
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : স্পেনের সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যাশিত জয় পেয়েছে সমাজতান্ত্রিক দল সোশ্যালিস্ট পার্টি। তবে সরকার গঠনে ৩৫০টি আসনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ১৭৬টি আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। তাই ‘জোট সরকার’ গঠনে উদ্যোগী হতে হবে সোশ্যালিস্ট পার্টিকে।
কিন্তু এ প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে নানা হিসেব নিকেষ ও জটিলতা। প্রায় সমমনা দল উনিদাস পদেমস এর প্রাপ্ত ৪২টি আসন যোগ করে আরো ১১টি আসনের জন্য হাহাকার থাকছেই সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা পেদ্রো সানচেজের।
অভিবাসন বান্ধব দল হিসেবে পরিচিত সোশ্যালিস্ট পার্টির বিজয়ে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা উৎফুল্ল। অভিবাসন আইন শিথীল করার পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসীরাও বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন বলে তাদের অভিমত।
নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট ও আসন সংখ্যা
২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে দেশটির মোট ভোটারের ৭৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ জনগণ ভোট প্রদান করেছেন। ফলাফলে পেদ্র সানচেজের দল সোশ্যালিস্ট পার্টি পেয়েছে ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট (১২৩টি আসন), পাবলো কাসাদোর পপুলার পার্টি পেয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট (৬৫টি আসন)। আলবার্ট রিভেরার নেতৃত্বে সিউদাদানস পেয়েছে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট (৫৭টি আসন), পাবলো ইগলেসিয়ার উনিদাস পদেমস ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট (৪২টি আসন), সান্তিয়াগো আবস্কালের নেতৃত্বে ভক্স পেয়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট (২৪টি আসন)।
নির্বাচন পরবর্তী প্রধান দুই দলের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হবার পর সর্বোচ্চ আসন পাওয়া সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা পেদ্র সানচেজ হাজারো কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, সোশ্যালিস্ট পার্টি এ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে অতীতের পরাজয়কে ভুলে ভবিষ্যতকে জয় করতে চায়। তিনি স্পেনের জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তার দলকে ভোটে নির্বাচিত করার জন্য।
অন্যদিকে বিরোধী দল পপুলার পার্টির নেতা পাবলো কাসাদো নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হবার পরপরই টেলিফোনে সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা পেদ্র সানচেজকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় আশা প্রকাশ করেন যে স্বাধীনতাবাদী দলগুলোর সমর্থন ছাড়াই সোশ্যালিস্ট পার্টি সরকার গঠন করবে।
সরকার গঠনে সম্ভাব্য জোট
সর্বোচ্চ আসন পেলেও সরকার গঠনে এখনো সংশয় রয়েছে সোশ্যালিস্ট পার্টির। বামপন্থী দল উনিদাস পদেমস এবং কয়েকটি ছোট ছোট দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সোশ্যালিস্ট পার্টির। অন্যদিকে ডানপন্থী দল পপুলার পার্টির সরকার গঠন প্রায় অসম্ভব। মধ্যম ডানপন্থী দল সিউদাদানস এবং কট্টর ডানপন্থী দল ভক্স মিলে মাত্র ১৪৭ টি আসন হয়। কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাবাদী দলগুলোর সমর্থন নেই পপুলার পার্টিতে।
