Home অর্থনীতি কর না কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে: এফবিসিসিআই সভাপতি

কর না কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে: এফবিসিসিআই সভাপতি


শুল্ক–কর না কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা আগেই শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সুপারিশ রাখা হয়নি। এসব কারণে এখন বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সামনে পবিত্র রমজান, এখনই দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে।

শনিবার ঢাকা চেম্বার অফ কর্মার্স ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক ওয়েবিনাওে এসব কথা বলেন তিনি। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, মনে করা হচ্ছে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তাই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। আসলে কিন্তু তা নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া কাঁচামালের বহু কারখানা বিদেশে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাসায়নিক কারখানা। এমন প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা আগেই শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সুপারিশ রাখা হয়নি। এসব কারণে এখন বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

ওয়েবিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, কোভিড মহামারী ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সকল স্তরের জনগনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু নীতসহায়তার পাশাপাশি পণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কোভিড মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হলেও আমাদের অর্থনীতি এখন ঘুঁড়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের রপ্তানি বেশি মাত্রায় তৈরি পোষাকের উপর নির্ভরশীল, তবে কৃষি, ঔষধ, পাট, সিরামিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি সম্ভাবনাময় খাতকে প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসার পাশাপাশি মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে সকলকে মনোযোগী হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ তহবিলের সম্প্রসারণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে, তবে নেগোশিয়েশন দক্ষতা বাড়াতে সকলকে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি সিএমএসএমই খাতকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে এখাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ভোগ্য পণ্যের সাপ্লাই চেইনের উপর বেশি মাত্রায় চাপ পড়ায় আমাদের দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ও কাঁচামাল আমদানিতে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, স্থানীয় বাজারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমতাবস্থায় বিশেষকরে নিত্যপ্রয়োজনয় পণ্যে আমদানিকারকদের ঋণ সহায়তা ও আমদানিকৃত পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস করা হলে, সাধারণ জনগন এ অবস্থা হতে মুক্তি পাবে বলে মত প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, কোভিড মহামারির কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, একই সাথে তৈরি পোষাকখাতের পণ্যের বহুমুখীকরণ ও নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবনের জন্য উদ্যোক্তাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।

রিজওয়ান রাহমান বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারী থাকা সত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২১) বাংলাদেশের অর্থনীতির পথচলা বেশ আশাব্যঞ্চক, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি, রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, নীতি-সহায়তা, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, লজেস্টিক অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং সর্বোপরি সাপ্লাই চেইনে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ একান্ত অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির (এফআইসিসিআিই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, ঢাকা চেম্বারর সহসভাপতি আরমান হক প্রমুখ।