Home ব্রেকিং একজন গুণী মানুষ ছিলেন আবু ছাইদ খান

একজন গুণী মানুষ ছিলেন আবু ছাইদ খান

122
0
SHARE

পরিক্রমা ডেস্ক : সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের একটি সুপরিচিত নাম আবু ছাইদ খান। তিনি সবার প্রিয় মুখ ছিলেন। ছাইদ খান বা খান সাহেব নামেই সবাই তাকে ডাকতেন। সহজ-সরল, সাধারণ জীবন-যাপন করতেন তিনি। তিনি ছিলেন আত্মনিবেদিত একজন মানুষ। কোন লোভ, কোন মোহ তার মধ্যে ছিলনা। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন, মানুষও তাকে আপনজনের মতো ভালোবাসতেন। এই ভালোবাসার মাঝে কোন খাদ ছিল না। তার বাবা আব্দুস সামাদ খানও ছিলেন এলাকার নামকরা বিচারক।

আবু ছাইদ খান সিরাজগঞ্জ জেলার বাগবাটি ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র- জীবন থেকেই তার মধ্যে নেতৃত্বের ছাপ ছিল। গত ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর এর এই দিনে দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তাঁর সন্তানগন প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। একাধারে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও এলাকায় সামাজিক কর্মকান্ডে তার অবদান ছিল চোখে পরার মত। এলাকায় ন্যায় পরায়ন বিচারক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ছোট বড় সবাইকে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালবাসতেন অন্তর থেকে।

তিনি আজীবন মানুষের খেদমত করে গেছেন। বিশেষ করে এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে তাঁর অবদান এলাকাবাসী কোনোদিন ভুলবে না। এলাকার কোন সমস্যা দেখা দিলেই ছুটে যেতেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন সময়ে এলাকায় কোন বিরোধ বা সংঘর্ষ দেখা দিলে দৌড়ে যেতেন এবং মানুষও তাকে মানতেন মুরুব্বী হিসেবে, যত বড় সংঘর্ষইহোক না কেন মাঝখানে দাড়ালে দুই পক্ষ থেমে যেতেন। এই মানুষটি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও কোন সাটিফিকেট নেননি। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণটাও কারো কাছে জাহির করতেন না। ছিল না কোন জাগতিক চাহিদা, নিরহঙ্কার ও সাদাসিধে টাইপের একজন স্বজ্জন মানুষ ছিলেন। তাঁর কথায় ও আচরণে সবসময় স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ফুটে উঠতো। আমিসহ আমাদের পরিবারের অনেকেরই শিক্ষাগুরু। আমার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি তার হাতে। রাজীবপুর ইছামতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তার কর্মজীবনে অবসরে যান। তিনি ছাত্রদেরকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন আবার শাসনও করতেন। মনে পড়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সার্কুলারটিও তিনি আমাকে সরবরাহ করেছেন।

তিনি খুবই জ্ঞানী, সচেতন ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর কাজে-কথায় ও চিন্তায় ছিলো রুচির ছাপ। এলাকার মানুষ তাঁর কাছে অনুপ্রেরণা, আশ্রয় ও যে কোনও বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান পেতেন। তিনি ছিলেন মাজলুম হৃদয়ের বন্ধু এবং জুলুমের বিরুদ্ধে আপোষহীন কন্ঠ। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী আবু ছাইদ খান তার সমগ্র কর্মজীবনে মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। ক্ষমতার অনেক কাছাকাছি থেকেও কখনো ক্ষমতার দাপট দেখাননি- এটাই ছিল তার জীবনের অন্যতম বড় দিক। তাঁর মৃত্যুতে শুধু আপনজনই কেঁদেছিল না কেঁদেছিল এই এলাকা-বাসীও। হাজার হাজার মানুষের জনস্রোত এসে মিশে গিয়েছিল তার জানাজায়। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে হাজারো মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন। তাঁকে হারিয়ে আজ পুরো এলাকাটা মুরুব্বিশূন্য। এলাকায় কোনো বিপদ -আপদ দেখা দিলে এখনও তার অভাবটাই প্রথমেই আলোচনায় আসে।

নিজ থানার গন্ডি অতিক্রম করে কয়েকটি থানায় তার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পরিবেশ শান্ত রেখেছেন। এলাকার লোকজনকে সাথে নিয়ে স্বেচ্ছায় রাস্তাঘাট তৈরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

তার এই সততা, এই আদর্শ, ন্যায় বিচার,গণতান্ত্রিকতা আমাদের নতুন প্রজন্মকে সত্য, সুন্দরের চেতনায় উদ্ভাসিত করবে চিরদিন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর আজীবনের সমস্ত নেক আমলগুলো কবুল করুন, মানবিক ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো মেহেরবানী করে ক্ষমা করুন এবং চূড়ান্ত পুরষ্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।

image_pdfimage_print