
১৯৬৫ সনের সেপ্টেম্বর মাসে শামসুল আলম তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। ড. শামসুল আলম ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এম. এস.সি, ১৯৮৩ সনে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ অর্থনীতি এবং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সনে কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. আলম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতায় ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপনা জীবনে ড. আলম ২০০৮ সনে জার্মানির হোমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবেও কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন।
ড. আলম সর্বোচ্চ পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে পরপর চতুর্থ মেয়াদে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্টস বোর্ডে (চতুর্থ মেয়াদ), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে (চতুর্থ মেয়াদ), সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে (তৃতীয় মেয়াদে) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের (দ্বিতীয় মেয়াদে) সম্মানিত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অভ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ এর গভার্নিং বোর্ডের সদস্য হিসেবে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করছেন। শতবর্ষী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিচালিত ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. শামসুল আলম। ড. আলম অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত মাল্টি-ডাইমেনশনাল পোভার্টি পিয়ার নেটওয়ার্ক (MPPN-OPHI) এর বাংলাদেশ হতে স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছেন। ড. আলম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় মার্চ ২০০২ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫ পর্যন্ত পূর্ণকালীন প্রায় সাড়ে তিন বছর চাকুরিরত ছিলেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশে ১৪ মাস (২০০০-২০০১) সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় দৈনিকসমূহে উপসম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় গত চার দশকের অধিক সময় ধরে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী অসংখ্য কলাম লিখেছেন।
পঁয়ত্রিশ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা শেষে প্রেষণ ছুটিতে ড. শামসুল আলম ১ জুলাই ২০০৯ সনে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন এবং ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ১২ বছর কর্মরত ছিলেন। ড. শামসুল আলম ১৮ জুলাই ২০২১ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভূক্ত হন। ড. আলমের কর্মজীবন ২০২২ সনে ৪৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সৃষ্টির পর সদস্য হিসেবে ২০০৯ থেকে ড. আলম দীর্ঘতম সময়ের জন্য নিয়োজিত ছিলেন। ড. আলম ২০১৬ সনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান। ড. শামসুল আলম ২০১৪ সনের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ১০% কোটায় ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে প্রথম সিনিয়র সচিব পদ অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিব্যবসা ও বিপণন বিভাগে দীর্ঘ ৩৫ বছর সরাসরি অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন। প্লানিং কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদানের পূর্বে প্রফেসর আলম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। পরিকল্পনা কমিশনে তাঁর প্রাপ্ত প্রথম দায়িত্বের মধ্যে ছিল দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১), সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে সংশোধন পুনর্বিন্যাস করা। সংশোধিত সেই দলিল ‘দিন বদলের পদক্ষেপ’ জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে ২০১০-১১ বাস্তবায়িত হয়। রূপকল্প ২০২১ এর আলোকে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১), ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫), সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) ড. আলমের নেতৃত্বে ও অংশগ্রহণে প্রণীত হয়। পরিকল্পনা কমিশনে ড. আলমের কার্যকালীন সময়ে তাঁর অত্ত্বাবধান/ সম্পাদনায় বাংলাদেশে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিষয়ক ১৫ টি গ্রন্থ, এসডিজি বিষয়ক ২৫টি প্রতিবেদন ও মূল্যায়ন গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১১-২০২১) এবং বাংলাদেশের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র ড. আলমের নেতৃত্বে (২০১৫-২০২৫) প্রণীত হয়েছে। ড. আলমের অংশগ্রহণে ও নেতৃত্বে শতবর্ষি বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণীত হয়েছে (২০১৮)। রূপকল্প ২০৪১ ভিত্তিক বাংলাদেশ দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলে অনুমোদিত হয়েছে।সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে কার্যকালীন সময়ে তাঁর তত্ত্বাবধানে ও সম্পাদনায় এ পর্যন্ত ১২ বছরে ১২৪ টি মূল্যায়ন প্রতিবেদন, অধ্যয়ন ও গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
. ড. শামসুল আলম ২০১৮ সনে South Asian Network for Economic Modeling কর্তৃক বাংলাদেশে ‘Economist of Influence Award’ অর্জন করেন। অর্থনীতি বিষয়ক ড. আলমের গবেষণা গ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতি বিষয়ক দেশে বিদেশে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৬ টি। দেশ-বিদেশে প্রকাশিত পিয়ার রিভিউড জার্ণালে গবেষণা নিবন্ধ ৫৬ টি। কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে দক্ষতা ও অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ১৬তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০১৮ সনে ড. আলমকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। সরকার অনুমোদিত বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সোসাইটি ড. আলমকে “বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিপদক ২০১৮” তে ভূষিত করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন ২০১৮ সনে শিক্ষকতা ও গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য স্বঅর্থ ‘সম্মাননা এওয়ার্ড’ প্রদান করেন। ড. শামসুল আলম গবেষণা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক “রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট এওয়ার্ড ২০১৯” সম্মাননা অর্জন করেন। ড. শামসুল আলম অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় মুজিব বর্ষ ২০২০ এ বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ বেসামরিক রাষ্ট্রীয় পদক “একুশে পদক” প্রাপ্ত হন।
সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সরকারি দায়িত্ব পালনে ড. আলম বিশ্বের ৪৯ টি দেশ ভ্রমন করেছেন। ড. শামসুল আলম সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দশ বার প্রধানমন্ত্রির সরকারি সফরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় যোগদান করেছেন। ৭-১১ মে ২০১১ ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে এবং মে ২০১৬ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি জাপান সফরে ড. আলম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরসফর সঙ্গি ছিলেন। ড. আলমের পারিবারিক জীবনে স্ত্রী, দুই পুত্র সন্তান, ও দুই নাতনী রয়েছে। ড. আলমের জন্ম চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে ১৯৫১ সনের ১ জানুয়ারি।
২৪ মে ২০২২ তারিখ থেকে ড. শামসুল আলম, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর উপদেষ্টা পরিষদের সম্মানিত সদস্য হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।