
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : অবিলম্বে নয়, আজই কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার (২৭ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা বিএনপি এবং সারা দেশের মানুষের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই করা একজন গুরুতর অসুস্থ বয়স্ক মহিয়সী নারীকে নিয়ে এবার প্রতিহিংসাপরায়ণতার রাজনীতি বন্ধ করুন। অনেক হয়েছে, এবার থামুন। অবিলম্বে নয়, আজই বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসার সুযোগ দিন।’
বেগম জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মা, বাংলাদেশের আপামর জনতার প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাঁর জীবন আজ অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার রোষানলে বিপন্ন। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মিথ্যা মামলার সাজানো প্রহসনের রায়ে কারাগারে যাওয়ার সময় সুস্থ সবল অবস্থায় পায়ে হেঁটে গেছেন। এখন তিনি হুইলচেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারছেন না। ইনসুলিন নেয়ার পরও তাঁর ‘ব্লাড সুগার’ নামছে না। ডায়াবেটিস কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এটা অব্যাহত থাকলে যেকোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তিনি এখন একদমই হাঁটতে পারছেন না। তাঁর চরম অবনতি হওয়া স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর পরিবার, আমরা, দেশবাসী সবাই সীমাহীন উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই লন্ডনে বলেছেন, ‘তারেক রহমান বাড়াবাড়ি করলে সারাজীবন তাঁর মা জেলে থাকবেন’। সুতরাং বেগম জিয়া জেলে আছেন শেখ হাসিনার কারণে, অন্যকোন কারণই নেই। জেলে রেখে দেশনেত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়াই মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য। পথের কাঁটা সরাতে শেখ হাসিনা নির্বিবেক।’
সরকার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ধামাচাপা দিতে সরকারি যন্ত্রকে ব্যবহার করছে যথেচ্ছভাবে এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মরণঘাতী ডেঙ্গু জ্বর মহামারি আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে-সারা দেশে কমপক্ষে ৯ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ মশাবাহিত রোগে অসুস্থ হয়েছে। সরকার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ধামাচাপা দিতে সরকারি যন্ত্রকে ব্যবহার করছে যথেচ্ছভাবে। রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বলতে গেলে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কারণ কোনও জায়গাতেই বেড খালি নেই। কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। হাসপাতাল থেকে অনেক রোগীকে ফেরত দেয়া হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের হিসাবে শুক্রবার (২৬ জুলাই) ২৪ ঘণ্টায় ৩৯০ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই ৩৮৬ জন। এডিস মশাবাহিত এ রোগে এপর্যন্ত অন্ততঃ ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিসাবানুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা হবে আরও বেশি। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে এই ডেঙ্গু জ্বরে মাত্র ৮ জন রোগী মারা গেছে। এই ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন নগরবাসী। ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের যখন ত্রাহি অবস্থা তখন মধ্যরাতের ভোট চুরির সরকার এনিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছে। মশা নিধনের কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর গবেষণায় যে ওষুধ অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো দিয়েই চলছে ঢাকার দুই সিটির মশক নিধন কার্যক্রম। আর চরম ব্যর্থ মন্ত্রী-মেয়ররা হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্রের মতো প্রলাপ বকছেন।’
তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, গলাকাটার গুজবে জড়িত সন্দেহে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তার ৭০ ভাগ লোক বিএনপি’র নেতাকর্মী। পুলিশ বলছে এই গুজবটি দুবাই থেকে ছড়ানো হচ্ছে, তারা বেশকিছু ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দিয়েছে। তাহলে বিএনপি নেতাকর্মীরা কিভাবে জড়িত হলো। আসলে আওয়ামী লীগ পেশাদার মিথ্যাবাদী দল। এরা যে কতবড় জলজ্যান্ত মিথ্যা কথা বলার দল তার একটি নমূনা উল্লেখ করতে চাই। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে-২০০৮ এর নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন-১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন, কিন্তু ২০১০-১১ সালে চালের দাম যখন ৪৫-৫০ টাকা তখন ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর অঙ্গীকারের কথা বিরোধী দলসহ গণমাধ্যমের কলামিষ্ট-সাংবাদিকরা বক্তব্য-বিবৃতি ও লেখানির মাধ্যমে তা প্রচার করলে সেই অঙ্গীকারের কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সরাসরি অস্বীকার করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাড.নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।