
ছবি: সংগৃহিত
বগুড়া থেকে ছায়েম তৌহিদ
উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ বগুড়ার মহাসড়কগুলো জোড়াতালি দিয়ে চললেও আঞ্চলিক অধিকাংশ সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানজট, দুর্ঘটনা আর জনদুর্ভোগ।
অথচ এ সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তি যাতায়াত করলেও তাদের কোনো উদ্যোগ নেই। জেলার ৩০-৪০ ভাগ রাস্তাগুলোর কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দকে ভরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তারপরও এসব সড়কগুলো দিয়ে জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি ও নানা সমস্যা নিয়ে যান চলাচল করছে। এসব খানা-খন্দে বর্ষার পানি জমে কাদা হয়ে গেছে।
এসব মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের দেখভাল করা অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা বলছেন, বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেশে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন। সেই সঙ্গে বগুড়া উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার হওয়ায় বিভিন্ন জেলার মানুষ এখানে এসে বসতি গড়ছেন। সেজন্য বগুড়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষ। এসব মানুষের জীবন যাত্রা স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গের ব্যাপক অভাব হয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় হলো চলাচলের জন্য রাস্তা ঘাট।
মানুষের মহামূল্যবান জীবনকে গুরুত্ব দিয়ে সেভাবে গড়ে ওঠেনি বগুড়ায় নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। প্রয়োজনের তাগিদে জীবনহানির শঙ্কা নিয়ে চলাফেরা করছে মানুষ। জেলায় মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ৫৫০ কিলোমিটার রাস্তা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ১ হাজার ২ শ কিলোমিটার, গণপূর্ত অধিদফতর এবং পৌরসভার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া-নামুজা মহাসড়ক, শিবগঞ্জ থেকে আমতলী আঞ্চলিক মহাসড়ক এ রাস্তাটিতে গত ৩ বছর আগে কাপেটিং উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌর শহরের ওমরপুর সবুজ চাল মিলের সামনে থেকে ডেরাহার তিনমাথা পর্যন্ত, নন্দীগ্রাম-শেরপুর সড়কের উপজেলার কৈগাড়ী থেকে দোহার পর্যন্ত, রানিরহাট থেকে টেংড়া মাগুড়,গোহাইল, বনানী গন্ডগ্রাম হয়ে রানীর হাট সড়কে ব্যাপকহারে খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে।
গাবতলী উপজেলার গাবতলি-পীরগাছা,পীরগাছা-কাগইল, উজগ্রাম-কাগইল, সৈয়দ আহমেদ-গাবতলী, কলেজ-আটাপাড়া, জামির বাড়িয়া-উজগ্রাম, উজগ্রাম-ডাকুমারা সড়ক। জেলার দুপচাঁচিয়া- আক্কেলপুর, চাদনী-তালুছা সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে দিয়ে ব্যাপক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়া পৌর এলাকার, সাতমাথা-ফুলতলা (৫ কিলোমিটার), হাড্ডিডট্টি-নুরানী মোড, কৈপাড়া, নাটাইপাড়া, উত্তর চেলোপাড়া, নামাজগড়, উপশহর, সেউজগাড়ি, দক্ষিন ফুলবাড়ি, সরকারি আজিজুল হক কলেজ সড়ক (নতুন ভবন), ফুলতলা বাজার সড়ক প্রভৃতি সড়কের গর্ত হয়ে বেহাল দশা।
বগুড়া শহরের রিকশাচালক গিয়াস উদ্দীন জানান, ‘শহরের অনেক এলাকায় পাকা রাস্তার পিচ ও খোয়া উঠে গিয়ে এমন গর্তের সৃষ্টি হয়ে তাতে বোঝা যায় না, যে এ রাস্তাটি আগে পাকা ছিল। ফলে এসব রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত রিকশা চালাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
বগুড়ার অটোরিকশা চালক রেজাউল করিম জানান, বগুড়ার পৌর সভার অনেক সড়কের বেহাল অবস্থা। এসব রাস্তার অধিকাংশ রাস্তার কাপেটিং উঠে গিয়ে কিছু গর্ত হয়েছে। সেখানে কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়ে কাদা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়া মহাস্থান এলাকার ট্রাক চালক মামুন জানান, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে নুরানী মোড সড়কটি দীর্ঘদিন আগে কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দে ভরে গেছে। এই সড়ক দিয়ে চলাচলা করায় প্রতিদিনই ট্রাক নষ্ট হয়ে যায়। এমন অবস্থায় মালামাল নিয়ে যান চলাচল করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কারণে এক দিকে যেমন দেশের রাজস্ব খাতের ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে অপর দিকে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারীরা।
বগুড়া থেকে আন্তঃজেলার বাসচালক আনিছুর রহমান ও মনির হোসেন জানান, রাস্তায় খানাখন্দ থাকায় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। মালবাহী ট্রাক রাস্তার বড় বড় গর্তে আটকে পড়ার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। যাত্রীরাদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই।
বগুড়া পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, বগুড়া প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও সেই অনুপাতে উন্নয়ন কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না। উপজেলা পর্যায়ে খ শ্রেণির পৌরসভার যে বরাদ্দ বগুড়া একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভাও একই বরাদ্দ। পৌরসভার অধীনে অনেক রাস্তার অবস্থা ভালো নেই। এরমধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করা বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় রাস্তাগুলো মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, যখন যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে।
বগুড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইউনুছ উদ্দীন বিশ্বাস জানান, জেলার অধিকাংশ সড়কগুলো মোটামুটি ভালো আছে। আমাদের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও অর্থ বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে কাজ করতে হয়। খানা-খন্দের সড়কের তালিকা আছে, অর্থ বরাদ্দ এবং সড়কের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত কাজ করা হচ্ছে।
বগুড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আসদুজ্জামান জানান, জেলায় ৫৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক আছে। এরমধ্যে ৪ শ কিলোমিটার রাস্তা ভালো আছে। বাকী রাস্তাগুলো চাহিদা মাফিক মেরামত বা পুনর্নিমাণ করার চাহিদাপত্র দেওয়া আছে। বরাদ্ধ পেলেই সড়কগুলোর কাজ করা হবে।