Home ব্রেকিং বদলে যাচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

বদলে যাচ্ছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

47
0
SHARE

বাড়ানো হয়েছে জনবল, ‘মর্ডানাইজেশন অব ডিএনসি’ প্রকল্পে দূর হচ্ছে যানবাহন সংকট
I DREAM IT প্রকল্পে অটোমেশনের আওতায় আসছে অধিদপ্তরের কার্যক্রম
সাত বিভাগীয় শহরে হচ্ছে ২০০ শয্যার মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, বিভাগীয় শহরে হচ্ছে রাসায়নিক পরীক্ষাগার ও ৪১ জেলায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়

অধিদপ্তরের কর্মচারীদের কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য চালু করা হয়েছে ফিল্ড ফোর্স লোকেটর
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস, লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি এবং যুগোপযোগী আইন ও বিধি প্রণয়নের পশাপাশি আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ‘মর্ডানাইজেশন অব ডিএনসি’ নামে একটি প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। যে প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে স্থাপন করা হচ্ছে বিশ্বমানের ইন্টারোগেশন ইউনিট, চালু হচ্ছে ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ক্রয় করা হবে উন্নত গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি, মাদক শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি, স্থাপন করা হবে নৌ ও ডগ স্কোয়াড ইউনিটসহ ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ল্যাব। স্ক্যানিং মেশিন, লোকাল মোবাইল লোকেটর, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেটসহ পাঁচ শতাধিক কম্পিউটার, ডিজিটাল প্রচার ভ্যান ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরসহ আধুনিক অন্যান্য সরঞ্জামাদিও সংগ্রহ করা হচ্ছে ওই প্রকল্পের আওতায়।

এ ছাড়াও মাদক-সংক্রান্ত অপরাধ কমানো ও মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে (I DREAM IT) আরও একটি প্রকল্প ২০১৭ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। যে প্রকল্পের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আসছে বলেও জানা গেছে।

