
পরিক্রমা ডেস্ক : ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অন্যান্য কারিগরি পেশাজীবীদের ন্যায় চাকরির প্রাথমিক নিযুক্তিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে উন্নয়ন উৎপাদন ঘনিষ্ঠ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে। নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৪/৫টি স্মারকপত্রের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে অব্যাহতভাবে নির্দেশনার পরও দীর্ঘ ১০ বছরেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়ন না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়ন না করে বরং কারিগরি আমলাদের প্ররোচনায় একের পর এক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বিদ্বেষী কালাকানুন প্রণয়ন করা হচ্ছে। যার সর্বশেষ সংযোজন নির্মাণ কাজে জনগণকে জিম্মি করে ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অধিকারহরণে ২/৩টি জনস্বার্থবিরোধী ধারা সম্বলিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোর্ড (বিএনবিসি)’র গেজেট প্রকাশ। তারা জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ থাকার পরেও কিভাবে বিএনবিসিতে জনস্বার্থ বিরোধী ধারা উপধারা সংযোজন হলো। দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের যে পাঁয়তারা চলছে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট জানতে চান—কার স্বার্থে প্রচলিত ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সকে ৩ বছরে রূপান্তরের ন্যাক্কারজনক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বক্তাগণ বলেন, সরকারের মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা প্রতিক্রিয়াশীলচক্র নানান কৌশলে ৫লক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ৪ লক্ষ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এর ফলে কোন ধরনের সংকট সৃষ্টি হলে তার জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দায়ী করা যাবে না। তারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাব্যবস্থা রক্ষায় ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রকৌশলীদের সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে সংগ্রাম পরিষদের ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষকগণ বিএনবিসিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অবমূল্যায়ন ও অধিকারহরণসহ জনস্বার্থবিরোধী সংক্রান্ত সংজ্ঞা ও বিভিন্ন ধারা/উপধারা সংশোধন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্পেশাল ইনক্রিমেন্ট প্রদান, পদোন্নতির কোটা ৫০% এ উন্নীতকরণ, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, পেট্রোবাংলা কর্পোরেশন ও বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানিতে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার অনুপাত ১:৫ রেখে জনকল্যাণে অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন, সকল বিদ্যুৎ কোম্পানিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টিভিইটি প্রতিষ্ঠানসসমূহের শিক্ষক স্বল্পতা, শ্রেণীকক্ষ, ল্যাব, ওয়ার্কসপ সংকটসহ শিক্ষকদের পদোন্নতি ও STEP প্রকল্পের শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ, বেতন ভাতা প্রদান এবং ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ভাতা বৃদ্ধিসহ ২৯টি ইমার্জিং টেকনোলজির বেকার ডিপ্লোমা গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ (৩১ জুলাই) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে প্রায় ৫ সহস্রাধিক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র শিক্ষকগণ অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয় এ সমাবেশের পরও যদি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতি ও নির্দেশনা অনুযায়ী ৪ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আগামীতে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সমাবেশ থেকে ৪ দফা ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আব্দুল কুদ্দুছ। সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মোঃ ফজলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আইডিইবি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ শামসুর রহমান, কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মির্জা এটিএম গোলাম মোস্তফা, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খবির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আব্দুল মোতালেব, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মোঃ রেহান মিয়া, মোঃ কামরুজ্জামান নয়ন, আরিফুল ইসলাম শিমুল, মোঃ আব্দুল মান্নান, সৈয়দ মুন্তাসীর হাফিজ, বাপশিস ঢাকা পলিটেকনিক শাখার সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, মোঃ জাফর আলী সিকদার, মোঃ নাজিমুদ্দিন পাটওয়ারী, মোঃ মোবারক হোসেন, ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান ও সাইফুল আলম মোল্লা প্রমুখ। সমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ ফজলুর রহমান খান ও সদস্য সচিব মির্জা এটিএম গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি বাস্তবায়নে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব।