Home আইন/আদালত র‌্যাবের হাতে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত আসল সোহাগ গ্রেফতার; টাকার বিনিময়ে সাজা...

র‌্যাবের হাতে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রাপ্ত আসল সোহাগ গ্রেফতার; টাকার বিনিময়ে সাজা ভোগ করছে নকল সোহাগ।


১। র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদক ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। গোয়েন্দা নজরদারী ও আভিযানিক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব ইতিমধ্যেই জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

২। বিগত ২৬/১১/২০১০ তারিখে কদমতলী থানাধীন আউটার সার্কুলার রোডে নোয়াখালী পট্টিতে, নান্নু জেনারেল ষ্টোর এর সামনে বেলা অনুমান ১৪১৫ ঘটিকায় একটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। উক্ত আলোচিত হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীগণ (ক) সোহাগ @ বড় সোহাগ (৩৪), পিতা- গিয়াস উদ্দিন @ কাঙ্গাল, সাং-৪৪০ বিড়ি ফ্যাক্টরী গলি, মুরাদপুর, থানা-কদমতলী, ঢাকা (খ) মামুন (৩৩), পিতা- মৃত আলাউদ্দিন শেখ, সাং- ৪৫৪ খালপাড় (নোয়াখালী পট্টি), মুরাদপুর, থানা-কদমতলী, ঢাকা, (গ) সোহাগ @ ছোট সোহাগ (৩০), পিতা- শফু মিয়া, সাং- ৪১২, মুরাদপুর হাই স্কুল রোড, থানা-কদমতলী, ঢাকা এবং অজ্ঞাতনামা ঃ আরো ৩/৪ জন।

৩। উল্লিখিত আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন কবির @ টিটু’কে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা হত্যার জন্য গুলি করে। গুলি ভিকটিম টিটু-র মাথার ডান পাশের্^ লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়; আহত ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার কর্তৃক কদমতলী থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। কদমতলী থানার মামলা নং-৪৯ তাং-২৬/১১/২০১০ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড।

৪। সোহাগ (৩৪) @ বড় সোহাগ অত্র মামলার ০১ নং আসামী এবং সে বিগত ২২/১২/২০১০ তারিখে মামলার ০১ নং আসামী হিসেবে গ্রেফতার হয় এবং ১৬/০৫/২০১৪ তারিখে কারাগার হতে জামিনে মুক্তি লাভ করে। সে জামিন লাভ করার পর থেকে পলাতক রয়েছে। ২৮/১২/২০১৭ তারিখ ০১ নং আসামী সোহাগ (৩৪) @ বড় সোহাগ এর অনুপস্থিতিতে বিজ্ঞ আদালত রায় প্রকাশ করেন। বিজ্ঞ আদালত সোহাগ (৩২৪৪) @ বড় সোহাগ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সোহাগ (৩৪) @ বড় সোহাগ’কে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।

৫। বিজ্ঞ আদালতের রায় প্রকাশের পর আসল সোহাগ @ বড় সোহাগ পরিকল্পনা মোতাবেক তার ফুফাতো ভাই @ নকল সোহাগ (মোঃ হোসেন (৩৫), পিতা- মৃত হাসান উদ্দিন) ০১-০১-২০১৮ তারিখে আদালতে আত্মসমর্পনপূর্বক জামিন প্রার্থনা করলে বিজ্ঞ আদালত জামিন না-মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকাসক্ত হোসেন @ নকল সোহাগ মাসিক ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকার বিনিময়ে জেল হাজতে যায়। উল্লেখ্য যে, মোঃ হোসেন (৩৫) মাদকাসক্ত হওয়ায় বাল্যকাল থেকেই প্রকৃত সোহাগের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। প্রকৃত সোহাগ মোঃ হোসেনকে জেল হাজতে প্রেরণের পূর্বে নকল সোহাগকে ২/৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবে মর্মে আশ্বস্থ করে।

৬। গত ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে জনৈক সাংবাদিক উল্লিখিত টিটু হত্যা মামলায় একজনের পরিবর্তে অন্যজন জেলা খাটার বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে আসলে বিজ্ঞ আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চায়। প্রতিবেদনে ২০১০ সালে ধৃত আসামী সোহাগ আর বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের রিপোর্টে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।

৭। উপরোক্ত বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে র‌্যাব-১০ এর অপারেশন টিম ও র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা টিম কাজ করে আসছিল। এরই মধ্যে বিশেষ দায়রা আদালত ও দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪, প্রকৃত আসামীর (সোহাগ) বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে অধিনায়ক, র‌্যাব-১০, ধলপুর, ঢাকা বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করেন।

৮। প্রকৃত সোহাগ উল্লিখিত ঘটনা প্রকাশের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সুকৌশলে দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করে। এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করে। দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় গতকাল করোনার ২য় ডোজ গ্রহণ করার জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল মিডফোর্ড হাসপাতাল আসে।

৯। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০, সদর কোম্পানী, অপারেশন টিম র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় গত ২৯/০১/২০২২ তারিখে ২০০০ ঘটিকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল মিডফোর্ড হাসপাতাল এলাকা হতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অত্র হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত প্রকৃত আসামী সোহাগ @ বড় সোহাগকে গ্রেফতার করে।

১০। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত প্রকৃত আসামী সোহাগ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ০২ টি হত্যা মামলা, ০২ টি অস্ত্র মামলা ও ০৬ টি মাদক মামলাসহ সর্বমোট ১০ টি মামলা রয়েছে।

১১। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।