Home রাজনীতি সুষ্ঠু নির্বাচনে সেনাবাহিনী একমাত্র ভরসা : ঐক্যফ্রন্ট

সুষ্ঠু নির্বাচনে সেনাবাহিনী একমাত্র ভরসা : ঐক্যফ্রন্ট


বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা প্রতিবেদক : সারাদেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে হামলা, প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ চলছে অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন এখন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী একমাত্র ভরসা।

সোমবার বিকেলে পুরানা পল্টনে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যটি পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, সারাদেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে পুলিশের মারমুখী আচরণ ততই বাড়ছে।পুলিশ অনেকটা প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ।ঐক্যফ্রন্টের কাউকে কোথাও সহ্য করতে পারছে না তারা। ক্ষমতাসীন সরকার ও একশ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তার আগ্রাসী ভূমিকা ও অব্যাহত হামলা-মামলা-নির্যাতনের মুখে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা যারপরনাই দিশেহারা।

এভাবে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়।নিরাপদে ভোট চাওয়ার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না। ভোট চাওয়া তো দূরে কথা, ঘরেও ঘুমাতে দেওয়া হচ্ছে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা ও রহস্যজনক ভূমিকার কারণে মাঠে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে না। বরং নিরাপদ ভোটদানের পরিবেশ দিনকে দিন আরো ঘোলাটে হচ্ছে।

এ শঙ্কা সৃষ্টির জন্য সরকারী দল, পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সমভাবে দায়ী। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির বদলে এমন অরাজক, নৈরাজ্যকর ও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে একতরফা নির্বাচন করার দুরভসন্ধি কাজ করছে বলে মনে করা যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

একদিকে নির্বাচনের অবাধ-সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে না, অন্যদিকে বিদেশী পর্যবেক্ষকদের আসতে কৌশলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিদেশী পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে করা হচ্ছে রহস্যজনক আচরণ।যে কারণে পর্যবেক্ষক নিয়োগ ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নাগরিক সমাজের বেশকিছু সংগঠনকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ ভোট অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে সহায়তা জোগায়।’

ইউরোপ-আমেরিকার পক্ষে বিদেশি এক সংস্থার ৩২ জনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই ৩২ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সময়মতো ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এতে ওই সংস্থার সকলেই সময়মতো ভোট পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। রহস্যজনকভাবে এসব জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমতি চাওয়া ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ১৪টি সংস্থার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন রয়েছে আর একটি বড় রাজনৈতিক দল থেকে ৪টি সংস্থার বিপক্ষে অভিযোগ করা রয়েছে বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

যে রকমে নির্বাচনকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে ঠিক এক ও অভিন্নভাবে বিদেশী পর্যবেক্ষকদের আসতে ছলেবলে কৌশলে বাধার প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব করা হচ্ছে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।নির্বাচনের আগে দেশি–বিদেশি সম্ভাব্য পর্যবেক্ষকদের জন্য সরকার কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা অনতিবিলম্বে দূর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে আইন করা হলেও পদত্যাগ গৃহীত না হওয়া, বরং আদালত কর্তৃক তাদের মনোনয়ন একের এক বাতিল হওয়া, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে’ ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করতে হবে, সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না, সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন না, মোটরসাইকেলের জন্য পাস বা স্টিকার ইস্যু করা যাবে না, এ্কসঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে শনিবার এক নীতিমালা জারি করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে এমন বক্তব্যের পর জনমনে নানা ধরনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।সব মহল থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি উচ্চারিত হলেও নির্বাচন কমিশন কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এ নিয়ে খোদ নির্বাচন কমিশনে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়েছে।এতে ভোট নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন দেশবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। তারা রীতিমতো শঙ্কিত নিরাপদে ভোট প্রয়োগের ব্যাপারে।

লিখিত বক্তব্য ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, আর মাত্র ২/৩ বছর পর আমরা ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি পালন করতে যাচ্ছি। সে দিন আমরা যাতে বলতে পারি এমন একটি সরকার পেয়েছি, যারা সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে।

তিনি বলেন, সবাইর ভোট দিতে যাওয়া উচিত। জনগণ আজ পরিবর্তনের জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ।

সেনাবাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে কামাল হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি অতীতে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। আশা করি এ নির্বাচনেও তারা অতীতের মতো জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভূমিকা রাখবে।

এক প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ইনশা আল্লাহ শেষ পর্যন্ত আমরা নির্বাচনের মাঠে থাকব।

লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের মাঠে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোট দেওয়া তো দূরের কথা কাউকে ঘরে ঘুমাতেও দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হচ্ছে না অন্যদিকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসাও দেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের আইন থাকলেও হাইকোর্ট থেকে তাদের নির্বাচন করতে দেওয়া হচ্ছে না। একমাত্র ভরসা যে স্বাধীনতার সময় অনন্য ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।

অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্বাচনকে প্রহসন ও তামাশায় পরিণত করা হয়েছে। এটাকে নির্বাচন বলা যায় না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের যুগ্ম সম্পাদক জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।