
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পক্ষে আদালতে দাঁড়ালেন ৪০ জন আইনজীবী।
রোববার সকালে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানিতে অংশ নেন তারা। শুনানি শেষে মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন বিচারক।
এর আগে মঙ্গলবার গ্রেফতারের পর বুধবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করলে ওইদিন তার পক্ষে কোনও আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
মিন্নিকে নিয়ে রোববার দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। আদালতের আদেশের পর সাংবাদিকদের তারা বলেন, প্রকৃত আসামিদের বাঁচানোর জন্যই পরিকল্পিতভাবে মিন্নিকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ভয়ভীতি এবং চাপ প্রয়োগ করে মিন্নিকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে।
আদালতে ৪০ আইনজীবী মিন্নির জামিন প্রার্থনা করেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীসহ প্রতিপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন।
মিন্নির পক্ষের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী আসলাম জানান, বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নিকে নির্দোষ দাবি করে জামিন আবেদন করা হয়। এ সময় মিন্নি অনুপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আদালতকে জানানো হয়, মামলার মূল এজাহারে মিন্নি একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিও পর্যালোচনায় মিন্নিকে নির্দোষ বলে প্রতীয়মান হয়। আদালত শুনানি শেষে জানিয়েছেন- এ ঘটনায় মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং অন্য দুই আসামি রিফাত ফরাজী (২ নম্বর আসামি) ও রাব্বি আকন (৬ নম্বর আসামি) ঘটনায় মিন্নির সম্পৃক্ততা আছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাই মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করা হলো।
আসলাম জানান, মিন্নির পক্ষে তিনি নিজে, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু, সিনিয়র আইনজীবী কমলকান্তি দাস, গোলাম মোস্তফা কাদেরসহ বরগুনার ৩০ আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দু’জন, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সাতজন এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের একজন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নেন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সঞ্জীব দাস, অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজসহ প্রায় ৪০ জন আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে এরই মধ্যে মিন্নিসহ ১৪ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। এ অবস্থায় আসামি জামিন পেলে মামলায় ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টির আশঙ্কা আছে এবং তদন্ত বিঘ্নিত হবে। তাই এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। আদালতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা শুনানি হয়।
জামিন নামঞ্জুরের প্রতিক্রিয়ায় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন আবেদন করা হয়েছে। আদালত জামিন নামঞ্জুর করলেও তিনি আইনের প্রতি আস্থাশীল। তবে নয়ন বন্ডকে যারা সৃষ্টি করেছে, জামিন না হওয়ার পেছনে তাদের হাত থাকতে পারে।
তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন মহলের প্রভাবে মামলার সাক্ষীই আজকে আসামির কাঠগড়ায়। একটি কুচক্রীমহল খুনিদের সঙ্গে আঁতাত করে তার মেয়েকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।