Home অর্থনীতি চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে অটো রাইসমিলাররা

চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে অটো রাইসমিলাররা


বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক : রংপুর বিভাগের জেলাগুলোয় হঠাৎ চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে গেছে। ৩/৪শ অটো রাইসমিল মালিক নিজেদের ইচ্ছামতো মজুদের পাহাড় গড়ে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও চালের দাম হঠাৎ এমন লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে।

সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার এখনই যদি অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই সিন্ডিকেট চালের বাজার আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে এখানকার ৮ জেলায় প্রায় ১২ লাখ হেক্টর জমিতে ৫১ লাখ টন আমন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ কৃষকই তাদের উৎপাদিত ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রংপুর বিভাগের জেলায় চাল ব্যবসায়ী, খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে সংকট যদি কিছু থেকেই থাকে, তা হলে সেসব ধান গেল কই। গত এক সপ্তাহে এই এলাকার বাজারগুলোয় চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

একটি সূত্র জানায়, রংপুরের মাহিগঞ্জ, দিনাজপুরের পুলহাট থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এসব মোকামে এক সপ্তাহ থেকে অটো রাইসমিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে চিকন ও মাঝারি মানের চাল প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগে এই চাল ১শ থেকে ১৫০ টাকা কম দামে পাওয়া যেত।

রংপুরের আবু পাটোয়ারী, লিখন চৌধুরী, রহিম পাঠান, মহিদ চৌধুরীসহ বেশ কজন আড়তদার জানান, তারা বিভিন্ন মোকাম ঘুরেও অটো রাইসমিলগুলোর কারণে চাল সংগ্রহ করতে পারেননি। মিলের মালিকরা বাজার থেকে একতরফাভাবে ধান সংগ্রহ করে ইচ্ছামতো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কৃষকদের কাছেও ধান নেই।

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কৃষকদের কাছেও আমন ধান নেই। কারণ তারা আগেই ধান বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। আগেই কৃষকদের কাছে ধান কিনে অটোরাইসমিল মালিকরা মজুদ করে রেখেছেন।

রংপুর সদরের আমন চাষি অমল চন্দ্র, কাউনিয়ার আফজাল হোসেন, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের আব্দুর রহিমসহ অনেকে জানান, তারা আমন ধান গোলায় তোলার পরপরই কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের কাছে এখন কোনো ধান নেই। ফলে এখন ধানের দাম মণপ্রতি ১শ থেকে ১৫০ টাকা বাড়লেও তাদের কোনো লাভ হচ্ছে না; বরং এতে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

রংপুর চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, অটো রাইসমিল মালিকরা আগে থেকে ধানের মজুদ গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অটো রাইসমিলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লাইক আহমেদ অবশ্য চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করেন।

তিনি বলেন, চিকন ও মাঝারি মানের চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মোটা চালের দাম কমেছে। এছাড়া চাহিদা বাড়াও চিকন চালের দাম বৃদ্ধির একটি কারণ। এতে অটো রাইসমিলগুলোর পাশাপাশি কৃষকদের কাছেও কিছু ধান থাকায় তারা দুটো পয়সা বেশি পাচ্ছেন। আর অটো রাইসমিলগুলোয় ধান মজুদ রাখার বিধান রয়েছে। তাই ব্যবসার স্বার্থে তারা মজুদ রেখে বেআইনি কিছু করছে না বলে তিনি মনে করেন।

বিষয়টি নিয়ে রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা রায়হানুল কবির বলেন, চিকন ও মাঝারি মানের যে চালের দাম বেড়েছে তা বোরো জাতের, আমন নয়। আমনের দাম স্বাভাবিকই আছে। তার পরও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ধান মজুদ করেছেন কিনা বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।