
বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা প্রতিবেদক :
ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। অধিনায়ক থাকা অবস্থায় নড়াইল-২ (নড়াইল সদর ও লোহাগড়া উপজেলা) আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলনেতা এখন জননেতা।
টাইগার ক্যাপ্টেন পেয়েছেন মোট ২,৭১,২১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ পেয়েছেন ৭,৮৮৩ ভোট। ২,৬৩,৩২৭ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন মাশরাফি। সব মিলে তিনি প্রতিপক্ষের চেয়ে ৩৪ গুণেরও বেশি ভোট পেয়েছেন।
গতকাল নড়াইল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোট কেন্দ্রে দুপুরে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন সহধর্মিণী সুমনা হক। নড়াইলের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে মাশরাফি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘নড়াইলে অধিকাংশ তরুণ ভোটার। তারা আমার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। অবশ্য সারা দেশেই তরুণ ভোটার অনেক বেশি। তারাই এবারের ভোটে ব্যবধান তৈরি করবে। আমার বিশ্বাস, সবাই গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’ মাশরাফির কথাই প্রতিফলন ঘটেছে।
নড়াইল-২ আসনে (নড়াইল সদর ও লোহাগড়া) মোট ভোট কেন্দ্র ১৪০টি। মাশরাফি বিন মর্তুজা ছাড়াও এই আসনে নির্বাচন করা অন্য প্রার্থীরা হলেন- ধানের শীষ প্রতীকে ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত ডা. এস এম নাসির উদ্দিন, আম প্রতীকে এনপিপি (ছালু) সমর্থিত মো. মনিরুল ইসলাম, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোট সমর্থিত মো. মাহাবুবুর রহমান ও তারা প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সমর্থিত ফকির শওকত আলী।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাশরাফি ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিতদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দূর্জয়। তিনি নির্বাচন করেছেন মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে। তিনি পেয়েছেন মোট ২,৫১,২৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল হামিদ ডাবলু পেয়েছেন ৫৬, ৪৪৭ ভোট।
সাবেক তারকা ফুটবলার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী খুলনা-৪ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন।
সাবেক ফুটবলার মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ভোলা-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু তিনি জিততে পারেননি। তার আসনে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নুরুন্নবী চৌধুরী। কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ফুটবলার সেলিম আলতাফ জর্জ।
এবারের নির্বাচনে তারকা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি ক্রীড়া সংগঠকরাও অংশ নিয়েছেন। সাবেক আইসিসি ও বিসিবি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল বরাবরের মতোই এবারও কুমিল্লা-১০ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের মনিরুল হক চৌধুরীও একজন ক্রীড়া সংগঠক। ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানে এক সময় জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ক্লাবের সঙ্গে এখনো যুক্ত আছেন। প্রধান দুই দলের প্রার্থীই ক্রীড়া সংগঠক। আবাহনী-মোহামেডান লড়াইটা জমে উঠেনি। বিপুল ব্যবধানে মনিরুলকে পরাজিত করেছেন মুস্তফা কামাল।
রাজশাহী-৬ আসন থেকে নির্বাচন করেছেন বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি, ঢাকা আবাহনী লি. এর পরিচালক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি ২ লাখ ভোটের বেশি ব্যবধানে এবারও বিজয়ী হয়েছেন।
বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে ব্যালট লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। এই আসন থেকে তার পিতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানও নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন।
বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ঢাকা-৯ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস নির্বাচন বয়কট করায় বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন সাবের হোসেনও। বাফুফের বর্তমান সহসভাপতি কাজী নাবিলও যশোর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন নৌকা প্রতীকে।
এছাড়াও নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন সাবেক অ্যাথলেট ও জাতীয় সংসদের হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি (গাইবান্ধা-২) থেকে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাফুফের সাবেক সহসভাপতি সামছুল হক চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১২) নৌকা প্রতীকে অংশ নিয়েছেন।
ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন আবদুস সালাম। অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাবেক এই সভাপতি ঢাকা-১৩ আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে টাঙ্গাইল-৫ থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়ে হকি ফেডারেশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউল্লাহ আল মুনির জিতেছেন। বর্তমান ফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের সাধারণ সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নীলফামারী-৪ আসন থেকে নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু জিততে পারেননি।
মঙ্গলবার ক্রীড়াঙ্গনের দৃষ্টি ছিল মাশরাফির দিকে। কেননা এর আগে জাতীয় দলের অধিনায়ক থাকা অবস্থায় আর কেউ নির্বাচন করেনি। হয়তো বিশ্বের ইতিহাসেই এমন ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই!
আগামী ২০১৯ সালে আইসিসি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে মাশরাফির নেতৃত্বেই খেলবে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে কোনো দলকে নেতৃত্ব দেবে সে দেশের জাতীয় সংসদের একজন সদস্য। এটা হয়তো বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেই একটা বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে।