
বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক : আর প্রধানমন্ত্রী হতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি চাইছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটিই যেন তার শেষ মেয়াদ হয়। নতুনদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল ও এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় মেয়াদ। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছি। সব মিলিয়ে চতুর্থবার। আমি আর চাই না। একটা সময়ে এসে সবারই বিরতি নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। যেন তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দেওয়া যেতে পেরে।’
এক মাস আগেই চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার দল আওয়ামী লীগ ও জোট মিলে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৬ শতাংশ আসন জিতেছে। সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেছেন, পরবর্তী মেয়াদে আর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য চেষ্টা করতে চান না।
ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত এক দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বছরে গড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাণিজ্য বেড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগও এসেছে। এই উন্নয়নের পরও বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বলা হচ্ছে, এখনও বাংলাদেশের প্রতি চারজনে একজন দরিদ্র। শেখ হাসিনা তার সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে এই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান।
সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান- এসব মৌলিক চাহিদা। প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়। আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।’
তবে এই উন্নয়ন দিয়ে অনেক সমালোচকের মুখ বন্ধ করতে পারেননি শেখ হাসিনা। তাদের অভিযোগ, তিনি বা তার সরকার বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন এবং মুক্তচিন্তা ও মুক্তচিন্তার মানুষদের ওপর আঘাত থামাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুক্ত চিন্তাকে শতভাগ সমর্থন করেন তিনি। সমালোচনাও তাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘যত কাজ করবেন, তত সমালোচনা শুনবেন। তবে আমার দেশের মানুষকে প্রশ্ন করুন, তারা সন্তুষ্ট কি-না; তাদের যা যা প্রয়োজন, সব পাচ্ছে কি-না কিংবা আমি সব দিতে পারছি কি-না।’
শেখ হাসিনা তার আওয়ামী লীগবিরোধীদের জন্য রাজনীতির মাঠ সংকুচিত করে রেখেছেন এবং এক দলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চাইছেন– এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটের মাধ্যমেই তো ক্ষমতায় আসা, সেটা একদলীয় হয় কী করে? আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, ২০০৮-এ যে নির্বাচন হয়েছিল, সে নির্বাচনেও ৮৪ ভাগ (আসলে ৮৬.৩৪%) ভোট পড়েছিল। এবার তো ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। তখন বিএনপি-জামাত জোট পেয়েছিল মাত্র ২৮টি সিট। এবার ইলেকশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৬০টি সিট (৩০০টির মধ্যে)৷ বাকি সব অন্য দলগুলো পেয়েছে। সেখানে দল তো আছেই।’
বিরোধী দলকে দুর্বল মনে করেন কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন কোনো দল যদি তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে না যেতে পারে, জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে না পারে, আর যদি ভোট না পায়, সে দায়-দায়িত্ব কার? সে তো ঐ দলগুলোর দুর্বলতা।’
মৌলবাদীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নিবিড় সম্পর্ক আছে বলেও সমালোচনা আছে– এ বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি যে, এখানে বাক স্বাধীনতা আছে৷ তাই যে কেউ যে কোনো কিছুই বলতে পারেন।’
নারীর বিকাশে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নারী শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক করে দিয়েছি৷ তাদের বৃত্তিও দিচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তার নীতি নারী শিক্ষার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের চিন্তাও বদলে দিয়েছে। আগে বাবা মায়েরা চিন্তা করতেন, মেয়েকে পড়িয়ে লাভ কী। সে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে৷ এখন সেভাবে চিন্তা করেন না তারা৷ এখন ভাবেন, মেয়েকে শিক্ষিত করা উচিত যেন সে নিজে উপার্জন করতে পারে। এরপর সে বিয়ে করবে।
তিনি বলেন, ‘খুব ধীরে ধীরে আমরা পরিবর্তন আনছি। বাল্যবিবাহ এখন অনেক কমে গেছে।’
যে লক্ষ্য অর্জনে শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন, তাতে কি মৌলবাদীরা বাধা হবে– এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই না। আমি যা করেছি, তা করেছি এবং এটা চলবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ যারা বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য মধ্যবর্তী বিকল্প উপায় ভাবার চেষ্টা করছে। আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি। সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি৷ সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি। আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই। তাহলে তরুণ ও নারীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে।’
তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়াকে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এটাই চাই– তারা মিয়ানমারকে এ কথাটি বুঝাক, এরা যখন মিয়ানমারে চলে যাবে, তখন তাদের যা যা সাহায্য দরকার, থাকার বাড়িঘর, তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা, এখানে যা যা দিচ্ছে, তা ওখানেই দেবে এবং তাদের একটা নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তারা করবে। জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে।’