Home ব্রেকিং বিশ্ববিদ্যালয় আছে নেই কোষাধ্যক্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় আছে নেই কোষাধ্যক্ষ

44
0
SHARE

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো টাকা নিজের কাজে ব্যবহার করার এখতিয়ার নেই। এখতিয়ার না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করেই নানাভাবে রীতিমতো অর্থের পাহাড় গড়ে তুলছেন অনেকেই। এ যেন পৈতৃক বাগানবাড়ি। নতুন মোড়কে পুরোনো ব্যবসারই আরেক রূপ। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর নেই কোষাধ্যক্ষ। কোনোটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

কোষাধ্যক্ষ না থাকায় বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয় না। এদের কেউ কেউ আবার হিসাব জমা দেয় কোনো ধরনের নিরীক্ষা ছাড়াই। বছর বছর শিক্ষার্থীরা আউটার ক্যাম্পাসে যে কোটি কোটি টাকা দেয় তার হিসাব দেখায় না বেশির ভাগ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে পর্দার আড়ালেই থেকে যায় শিক্ষার্থীদের দেয়া কোটি কোটি টাকার টিউশন ফিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য।

উচ্চশিক্ষার বর্ধিত চাহিদা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মেটানো সম্ভব না হওয়ার কারণে প্রায় তিন দশক আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। মাত্র তিন দশক আগের এই যাত্রায় বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক হলেও শিক্ষার গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাতে গোনা কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই চড়া দামে সনদ বিক্রির বৈধ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগেরই বছরের পর কোষাধ্যক্ষ না থাকলেও চলছে বাজেট, বরাদ্দ আর নিরীক্ষার নামে রমরমা সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী (২৯) ১ এবং (৩৩) ১ ধারায় প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন কর্মকর্তা হিসেবে কোষাধ্যক্ষ থাকার কথা থাকলেও বছরের পর বছর অদৃশ্য কারণেই এসব পদ ফাঁকা থাকছে।

আইন বলছে, ট্রেজারার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করবেন এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা এবং হিসাবের জন্য দায়ী থাকবেন।

যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর কোষাধ্যক্ষই নেই সেখানে শৃঙ্খলা, বাজেট প্রণয়ন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা কতটা গতিশীল সেখানে প্রশ্ন থেকেই যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি আর্থিক বছরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করার কথা।

পাশাপাশি উল্লিখিত হিসাব প্রত্যেক আর্থিক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানসমূহের (সিএ ফার্ম) মধ্য থেকে সরকার মনোনীত একটি ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করতে হবে এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরবর্তী আর্থিক বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কমিশনে পাঠাতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ এ পদ ফাঁকা থাকায় বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে গড়িমসি করছে বলে জানা গেছে ।

এদিকে ট্রেজারার পদে নিয়োগের জন্য অন্তত স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ অন্যজন ১৫ বছরের অধ্যাপনা, প্রশাসনিক বা আর্থিক ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আইন থাকলেও কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দসই লোক নিয়োগ দিয়ে নিজেদের মতো করেই পরিচালনা করছেন বলে প্রমাণ মিলেছে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেন জানান, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোষাধ্যক্ষ প্রাপ্তির আবেদন আসছে আমরা সাথে সাথেই তার সমাধান দিতে চেষ্টা করছি। আবেদন এসেছে অথচ আমরা সময় ক্ষেপণ করছি এমন নজির নেই।

দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ না থাকায় কী ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘আর্থিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ থাকা জরুরি। তবে এই পদে নিয়োগ দিতে ইউজিসি থেকেই সময়ক্ষেপণ হয়। শূন্যপদ পূরণের জন্য আবেদন করলেও গড়িমসিতেই মাসের পর মাস কেটে যায়। যে সব প্রতিষ্ঠানে কোষাধ্যক্ষ নেই ইউজিসি এসব তথ্য জানার পরও কেন নিশ্চুপ থাকে? এসব অনিয়মের জন্য ইউজিসির দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদের মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে বলেই দিনের পর দিন কোষাধ্যক্ষ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় আছে অথচ কোষাধ্যক্ষ নেই এমন ৪৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে রয়েছে— ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনা, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, রূপায়ন কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মর্ডান ইউনিভার্সিটি, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স, আহসানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা খান বাহাদুর আহছানুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মাখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বরিশাল, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটি। এদিকে মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে কোষাধ্যক্ষ পায়নি এমন ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে রয়েছে— ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিএনএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

image_pdfimage_print