Home এক্সাম সাহসী তামান্নার এক পায়ে জিপিএ-৫

সাহসী তামান্নার এক পায়ে জিপিএ-৫


বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা ডেস্ক : হুইল চেয়ারটার সঙ্গেই জীবনের বোঝাপড়া আর দুর্নিবার প্রেম। কারণ ওই চেয়ারই তার সবচেয়ে ‘আপনজন’। একসঙ্গে থাকা, যুগপৎ চলা। পৃথিবী দেখার পর থেকেই হাত কেমন হয়, সে বুঝতেই পারেনি। কারণ তার শরীরে হাত নামের অঙ্গটিই যে নেই। ডান পা-ও জম্মের পর থেকে দেখেনি, তাই হয়তো বা হাঁটার দুঃসাহসও দেখায়নি কখনো। তার পরও জীবনচাকা ঘোরাতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার কাঁটাগুলো একে একে উপড়ে ফেলছে অদম্য সাহসী মেয়েটি। অভিশপ্ত প্রতিবন্ধকতাজয়ী সেই গল্পের নায়িকা তামান্না আক্তার নূরা। যশোরের ঝিকরগাছার আলীপুর গ্রামে তার বাস। পাহাড়সম মনোবল থাকলে কৃতিত্বের এমন চূড়ায় ওঠা যায়, আবার সে দেখাল। সাহস ছড়ানো বাঁ পা দিয়ে লিখেই পিইসি ও জেএসসির পর এবার এসএসসিতেও হাঁকাল ছক্কা! তুলে নিল জিপিএ ৫।

যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না নূরা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। শারীরিক বাধা ডিঙিয়ে ভালো ফল করা নূরা ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনের বড় কর্মকর্তা হতে চায়। তবে তার উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কায় পরিবার।

তামান্না নূরার বাবা রওশন আলী বলেন, ‘মেয়ের ফলে আমরা খুবই আনন্দিত, তবে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।’ রওশন আলী একটি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ফলে তাঁকে টিউশনি করে সংসার চালাতে হয়। ফলে মেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

তামান্না নূরার মা খাদিজা খাতুন জানান, জম্মের পর নূরার শ্রবণ ও মুখস্থ শক্তি এত প্রখর ছিল যে একবার শুনলেই আয়ত্ত করতে পারত। সে অক্ষর লেখা শুরু করে বাঁ পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক ধরে। তারপর একইভাবে কলম ধরে লেখা আয়ত্ত করে। বইয়ের পৃষ্ঠা ওল্টানো, পায়ের আঙুলের ফাঁকে চিরুনি, চামচ দিয়ে খাওয়া ও চুল আঁচড়ানো সহজে আয়ত্ত করে নূরা। মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের সহযোগিতা চান মা খাদিজা খাতুন।

বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলালউদ্দীন খান জানান, তামান্না নূরা তার কষ্টের ফল পেয়েছে। তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।

২০১৩ সালে আজমাইন এডাস স্কুল থেকে পিইসি এবং ২০১৬ সালে বাঁকড়া জে কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নূরা জিপিএ ৫ পেয়েছিল। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নূরা সবার বড়।

তামান্না নূরার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্ম নেয় নূরা। ওই সময় হাসপাতালে মা খাদিজা খাতুন জ্ঞান ফিরেই দেখেন জন্ম দেওয়া তাঁর প্রথম কন্যাশিশুর দুটি হাত ও একটি পা নেই। দারিদ্র্যের সংসার, বেকার স্বামী। বাসায় ফিরে সামাজিকভাবে অনেক প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে হয়েছে। বেড়ে ওঠা শিশুটির চাহনি আর মেধা সেদিন মায়ের মনে সাহস জুগিয়েছিল।