Home ব্যাংক-বীমা বিআইএ ডিপ্লোমাধারীরা কেমন আছেন ?

বিআইএ ডিপ্লোমাধারীরা কেমন আছেন ?

-মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ

বীমা এবং বঙ্গবন্ধু একইসূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশে বীমা শিক্ষায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। চাকুরীর সুবাদে বীমার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে বীমাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে জাতীয়করণ করেন এবং বীমা শিল্পের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। যার উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ডিপ্লোমা ডিগ্রীর ব্যবস্থা করে বীমা শিল্পের জন্য শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরী করা। বীমা ডিপ্লোমাধারী ও প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের জন্য আমরা কি করতে পেরেছি তা চিন্তা করার সময় এসেছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ব্যাঙ্কাসুরেন্স, ইন্সু্যটেক, ব্রোকারেজ হাউজ ইত্যাদি চালুর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু এগুলো পরিচালনার মতো শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি এই মুহুর্তে আমাদের রয়েছে কি?

কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স একাডেমীর এক পত্র মারফত জানতে পারলাম বর্তমানে দেশে ৬৬০ জনের মতো বিআইএ ডিপ্লোমাধারী আছেন। তাঁরা কোথায় কি অবস্থায় আছেন এবং বীমা শিল্পে কি ধরনের অবদান রাখছেন ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় পত্রে জানতে চাওয়া হয়েছে, যা অনেক পরে হলেও একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে বীমা শিল্পে কর্মরতদের শিক্ষিত জন শক্তিতে রূপান্তরের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের থাকা খাওয়ার জন্যও একাডেমীতে ব্যবস্থা রেখে ছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সেখানে শিক্ষার্থী না রেখে অফিস ভাড়া দেয়া হয়েছে। বীমা কোম্পানীগুলো শিক্ষার্থীদের সেখানে শিক্ষার জন্য পাঠাতে তাগিদবোধ করছে না। আর দু’চারজন শিক্ষার্থী যারা নিজস্ব উদ্যোগে যেতে ইচ্ছুক বর্তমান ঢাকার যানজটের কারণে সেখানে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অধিকাংশ বীমা কোম্পানীর অফিস মতিঝিল কেন্দ্রিক হওয়াতে যাতায়াতে দিনের সিংহভাগ সময় চলে যায়। সে সময়টুকু বীমা কোম্পানীগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় দিতে চায় না। তাছাড়া মফস্বল বা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমীতে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা ও সর্বোপরি বীমা কোম্পানীগুলোর আর্থিক প্যাকেজ ভালো না হওয়াতে এই পথে কেউ হাটছে না। তাই ১৯৮১ সন থেকে ২০২২ সন পর্যন্ত মোট ৬৬০ জন শিক্ষার্থী বীমা বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিপ্লোমা ডিগ্রী পেয়েছেন যা অত্যন্ত অপ্রতুল।

বীমা কোম্পানী এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বীমা শিক্ষা এবং বীমা শিক্ষায় শিক্ষিত ও বীমা ডিপ্লোমাধারীদের যথাযথ সম্মান দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। বীমা কোম্পানীগুলোতে বীমায় প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ ও বীমা শিক্ষায় পারদর্শীদের উচ্চতর পে-স্কেলের ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকারী এবং বেসরকারী সকল বীমা একাডেমীতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের জন্য কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে পাঠাতে হবে। সর্বোপরি বীমা শিক্ষার্থীদের জন্য সম্মানজনক একটি জায়গা তৈরীর উদ্যোগ বীমার অভিভাবক হিসাবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায়।

প্রধান মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পেশায় ডিগ্রীধারীদের যথাযথ সম্মান দেখিয়ে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছেন কিন্তু দেশীয় বীমা শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে বিআইএ ডিপ্লোমাধারীদের জন্য কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যদিও বীমা শিক্ষার্থীদের জন্য বীমা ক্ষেত্রে এটা দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী। বীমা পেশাজীবিরা অনেকবার আইডিআরএ কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে কথা বলেছেন। আশ্বাস মিলেছে কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।

৫২ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, চেতনা, নির্দেশনা ও প্রজ্ঞার কাছে আমরা হার মেনে যাচ্ছি। দেশীয় শিক্ষার প্রতি আমরা এতটাই উদাসীন যে, আমাদের ইন্সু্রেন্স একাডেমী থেকে প্রাপ্ত ডিগ্রীধারীদের আমরা সম্মান দেখাতে না পারায় বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স একাডেমীও শিক্ষার্থী না পেয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।

দেশে বীমা শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থে সরকারী এবং বেসরকারী বীমা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগীতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারে বীমা কোম্পানীগুলোকে চাপ প্রয়োগসহ দেশীয় বীমা ডিপ্লোমাধারীদেকে মূল্যায়নে আইডিআরএ-কে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে আসতে হবে।

উল্লেখ্য ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্সু্রেন্স কোম্পানী তার পুনঃবীমা, দাবী, হিসাব বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে ম্যানেজার লেভেলে ডিপ্লোমাধারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিলেও একজনও বীমা ডিপ্লোমাধারী আবেদন করেননি। তার মানে এই দাঁড়ায় দেশে বীমা ডিগ্রীধারীর অভাব রয়েছে।

বীমা জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী এবং বীমা ডিপ্লোমাধারীদের সবিশেষ মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী সৃষ্টির পাশাপাশি বীমা শিল্পে কর্মরতদের মধ্য থেকে কিভাবে একচুয়ারী তৈরী করা যায় সে বিষয়টিও লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত জরুরী। যাদের আমরা বিদেশে একচ্যুয়ারীয়াল সাইন্স পড়তে পাঠাচ্ছি তাঁরা ভবিষ্যতে দেশে ফিরে বীমা শিল্পে সত্যিকারভাবে অবদান রাখবেতো? নাকি যাওয়াটাই প্রধান। সে বিষয়টিও ভেবে দেখা বাঞ্চনীয়।

ভালো প্রণোদনা প্যাকেজ ও বীমা শিক্ষায় শিক্ষিতদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হলে আমাদের বীমা শিল্প যে কোন উন্নত দেশের সমকক্ষ হতে সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে বীমা জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ মনে করেন। সম্মিলিতভাবে সকলের প্রচেষ্টায় বীমা ডিপ্লোমাধারীদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে আর দশটা পেশাজীবির মতো মাথা উঁচু করে বাঁচার প্রক্রিয়া আমাদের দেশে সত্ত্বর শুরু হবে এই প্রত্যাশায় রইলাম।

লেখক : মীর নাজিম উদ্দিন আহমেদ, মু্খ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেড