Home জাতীয় রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা


রমজান ও শবেবরাতকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে চায় সরকার। এ জন্য ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে আজ বুধবার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ ছাড়া স্বল্প আয়ের কোটি পরিবারকে রমজানের আগে এবং মাঝে দুবার টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে যাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয়ে সে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং টিমও শক্তিশালী করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে অস্থির হয়ে ওঠেছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। সরকার নির্ধারিত দামেও ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ছে চিনির দাম। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি, মাছ-মাংস ও শাকসবজির দামও নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় রমজানে পণ্যমূল্য কোথায় গিয়ে থামবে, তা নিয়েই উদ্বিগ্ন জনসাধারণ। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়লে চাপে পড়বে দেশের মধ্যবিত্তরা। বিষয়টি সরকারের নজরে আসায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দরদাম সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন বলে জানা গেছে।

শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কীভাবে দেশে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা যায় সেই কৌশল নির্ধারণেরও নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান। সেই আলোকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে আজ বেলা আড়াইটায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআর চেয়ারম্যান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, এসবির অতিরিক্ত আইজি, জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণের মহাপরিচালকের একজন করে প্রতিনিধি অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। টিসিবির পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার কীভাবে স্থিতিশীল রাখা যায়, সে বিষয়টিও আলোচনা করা হবে সভায়। এর পাশাপাশি রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নানান আশার বাণী শোনানো হলেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ জরুরি নিত্যপণ্যের বাজার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, এক বছরে যে হারে দাম বেড়েছে, গত এক দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম এতটা বাড়েনি। পণ্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে, যা চরম ভোগান্তিতে ফেলবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। তাই মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ জন্য দেশের পণ্যমূল্যের লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সম্প্রতি সংস্থাটির এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে তারা সরকারের আয়-ব্যয়, বাজেট বাস্তবায়ন ও আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের রাজস্ব আয় নিয়ে কিছু পরামর্শ দেয়। সেখানে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জোর দেওয়ার জন্য বলে আইএমএফ। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে উৎপাদন, বণ্টন, পরিবহন ও সরবরাহ পর্যায়ে তদারকি বাড়ানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আইএমএফ তাদের পর্যবেক্ষণে বলছে, করোনাপরবর্তী এক নতুন অর্থনীতির মুখ দেখবে বিশ্ববাসী। এতে অর্থনীতিতে নতুন চাহিদা সৃষ্টি হবে। তাই নতুন নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, যা কর্মসংস্থান তৈরিতে রাখবে সহায়ক ভূমিকা। এসব বিষয় সামনে রেখে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এক ধরনের কঠিন চ্যালেঞ্জ পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গৃহীত পদক্ষেপগুলোও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলেছে সংস্থাটি।