স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ‘এল পাইস’ এর ২৯ এপ্রিল এ প্রকাশিত বিশ্লেষণ সংবাদে সরকার গঠনে কয়েকটি সম্ভাব্য জোটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সোশ্যালিস্ট পার্টি (১২৩ আসন) ও উনিদাস পদেমস (৪২ আসন) এর আসন যুক্ত করে সরকার গঠনে যে ১১ আসনের প্রয়োজন, সেগুলো স্বাধীনতা বিরোধী দল অথবা বিকল্প হিসেবে স্বাধীনতাবাদী দলের সাথে জোট করে সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রথম পছন্দ হতে পারে সোশ্যালিস্ট পার্টি (১২৩ আসন), উনিদাস পদেমস (৪২ আসন), পার্তিদো ন্যাসিয়োনালিস্টা ভাস্কো পিএনভি (৬ আসন), কানারিস কোয়ালিশন সিসিএ-পিএনসি (২ আসন), ভালেন্সিয়ার কম্প্রমিস পার্টি (১আসন) ও কান্তাবিয়া রিজিওনাল পার্টি (১ আসন)। এ দলগুলো মিলে ১৭৫ আসন হয়। যদিও সরকার গঠনে আরো ১টি আসন প্রয়োজন পড়ে।
অন্যদিকে সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা পেদ্র সানচেজের বিকল্প পছন্দ হিসেবে জোট হতে পারে- সোশ্যালিস্ট পার্টি (১২৩ আসন), উনিদাস পদেমস (৪২ আসন), পিএনভি (৬আসন), সিসিএ -পিনএনসি (২আসন), কম্প্রোমিস (১আসন), ইআরসি (১৫ আসন), খুন্ত্স পার কাতালোনিয়া (৭আসন), ইএইচ বিল্দু (৪ আসন)।
তৃতীয় বিকল্প হতে পারে সোশ্যালিস্ট পার্টি (১২৩ আসন) ও মধ্যম ডানপন্থী দল সিটিজেন্স বা সিউদাদানস (৫৭ আসন)। এ দুই দল মিলে ১৮০ আসন হয়; যা সরকার গঠনে প্রয়োজনী ১৭৬টি আসন থেকে ৪টি আসন বেশি।
এ হিসেবটা সহজ হলেও এ দুই দলের মধ্যে যে সমঝোতা হচ্ছে না, নির্বাচনের পূর্বে যেমন আঁচ করা গেছে; তেমনি নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরও প্রতীয়মান হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্বে সিউদাদানোস দলের প্রধান আলবার্ট রিভেরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রধান পেদ্র সানচেজের সাথে কখনো সমঝোতা বা লেনদেন হবে না।
অন্যদিকে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর মাদ্রিদে সোশ্যালিস্ট পার্টির অফিসে হাজারো সমর্থকের মিছিলে ধ্বনিত হয়- ‘রিভেরার সাথে নয়’। সানচেজও তখন সমর্থকদের বলেন, ‘এটা পরিষ্কার’।
সোশ্যালিস্ট পার্টির বিজয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা উৎফুল্ল
নির্বাচনের পূর্বে অভিবাসন নীতিতে সোশ্যালিস্ট পার্টি ক্রমবর্ধমান অভিবাসন প্রবাহকে সহজতর করতে সর্বোচ্চ মানবাধিকারকে সম্মান জানানোর কথা বলেছে। তাই এ দলটির কাছে অভিবাসীদের প্রত্যাশাও বেশি। সোশ্যালিস্ট পার্টির জয় হলেও কোন কোন দলকে সাথে নিয়ে জোট সরকার করছে দলটি- এ নিয়ে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও প্রশ্ন বিরাজ করছে।
স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি বনি হায়দার মান্না বলেন, সোশ্যালিস্ট পার্টি অভিবাসী বান্ধব দল হিসেবে পরিচিত। অতীতে আমরা দেখেছি, এ দলটি যখন সরকার পরিচালনা করে, তখন অভিবাসীদের সুযোগ সুবিধার পরিধি বৃদ্ধি পায়। জোটগত সরকার গঠন হলেও অভিবাসীদের বিশেষ দৃষ্টিতে দেখবেন সোশ্যালিস্ট পার্টি প্রধান পেদ্র সানচেজ- এমনটি আমরা প্রত্যাশা করতেই পারি।
মানবাধিকার সংগঠন ‘ভালিয়েন্তে বাংলা’ এর সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন বলেন, সোশ্যালিস্ট পার্টির বিজয়ে আমরা আনন্দিত। ২০০৫ সালে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার অভিবাসীদের সহজ শর্তে বৈধতা প্রদান করেছিল। এবারো আমরা প্রত্যাশা করি, সোশ্যালিস্ট পার্টি জোটগতভাবে ক্ষমতায় আসলেও অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেবে।