Home ব্রেকিং ভোট বাতিল করে ফের সংসদ নির্বাচন দিন : ফখরুল

ভোট বাতিল করে ফের সংসদ নির্বাচন দিন : ফখরুল


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক :একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলুণ্ঠিত করে নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে জনগণের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছে বর্তমান সরকার। আমরা ফ্যাসিবাদী স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের এই ভয়াবহ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। সেইসঙ্গে জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি।’

সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। খায়রুল হকের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘একে একে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধানগুলোকে বাদ দিয়ে সংশোধনী এনে একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার মারাত্মক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এমনকি বিচার ব্যবস্থাকে আজ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। ফলে জনগণের শেষ আস্থা ও আশ্রয়স্থল সেই বিচার বিভাগেও আজ মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হচ্ছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত রায়ে পরিষ্কারভাবে এই কথা বলেছেন যে, বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের শিকার হয়েছে এবং জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিম্ন আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ন্যায়বিচার তিরোহিত হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি।’
এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচারপতি সিনহাকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে ভীতি সর্বগ্রাসী হয়েছে এবং দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের কারণে পরিস্থিতির গুরুত্বর অবনতি ঘটেছে। দেশনেত্রীর মামলায় এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।’

অপর এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অতি সম্প্রতি পাবনার ইশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতার (শেখ হাসিনা) ট্রেনবহরে হামলা সংক্রান্ত মামলায় নিম্ন আদালতে যে রায় দেয়া হয়েছে তা বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচারহীনতারই চিত্র। এই মামলার রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড সমগ্র জাতিকে বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুদ্ধ করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যেকোনও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, আমরা সবসময়ই সন্ত্রাসের ঘটনায় নিন্দা করেছি, প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঘটনাগুলিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় কোনও হতাহতেরও ঘটনা ঘটেনি।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের প্রায় সকল কর্মকর্তাকে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিন বছর পর অভিযোগপত্র দিয়ে ২৪ বছর পর এই আদেশ প্রমাণ করেছে যে, এই আদেশ ন্যায়বিচার পরিপন্থি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা আবারও এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য আওয়ামী লীগ একের পর এক গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে, বিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস করে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে চিরতরে নির্বাসিত করার আয়োজন সম্পন্ন করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘জনগণের আশ্রয়ের শেষস্থল বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যেহেতু বর্তমান পার্লামেন্ট জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়নি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল জবরদস্তিমূলকভাবে নিজেদের পক্ষে নিয়েছে, সেই কারণে জনগণের কাছে কোনও প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতার কোনও সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। বিচার বিভাগও আজ এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবদীন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবদিন মেজবা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।