
এক. ভালো মানুষ তৈরি করা। দুই. ভালো মানুষকে সংগঠিত করা।
সমাজের অবনতি শুধু খারাপ মানুষের জন্য ঘটে না। এর পেছনে ভালো মানুষের নিষ্ক্রিয়তাও দায়ি। তাই এখনো অসংখ্য অদম্য ভালো মানুষ জেগে আছেন নতুন স্বপ্ন বুননের জন্য। আর তখনই একটি দেশ ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করে।
সময়টা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের । সবার হাতে আছে স্মার্টফোন। ফেসবুক আইডিও আছে সবার। তবে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতায় তার অপব্যবহার অনেকেই করেন। মানুষকে ফাঁদে ফেলতে ফেসবুকের চেয়ে ভালো মাধ্যম আর নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ভালো কাজে ব্যবহার করে দেশ ও দশের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায় কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায় তারই একটা উদাহরণ ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক আলোচিত নাম। ইতোমধ্যে তিনি স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন । তাঁর বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন লাইভ করলে কয়েক লক্ষাধিক ফলোয়ার লাইক ও কমেন্ট করেন এবং সুমনের সচেতনতামূলক বার্তাগুলো ছড়িয়ে দেন।
একটা ঘটনা দিয়েই শুরু করা যাক। নরসিংদী থেকে রাতে ঢাকা ফেরার পথে হঠাৎ রাস্তার মাঝে বিদ্যুৎতের খুঁটি দেখে ফেসবুক লাইভে আসেন সুমন। রাত পোহাতে না পোহাতেই তা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং দ্রুত রোড় থেকে খুঁটি সরিয়ে রাস্তার পাশে স্থাপন করেন। ফলে ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা হাজারো মানুষের ভোগান্তির অবসান হয়। নতুন দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় অনেক মানুষ।
কাঁটাবনে বালি ফেলে রাস্তা দখল, গাড়ী পার্কিং, মগবাজার মালিবাগ ফ্লাইওভারের অব্যবস্থাপনার কথাও সবার মাঝে তুলে ধরেন। সমাজের নানা সমস্যা খুঁজে খুঁজে প্রতিনিয়ত তিনি ফেসবুক লাইভে নিয়ে আসছেন। চলে যাচ্ছেন এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। বিভিন্ন সময় স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে নিজের জীবনের কথা শেয়ার করছেন। কিভাবে সুমন থেকে ব্যারিস্টার সুমন হওয়া যায় শুনাচ্ছেন সেই গল্প।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে সমাজ সেবা কাজটা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এমন কাজ করছেন। ব্যক্তিগত অর্থায়নে তার নিজ এলাকা হবিগঞ্জে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ টি রাস্তা সংস্কার, একটি রাস্তা নির্মাণ এবং ১৯ টি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেছেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় সঙ্গী হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তৃণমূল থেকে শুরু করে উপরতলা এমনকি সর্বোচ্চ আদালতও বাহাবা দিয়েছেন তাকে, দিয়েছেন সতর্ক থাকার পরামর্শ। তার কাজকে যে সবাই প্রসংশা করেন এমনটাও নয়। যাদের দল ও মতের সঙ্গে অমিল রয়েছে, তারা বলছেন এসব লোক দেখানো কাজ। তবে গুটিকয়েক ব্যক্তির কথায় ব্যারিস্টার সুমন থেমে থাকার ব্যক্তি নন।
এ প্রসঙ্গে সুমনের অভিমত, ‘আমি নেতা হবার জন্য কাজ করি না। মানুষের জন্য কাজ করি। আমার কাজের সাফল্য দেখে সারা বাংলাদেশে এমন হাজারো সুমন কাজ করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন । তারা কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে এটাই আমার সফলতা। আমি যে পরিবার থেকে ব্যারিস্টার হয়েছি আমার জন্য এটা অনেক বেশি। আমি অনেক পেয়েছি, এখন সমাজও দেশকে দিতে হবে। এই চিন্তা থেকে আমি কাজে নেমে গেছি।’
সুমন একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। যে দেশটাকে জন্ম দিতে গিয়ে তার বাবা অস্ত্র হাতে নিয়ে জীবন দিতে গিয়েছিলেন, সেই দেশটাকে সুন্দর ও বসবাসের যোগ্য করে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি । ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। হয়েছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির সদস্য। যুদ্ধাপরাধ মামলার প্রসিকিউটর হিসাবে দায়িত্বও পালন করছেন।
আলোচিত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর পর ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ওঠে। নিহত নুসরাতের পরিবারকে সহযোগিতা না করার অভিযোগে উঠে তার বিরুদ্ধে। সেই ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিজে বাদী হয়ে মামলা করেন সুমন। মামলাটি আদালতও গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত।
ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ’সহ দেশের কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন তিনি। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পঞ্চগড়ে কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিটের আবেদন করে ব্যারিস্টার সুমন।
এসব ভালো কাজ করার পরও দিন দিন তার শত্রুর সংখ্যা বাড়ছে। যাদের হালুয়া রুটিতে বাগড়া দিচ্ছেন তিনি, তারাই ব্যারিস্টার সুমনকে শত্রু মনে করছেন। যারা ১০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ করতে সরকারের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা নিয়েছেন, তার পাশেই সুমন ১ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ৩ লক্ষ টাকায় নির্মাণ করেছন। তখন ঐ সমস্ত রাস্তা চোরদের ধরতে ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলতে হয় না, কাজের কারণেই তাদের মুখোশ খুলে যায়। যারা দলের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি টাকা লুটেপুটে খাচ্ছেন, তাদের শত্রু ব্যারিস্টার সুমন হবেন আর এটাই তো স্বাভাবিক।
ব্যারিস্টার সুমনের ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার । প্রধানমন্ত্রকে তিনি বলতে চান, ‘আমি এমপি, মন্ত্রী কিছুই হতে চাই না। আমাকে শুধু বাধাহীনভাবে কাজ করতে দিন।’
সুমনের মত মানুষদের আমাদের সমাজে-দেশে খুব বেশি দরকার। যারা প্রতিনিয়ত সিস্টেমকে ধাক্কা দিবেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার অসঙ্গতিগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দেবেন। নাগরিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করবেন।
হয়তো একজন ব্যারিস্টার সুমনকে দিয়ে বড় কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না কিন্তু ১০০ জন সুমনকে দিয়ে দেশটাকে বদলে দেওয়া সম্ভব। নিশ্চয়ই।