। ওই প্রাণি চীনের উহানে বিক্রির চল আছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রখ্যাত মেডিকাল জার্নাল নেচারে পাঁচ বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় গত ১৭ মার্চ। গবেষণায় বলা হয়, এসব প্রাণি নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোন মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে বন্য প্রাণির বাজারে বনরুইয়ের মত জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
গবেষণায় বলা হয়, বাদুড়ের দেহেও করোনাভাইরাস আছে এবং তার সঙ্গে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের আরো বেশি মিল আছে। কিন্তু ভাইরাসের একটি অংশ যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে শরীরের ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে তার সঙ্গে এর মিল নেই।
সহ-গবেষক সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে, যে ভাইরাস মানুষকে সংক্রমিত করছে।
তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো বনরুইও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোন প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটির অধ্যাপক এন্ড্রু কানিংহ্যাম বিবিসিকে বলছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। ‘কোভিড ১৯’ উৎস আসলে এখনো অজানা। হয়তো এটা কোন বনরুইয়ে ভাইরাসটি প্রাকৃতিকভাবেই ছিল বা বনরুইটি ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোন প্রাণী থেকে এসেছিল।
চীন অবশ্য করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। ভিয়েতনামেও এ ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে
বনরুই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের স্তন্যপায়ী প্রানী। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বনরুই আছে, দেশি, চীনা ও মালয়। পিঁপড়া ও পিঁপড়াজাতীয় প্রাণী খায় বলে আঁশযুক্ত পিঁপড়াভুক নামেও পরিচিত। মুখে কোনো দাঁত নেই বলে আগে দাঁতহীন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দলে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।
বাংলাদেশে বনরুই চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রা ও, সিলেটে দেখা যায়। মাটিতে বাস করে বনরুই। তবে এ প্রাণীটি গাছেও চড়তে পারে। বাংলাদেশ বনরুই ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর কাছে প্রিয় খাবারের একটি।
বন্যপ্রাণী পাচারের ওপর নজরদারি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রাফিক’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর অন্তত ২০ টন বনরুই পাচার হয়। বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে গত ১৬ বছরে ১৬ লাখ বনরুই পাচার হয়েছে। এটি বন্যপ্রানীর পাচারের দিকে শীর্ষে।