Home অর্থনীতি দুর্নীতি করবো না, করার সুযোগ দেবো না: বিআইএ প্রেসিডেন্ট

দুর্নীতি করবো না, করার সুযোগ দেবো না: বিআইএ প্রেসিডেন্ট

6
0
SHARE

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীমা খাতে কোনো ধরণের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। নিজে দুনীতি করবো না, অন্যকে দুর্নীতি করতে দেবো না বলে অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমদ।

তিনি বলেন, বীমা কোম্পানি জনগণের টাকা তছরুপ করবে, ছিনিমিনি খেলবে বিআইএ তা হতে দেবে না। আমরা তা মানবো না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো। কয়েকটি সংস্থার জন্য পুরো খাত প্রশ্নের মূখে পড়বে, এটা হতে দেব না।

রাজধানীর পল্টনস্থ ক্যাপিটালে মার্কেট জার্নালিষ্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টক-এ তিনি এই অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।

সাঈদ আহমেদ বলেন, বীমা আহরণের ক্ষেত্রে দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটা অসম প্রতিযোগীতা চলছে। এটাকে আমরা বন্ধের জন্য নীতি-নির্ধারকদের সাথে কথা বলবো। এই অসম প্রতিযোগীতা দেশের বীমা খাতকে আরো সমস্যায় ফেলবে।

তিনি বলেন, বীমা কোম্পানি সেবামূলক কাজ করছে। সেখানে তারা সেবার নামে কেন টাকা নেবে, এটা হতে দিতে পানি না। সেবার নামে বাণিজ্য করবেন তা হতে দেবো না।

তিনি আরো বলেন, বীমা খাতের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা বেশি। কারণ এই খাতের উন্নয়নে পলিসি করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে খাতটির বিকাশ ঘটবে এবং জিডিপিতে অবদান বাড়বে।

বিআইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের বীমা খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনার ৫টি মূল্য লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আপাতত কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি।এর মধ্যে রয়েছে- বীমা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আস্থা অর্জনের জন্য দেশব্যাপী প্রচারণা চালানো।

নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী করণ এবং নীতিনির্ধারকদের সাথে সহযোগিতা করে ব্যবসাবান্ধব কার্যকর তৈরি করা। আধৃনিক প্রযিুক্তর মাধ্যমে গ্রাহকদের বীমাসেবা আরো সহজলভ্য কিভাবে করা যায় সে বিষয়ে কাজ করা।

এ ছাড়াও বাজার সম্প্রসারণ ও স্বল্প আয়ের জনগণগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী বীমা পণ্য কিভাবে তৈরি করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করা। শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও ব্যাংক, পূঁজিবাজার এবং গণমাধ্যমের সাথে অংশিদারিত্ব করে সমন্বিত আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য।

সাঈদ আহমদ বলেন, দেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের বীমা খাত বৃদ্ধি পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় বেসরকারি খাতে ৮০টি বীমা কোম্পানির সংখ্যা আমার মতে কম। অনেক বীমা প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জের মুখে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আরো সমন্বয় করা প্রয়োজন।

বিআইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের বীমা খাতে বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে। যেমন কভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ, ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাষ্ফীতি বিশ্বব্যাপী, দেশের অর্থনীতির অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নেতিবাচক রিজার্ভ ইত্যাদির কারণে বীমা খাতের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।

এই খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা তুলে ধরে সাঈদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্পায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং গড় আয়ু বৃদ্ধির পরেও আমাদের ইন্স্যুরেন্স শিল্প এখনও তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারেনি। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। এর মধ্যে বীমা সচেতনতা ও সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা এখনও বীমার গুরুত্ব ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এর ভূমিকা পুরোপুরি বোঝে না।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক নীতিমালার সংস্কার চলমান থাকলেও, কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে আরও সমন্বয় প্রয়োজন। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে, গ্রাহকদের আরও সহজে বীমার আওতায় আনা প্রয়োজন। বিশ্বাসের অভাব ও দ্রুততম সময়ে দাবি নিষ্পত্তি, স্বচ্ছতা এবং উন্নত সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে হবে।

বর্তমান বীমা খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় তুলে ধরে তিনি বলেন, বীমার প্রতি জনগনের আস্থা বৃদ্ধি, সময়মত সকল প্রকার দাবী পরিশোধ, এনজিও কর্তৃক বীমা করার অধিকার রহিত করণ, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের লাইফ বীমা পলিসি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব, বীমা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন, ভ্যাট-ট্যাক্স সংক্রান্ত সমস্যাবলীর সমাধান করতে হবে।

এ ছাড়াও মটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলককরণ, বেসরকারী খাতে পুনর্বীমা কোম্পানি গঠন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে ভ্যাট, দ্বৈতকর ও করহার হ্রাসকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী স্থাবর ও অস্থাবর সম্পতির বীমা করা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

তবে প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সম্ভাবনা থাকে। নতুন উদ্ভাবন, নীতিমালা সংস্কার এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব কাজে লাগিয়ে আমরা বাংলাদেশের বীমা শিল্পের প্রকৃত সম্ভাবনাকে বাস্তবায়ন করতে পারবো, বলে বিআইএ’র নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ।

image_pdfimage_print