Home ক্যাম্পাস খবর ইউজিসি’তে জাতীয় শোকদিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ইউজিসি’তে জাতীয় শোকদিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত


পরিক্রমা ডেস্ক: বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অফিসার্স এসোসিয়েশন ও কর্মচারি ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২২ পালন উপলক্ষে ‘অশ্রুঝরা আগস্টে শোকসঞ্জাত শক্তির অন্বেষণ’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা গতকাল (২৯.০৮.২০২২) ইউজিসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় বিশিষ্ট রাস্ট্রবিজ্ঞানী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম প্রধান অতিথি এবং কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ ও প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ইউজিসি অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ জামিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান।

মুখ্য আলোচক প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ তাঁর বক্তব্যে বাঙ্গালী জাতিসত্তার উৎপত্তি, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের আগের রাজনৈতিক পটভূমি, ১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ক্রমধারা, বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলের উল্লেখযোগ্য দিক এবং ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের সার্বিক ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক, শোষণ-বৈষম্যমুক্ত-সমতাভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার অগ্রপথিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র দূরদর্শী ও সাহসী নেতা যিনি তাঁর নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এ জাতিকে স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছেন এবং তাঁর নির্দেশেই সমগ্র বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে।
প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন মানে প্রাণে বাঙ্গালী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী। তাঁর বলিষ্ঠ ও আপোষহীন নেতৃত্ব ছাড়া দেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না। তিনি তাঁর জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই তিনিই বাঙ্গালী জাতির পিতা।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিরা বাঙ্গালী জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ- এ তিনটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আজীবন দেশের মানুষের স্বার্থের কথা তুলে ধরেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। কোন অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেননি। দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতেও তিনি সব সময় প্রস্তত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সমগ্র জাতিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন। ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্র্রেফতার হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন যা তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ স্বীকার করেছেন এবং আমেরিকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই স্বাধীনতার ঘোষণা ও জাতির পিতা নিয়ে বিতর্ক তৈরির কোন অবকাশ নেই। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র তদন্তের জন্য দ্রুত কমিশন গঠনের আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। স্বাধীনতার এই মহানায়ক আজীবন দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে আনতে অপচেষ্টা চালিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা যা এখনো অব্যাহত আছে।

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ব্যক্তি মুজিব নয়, বঙ্গবন্ধুর আর্দশকে হত্যা করার জন্য ৭৫ এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মৃত্যু নেই। তিনি সকলকে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানান।

প্রফেসর ড.বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বিদেশে পলাতক থাকায় বঙ্গবন্ধুর কয়েকজন খুনির ফাঁসির রায় এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারকে তিনি আইনি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপে জোরদার করার পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, যারা খুনিদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয় (এসাইলাম) দেয়া আইনসিদ্ধ নয়, মানবাধিকারের লংঘন এবং সংশ্লিষ্ট খুনির অপরাধের বিচারের রায় কার্যকর করার পথে অন্তবায় ।

প্রফেসর ড. মো: আবু তাহের বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত খুনীদের সাজা হয়েছে। ইতোমধ্যে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। যারা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লিবিয়া ও পাকিস্তানে পলাতক রয়েছে তাদেরকে দেশে ফেরত এনে সাজা কার্যকর করতে হবে। এও স্মরণ রাখা দরকার যে এটা একটি নিছক হত্যাকাণ্ড নয়, কেননা এর মাধ্যমে শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন হয়নি; বরং রাষ্ট্রের গতিপথ পাল্টে ফেলা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তাই, তিনি এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা মদদ যুগিয়েছে তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচেনের জন্য একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিশন গঠনের দাবি জানান।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে পাকিস্থানি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে কখনো মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা দেশ শাসনের দায়িত্বে আছেন এবং নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে একটি সোনার বাংলা গঠনে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তিনি এগিয়ে নিচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে ইউজিসি’র জেনারেল সার্ভিসেস, এস্টেট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরিচালক ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভূইয়া, জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন, গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ড. ফখরুল ইসলাম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন এবং ট্রেনিং বিভাগের পরিচালকের মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়া, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহ আলম এবং স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং এন্ড কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দূর্গা রানী সরকারসহ ইউজিসি’র সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউজিসি অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম দস্তগীর।