এ প্রকল্পের নারকোটিকস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়নে ১৫০টি কম্পিউটারসহ সামগ্রী, অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তাকে দেশে-বিদেশে আইটি এক্সপার্ট প্রশিক্ষণ, মাদক অপরাধ দমনে দুটি মাইক্রোবাস ও তিনটি ডাবল পিকআপ, মাদকবিরোধী টিভিসি প্রচার, পাঁচটি ড্রাগ ডিটেকটিং যন্ত্র, ঢাকা-চট্টগ্রাম রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন করা হয়। অনলাইনে সেবা দেয়ার জন্য গত বছর নারকোটিকস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধনও করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। শুধু তাই নয়, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে সিপাই পর্যন্ত সবার জন্য ইউনিফর্মের বিধান রেখে পোশাক বিধিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির জনবল এক হাজার ৭০৫ থেকে তিন হাজার ৫৯ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও প্রয়োজনের ভিত্তিতে জনবল বাড়ানোর কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে জানিয়ে যানবাহন সংকটের বিষয়েও সংস্থাটি বলছে— চলমান মর্ডানাইজেশন অব ডিএনসি প্রকল্পের মাধ্যমে অধিদপ্তরের যানবাহনের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং যানবাহন সংকট বহুলাংশেই কমে যাবে। এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সন্দেহভাজন সদস্যদের ডোপটেস্টের প্রস্তুতিও নিচ্ছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে বিধিমালা তৈরির কার্যক্রম ও ডোপ টেস্ট প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়াও মাদকের সর্বোচ্চ সাজার বিধান রেখে আইন প্রণয়নসহ প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতেও নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে সংস্থাটিতে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ একাধিক সংস্থার ডগ স্কোয়াড রয়েছে। এ ডগ স্কোয়াড দিয়ে মূলত বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কাজে ব্যবহূত হয়ে আসছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ডগ স্কোয়াড নেই। মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য সংস্থাটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে যান। যে সব বড় কার্টনে মাদকপাচার করা হয়ে থাকে সেগুলোতে তারা বেশি তল্লাশি করতে পারেন না। এ জন্য ডগ স্কোয়াড ইউনিটও সংযুক্ত করা হচ্ছে। ডগ স্কোয়াড পাওয়া গেলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার ছাড়াও বিমানবন্দরের মাদক উদ্ধার কার্যক্রম আরও বড় আকারে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। সূত্র জানায়, নৌপথেও মাদকের বড় চালান সারা দেশে পাচার হয়ে থাকে। এতে মাদকের বিস্তার সারা দেশে ঘটছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের নাফ নদ দিয়ে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে। পাশাপাশি সাগরপথে উপকূল দিয়েও ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। এ রুটে অবৈধভাবে যাতে কোনো মাদকদ্রব্য ঢুকতে না পারে এ জন্য কর্তৃপক্ষ নৌ-ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। নৌ-ইউনিটের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে নৌপথগুলোতে অভিযান চালাবে। এতে মাদকদ্রব্য পাচার অনেকটা কমে আসবে। সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের কাজকে আরও দ্রুতগামী করার জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ল্যাব স্থাপিত হলে অধিদপ্তরের বৈজ্ঞানিক কাজের মান আরও বাড়বে। মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনে তাদের ব্যবসার তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। তাদের শনাক্ত করতে আধুনিক বিশ্বের মতো লোকাল মোবাইল ট্র্যাকার বসানোর উদ্যোগও নিয়েছে সংস্থাটি। ক্রিমিনাল ডাটায় এবং মাঠপর্যায়ে কমকর্তাদের তালিকায় যেসব ব্যবসায়ীর নাম থাকবে তাদের আধুনিক মোবাইল ট্র্যাকার দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের অবস্থান নির্ধারণ এবং তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান যানবাহন সংকট সমাধানের পরিকল্পনার বিষয়ে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমার সংবাদকে জানানো হয়, বর্তমানে ৬০টি যানবাহন থাকলেও শিগগিরই আরও ৭০টি ডাবল কেবিন পিকআপ ক্রয় করা হচ্ছে। এ ছাড়া টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে আরও ৯৭টি, মর্ডানাইজেশন প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৪টি। ১০টি জিপের বিপরীতে আরও ১০টির অনুমোদন রয়েছে, আর টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচটি, মর্ডানাইজেশন প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে আরও ৮৬টি। এএসআই থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত ৮৮১টি পদের বিপরীতে ৮৮১টি মোটরসাইকেলও প্রস্তাব করা হয়েছে একই প্রকল্পে। আরও আটটি মিনিবাসও প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই প্রকল্পেই আবার ঢাকা, চট্টগাম, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় জেটি নির্মাণ ও দুই বছরের রক্ষণাবেক্ষণসহ ২০টি স্পিড বোটের প্রস্তাবও করা হয়েছে মর্ডানাইজেশন প্রকল্পে।

এ ছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিন হাজার ৩৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচটি বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট) মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। একই সময়ে ২৩৭৬.৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান কার্যালয়ের বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে গত বছর পর্যন্ত অধিদপ্তরের এক হাজার ২৭৭ থেকে তিন হাজার ৫৯ জনে উন্নীত করা হয়েছে জনবল। অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের ২৫টি কার্যালয় থেকে ৬৪টি জেলা কার্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে টেকনাফে স্থাপন করা হয়েছে একটি বিশেষ জোন। বিগত ১২ বছরে এক থেকে দশম গ্রেডের ৭৪ জন কর্মকর্তা এবং ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের ৫৫৯ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সহকারী প্রসিকিউটর ৪৫টি, সিপাই ৪৯১টি, ওয়ারলেস অপারেটর ৪৩টি এবং অফিস সহায়ক ৫৫টি পদসহ মোট ৬৩৪টি শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৯-২০ পর্যন্ত সময়ে মোট রাজস্ব আদায় করেছে ৭৫৪,১৮,০০,৪৪২/৫০ টাকা। চালু করা হয়েছে হটলাইনও।

অধিদপ্তর জানায়, নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সুবিধাসহ বর্তমানে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রটি ১২৪ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। বিভাগীয় তিনটি নিরাময় কেন্দ্রকে ২৫ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ, বিভাগীয় শহরে রাসায়নিক পরীক্ষাগার নির্মাণ ও ৪১টি জেলায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া অধিদপ্তরের কর্মচারীদের কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য চালু করা হয়েছে ফিল্ড ফোর্স লোকেটর। এ ছাড়া মাদকবিরোধী গণসচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অধিদপ্তরের নিরোধ শিক্ষা অধিশাখা।

image_pdfimage_print