Home অর্থনীতি অর্থ খাতের লুটেরাদের শুরু থেকে ধরতে বাধা কোথায়?

অর্থ খাতের লুটেরাদের শুরু থেকে ধরতে বাধা কোথায়?

36
0
SHARE

দেশের অর্থনীতি বতমানে নাজুক অবস্থায় রয়েছে বলে খোদ অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা ভালো নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। দেরীতে হলেও সঠিক তথ্যটি অর্থমন্ত্রীর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে, যা শতভাগ সত্য। গুরুত্বপূর্ণ খাতটিকে বাঁচাতে হলে হলমার্ক শুধু নয়, ব্যাংক পরিচালনার পর্ষদ থেকে শুরু করতে হবে অভিযান।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে’ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সারা বিশ্বের কোনও দেশেই আমদানি-রপ্তানি সঠিকভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশের কিছু সেক্টরেও এর প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থাও খুব ভালো না।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কারণে সংসদে আমাকে গালি শুনতে হচ্ছে।’ আপনারা বলেন, এটা কি আমার জন্য হয়েছে। এ সময় ব্যাংকিং সেক্টরের বিষয়টিও তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলো যদি ভালো চলতো, তবে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করতে হতো না। ব্যাংক খাতে অনেক ‘মিস মেস’ হয়েছে।

অস্বীকারের উপায় নেই, আমাদের ব্যাংক খাত লুটেরাদের কবলে পড়ে অনেক আগেই ফোকলা হয়ে গেছে। সোনালী ব্যাংক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লোপাটের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের একজন প্রকাশ্যে টক শো করে বেড়ায়! যে একা সাড়ে তিন শ কোটির ভাগ পায় বলে চাউর আছে।

এই চিহ্নিত লুটেরা-ডাকাতরা যখন প্রকাশ্যে জাতিকে জ্ঞান দেওয়ার মওকা পেয়ে যায়, তখন পর্দার অন্তরালের লুটেরারা সাহস পেয়ে গেছে ব্যাংকিং খাতকে ফোকলা করে দেওয়ার। ফলে লুটের ভাইরাসে আক্রান্ত হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। আর টাকা চলে যায় আন্তর্জাতিক জুয়ার আসরে। ওই ডাকাতকে ধরা হলে যা হতো না বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

গণমাধ্যমে প্রায়ই খবর শিরোনাম হয় অর্থ পাচারের দিক দিয়ে আমাদের দেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এ টাকা ব্যাংক থেকেই তো উঠানো হয়। আর পাচার হয় ব্যাংকিং চ্যানেলসহ নানাভাবে। এ টাকা যারা পাচার করেছে, তারা কারা এবং উৎস কী- তা জানা বা উদ্ধার করা তো কঠিন বিষয় নয়। এগুলোর রহস্য উদঘাটন জরুরি।

অর্থ খাতের আরেকটি বড় মার্কেট শেয়ারবাজার ১৯৯৬ সাল থেকে এক রকম অবাধে লুট হয়ে আসছে। লুটেরারা চিহ্নিত হলেও বিচার হয়নি, হচ্ছে না। অথচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পতুর হয়ে গেছে। কয়েকজন আত্মহত্যাও করেছে। আজও শেয়ারবাজার নিয়ে সর্বনাশা খেলায় মত্ত কথিত গেমলাররা। ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কার্যকর উদ্যোগ নেই।

একটি ব্যাংকের টাকা হাওয়া হয়ে গেছে, আর খেসারত আদায় না নিয়ে নামটি বদল করা হয়েছে মাত্র। অনেকটা বিডিআরের নাম বদলের মতো অবস্থা। মূলে না গিয়ে এভাবে আশকারা দেওয়ায় ব্যাংকিং ও অর্থ খাত লুটেরাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। মওকা পেয়ে দুষ্টচক্র আখেরি কামাইয়ের মধ্য দিয়ে জনগণের অর্থ নিজের মতো করে হাতিয়ে নিচ্ছে।

আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যে হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংক দিয়ে লুটপাটের সূত্রপাত, সেখান থেকে অর্থাৎ হলমার্কের পাশাপাশি তৎকালীন সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও একইভাবে মামলায় যুক্ত করা না হলে ব্যাংক-অর্থ খাতের চলমান দুর্নীতি ও পাহাড়সম অনিয়মের অবসান হবে না।

ব্যাংকিং তথা অর্থ খাত যে দেশী-বিদেশী মাফিয়া চক্রের বলে পড়েছে, চলে গেছে অনেকটা দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে, এ খাতে ভর করেছে আন্তর্জাতিক বাজিগররা- অর্থনীতিবিদরা এসব আশঙ্কার কথা অনেক আগেই বলেছেন। যার বাস্তব চিত্র এখন উঠে আসছে দেশের অর্থ খাতের অভিভাবক অর্থমন্ত্রীর মুখে।

দেশের সাবিক উন্নয়নে অর্থ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এই অর্থের জোগানদার এ দেশের সাধারণ মানুষ- প্রবাসী শ্রমিক-কৃষক-শ্রমিক-মুটেমজুর। এদের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কোরো নেই। তাই অর্থ খাতে গতি আনতে লুটের অর্থ আদায়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা এবং লুটের পথগুলো বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অতীব জরুরি।

image_pdfimage_print