
বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : ‘চীনা ভাইরাস’ নিয়ে আতঙ্কের জোড়া ছবি দেখল ভারতের কলকাতা। চীনের এক তরুণী ‘নোভেল করোনাভাইরাসে’ (এনসিভি) আক্রান্ত কি না, তা নিয়ে টানাপড়েন চলল রবিবার রাত থেকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা। সোমবার সন্ধ্যায় তাতে নয়া মাত্রা যোগ করল শহরের হাসপাতালে থাইল্যান্ডের এক নারীর মৃত্যু। শেষ পর্যন্ত অবশ্য চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের লক্ষণ নেই চীনা তরুণীর শরীরে। থাইল্যান্ডের মৃত নারীও ওই ভাইরাসে আক্রান্ত নন বলেই মনে করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের নাগরিক সুরিন নাকতোই (৩২) গত ১৮ জানুয়ারি থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। তিন দিন পর প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে রুবি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ভর্তি হওয়া মাত্র সুরিনকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। এদিন বিকাল ৫টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। নভেম্বরে ব্যবসার কাজে কলকাতায় এসেছিলেন সুরিন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থাইল্যান্ড কনস্যুলেটের মাধ্যমে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। মৃতার দেহের নমুনা নিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমিকভাবে ওই নারী নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে মনে হচ্ছে না। নমুনা পরীক্ষার পর বিষয়টি স্পষ্ট হবে।”
জানা গেছে, রবিবার গভীর রাতে চীনের নাগরিক আঠাশ বছরের এক তরুণীকে নিয়ে তার বন্ধুরা অ্যাপোলো গ্লেনেগলস হাসপাতালে যান। পরে তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নেপালে একজন আক্রান্তের খোঁজ মেলার পর থেকে ভারতের স্বাস্থ্যভবন একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু চীনা নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন আশঙ্কায় ঘুম ছুটে যায় দেশটির স্বাস্থ্যভবন কর্মকর্তাদের।
আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরিই ছিল। তড়িঘড়ি তরুণীকে সেখানে ভর্তি করানো হয়। এদিন সকালে দেশটির স্বাস্থ্যসচিব প্রীতি সুদানের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ, স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমারের পাশাপাশি যোগ দেন দফতরের পদস্থ কর্তারা।
বৈঠক শেষে আইডি হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যশিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পাশাপাশি এনসিভি’র মোকাবিলায় কী ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তা পরিদর্শন করেন তিনি। এরই মধ্যে তরুণীর রোগের লক্ষণ নিয়ে কথা বলতে পুনের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, রোগের ইতিবৃত্তান্ত জানতে গিয়ে ভাষাগত সমস্যার মুখে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই তরুণী ইংরেজিতে তেমন কথা বলতে পারেন না। এ দিকে তরুণীকে ভর্তি করানোর পর তার বন্ধুরাও বেপাত্তা হয়ে যান। এই পরিস্থিতিতে চীনের কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দোভাষীর খোঁজ চলে। আপাতত জানা গেছে, ওই তরুণীর নাম, স্নো হুয়াইন।
হাসপাতাল সুপার আশিস মান্না জানান, মাস ছয়েক আগে বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন আঠাশ বছরের এই তরুণী। ২৪ জানুয়ারি কলকাতায় পৌঁছন তিনি। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, এমন কোনও লক্ষণ নেই। তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
আইডি’র মেডিসিন বিভাগের প্রধান তপন বিশ্বাস বলেন, “মাথাব্যথা, জ্বর এবং গায়ে র্যাতশ নিয়ে রোগী ভর্তি হন। তার তলপেটে অস্বস্তি রয়েছে, যা খাবারে বিষক্রিয়া থেকে হতে পারে।”
তবে রোগীর যাবতীয় পরীক্ষার রিপোর্ট পুনের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে পাঠানো হচ্ছে। সূত্র: আনন্দবাজার