Home আইন/আদালত উত্তরায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফাইজার কুলখানি ও মাইলষ্টোন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও...

উত্তরায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ফাইজার কুলখানি ও মাইলষ্টোন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন অনুষ্ঠিত


 

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির যুগ্ম মহাসচিব এবং দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক ও ধর্মচিন্তা পাতার বিভাগীয় সম্পাদক প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামলেখক মো: ফাইজুল ইসলামের একমাত্র কন্যা ফাইজা তাহসিনা সূচির কুলখানি গত শুক্রবার ৮ ফেব্রুয়ারি রাজউক উত্তরা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের সুরমা ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ফাইজার রূহের মাগফিরাত কামনা করে শুক্রবার সকালে কোরআনখানি ও বাদ জুমা রাজউক উত্তরা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরে রাজধানীর উত্তরা ১২ নং সেক্টর কবরস্থানে ফাইজার কবর যিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করা হয়।
গত মঙ্গলবার ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় রাজউক উত্তরা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ১৮ নং সেক্টরের ১০ নং ব্রিজের সামনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বেপরোয়া মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো-চ ১৩-৪১৫৭) চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত মাইলষ্টোন স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী ফাইজা তাহসিনা সূচির হত্যাকারী ঘাতক চালকের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও তদন্ত করে বিচারের দাবিতে শুক্রবার সকাল ১১ টায় উত্তরার ১৮ নং সেক্টরের ১০ নং ব্রিজের দুর্ঘটনাস্থলে মাইলষ্টোন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ফাইজার সহপাঠী ও এলাকাবাসীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন।
১০ নং ব্রিজের উপর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, তারা টিভি নিউজের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের সংবাদ পাঠক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান, দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক বার্তা সম্পাদক সাহাবুদ্দিন ভুঁইয়া, জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির যুগ্ম মহাসচিব এবং দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক ও ধর্মচিন্তা পাতার বিভাগীয় সম্পাদক মো: ফাইজুল ইসলাম, দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শামসুল আলম, মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফা, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালাহউদ্দিন কাইজার ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুদ্দিন, ১৮ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ ও রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের এলোটি ইমরান হোসাইন, রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, সাংবাদিক নাসির উদ্দীন বুলবুল ও সাংবাদিক নিখিল চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে ফাইজার সহপাঠী মাইলষ্টোন স্কুলের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ঘাতক মাইক্রোবাস চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবি করেন। ফাইজার বাবা ফাইজুল ইসলাম মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় তিনিও ঘাতক মাইক্রোবাস চালকের মৃত্যুদন্ডের দাবি করে বলেন, ‘আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারী চালককে দ্রুত আটক করে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।’
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শামসুল আলম বলেন, ‘ফাইজা ও আমার মেয়ে একই স্কুলে পড়ে। সে আমার দিকে আসতেই রাস্তা পার হচ্ছিল। তখন একটি মাইক্রোবাস সজোরে এসে তাকে ধাক্কা মারে। এতে ফাইজা ছিটকে পড়ে। পরে মাইক্রোবাসের চালক ফাইজার মাথার ওপর দিয়ে গাড়িটি উঠিয়ে দেয়।’ তিনি এই ঘটনাকে একটি হত্যাকা- বলেও মন্তব্য করেন।
মানববন্ধনে তারা টিভি নিউজের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান অনবিলম্বে মাইক্রোবাসের ঘাতক চালককে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের জন্য জোরালো প্রতিবাদ জানান। মানববন্ধনের অন্য বক্তারা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘ঘটনার তিন/চার দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ প্রশাসন এখনো গাড়ির চালককে আটক করতে পারেনি। এটা প্রশাসনের গাফিলতির প্রমাণ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চালককে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।
এ সময় ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন সরকারকে নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘পরিবহন খাতে বিদ্যমান অনিয়ম দূর না করলে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না। কিন্তু অনিয়ম দূর করার কোনো কাজই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নেও কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।’
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন অভিযোগ করে বলেন, ‘গত অক্টোবরে একটি আইন পাস করাতে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এই আইনের কারণে পরিবহন খাতের লোকজন আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। সেই আইনটি এখনো কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি। এই আইনের কোনো বিধি এখনো তৈরি করা হয়নি। বিধি ছাড়া আইনের কোনো মূল্য নেই।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘কিছুদিন পরপর বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করে কোনো লাভ নেই। এতে জরিমানা আদায় করা যায় কিন্তু কোনো সমাধান পাওয়া যায় না। কারণ প্রায় ১৮ লাখ চালক এখনো ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সে গাড়ি চালান। তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া না গেলে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিজ উদ্যোগে গণসচেতনতা তৈরি করারও আহ্বান জানান তিনি। এ সময় নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পক্ষ থেকে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলসহ সেখানকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বিশেষ সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়।
রাজপথে মৃত্যুর মিছিল বন্ধের লক্ষ্যে মানববন্ধনে ঘাতক মাইক্রোবাস চালকের গ্রেফতার, ফাসির দাবী ও হত্যাকা-ের প্রতিবাদের ওইসব ঝাঁঝালো কথা হয়তো নিহত সূচির ছোট ভাই বর্ণের কানে যায়নি। ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ওর বোনের ছবিতেই। ও হয়তো জানে না বাবা-মায়ের চোখের সামনে মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া স্কুলগামী ছাত্রী সূচিও আর ফিরে আসবে না কোনো দিন!
উল্লেখ্য যে, গত শুক্রবার ৮ ফেব্রুয়ারি রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের এলোটিগণ কর্তৃক দুর্ঘটনাস্থল ১০নং ব্রিজকে ফাইজা ব্রিজ ও তৎসংলগ্ন প্রজেক্টের সড়কটিকে ফাইজা সরণি নামকরণ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। এ সময় রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের এলোটি ইমরান হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রকল্প এলাকা ও এর আশপাশের রাস্তায় কোনো গতিরোধক নেই। এই সুযোগে সবাই প্রচ- দ্রুতগতিতে গাড়ি-মোটরসাইকেল চালায়। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সেখানে আরও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’
এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সূচির বাবা দৈনিক ইত্তেফাকের সহকারী সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম বাদী হয়ে গত বুধবার তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। অথচ ঘাতক মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৪১৫৭) চালক ফারুক মোল্লাকে পুলিশ অদ্যাবধি পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি।

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউট অব ল্যাংগুয়েজ স্টাডিজ। প্রফেসর ও এডভাইজার, ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, স্কুল অব লিবারেল আর্টস, ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, উত্তরা, ঢাকা। উপদেষ্টা সম্পাদক, পায়রা.নিউজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা। গবেষক, কলাম লেখক, বাংলাদেশ বেতারের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমের সংবাদ পাঠক, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও আলোচক।