Home ক্যাম্পাস খবর আরো দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণগঠন করা হচ্ছে। পাইপ লাইনে আছে...

আরো দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণগঠন করা হচ্ছে। পাইপ লাইনে আছে বেশ কয়েকটি


 

ক্যাম্পাস প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক, প্রশাসনিক, একাডেমিক অনিয়ম ও দূর্নীতি এবং শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারিদের যখনতখন চাকুরিচ্যুতি করার মতো গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় দু’টির ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণগঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণগঠনে করনীয় নির্ধারনে আজ সোমবার শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অতিব গোপনীয় এই মিটিংয়ে শিক্ষা মন্ত্রী ছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৩ জন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় দু’টির ট্রাস্টি বোর্ডে কারা থাকবেন তাদের নাম চূড়ান্ত করা হবে। চূড়ান্ত করার পর তা বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের চ্যান্সেলর মহামান্য রাস্ট্রপতির নিকট অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। ইতিপূর্বে নর্থ সাউথ, মানারাত ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম-এর ট্রাস্টি বোর্ড পূর্ণগঠন করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় : ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে জামায়াত ঘরানার লোকজন। বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা কামালুদ্দিন জাফরি যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত মাওলানা সাইদির আপন বেয়াই। ২০০৯ সালে ১০ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। তদন্ত কমিটি ব্যাপক আর্থিক দূর্ণীতির প্রমাণ পেয়ে যায়।

প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি: বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান রায়হান আজাদ টিটুর বিরুদ্ধে ২৪০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬ জন শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি ভূয়া প্রমাণিত হলেও তারা এখনো বহাল তবিয়তে সেখানে শিক্ষকতা করছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাস্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত বৈধ কোন ভিসি, প্রোভিসি এবং ট্রেজারার নাই দীর্ঘদিন যাবৎ। অন্যসব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের চেয়ারও শূন্য।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি : ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য মাওলানা আবুল হাসান মোহাম্মদ সাদেকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিবিধ গুরুতর অভিযোগের তদন্তে নামে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। দীর্ঘ দেড় বছরের তদন্ত শেষে ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটি গোপনীয় রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্টে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড Public Trust এর মূলনীতি পরিপন্থী এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর মূলনীতি পরিপন্থী হওয়ায় ট্রাস্টি বোর্ডটি বাতিল করা হলো এবংঅবিলম্বে একটি সার্বজনীন ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ পেশ করে। ইউজিসির তদন্ত মাওলানা সাদেক ও তার সাঙ্গপাঙ্গের ব্যাপক দূর্নীতি চিত্র ফুটে উঠে এসেছে। হাজার কোটি টাকা পাচার, জাল সার্টিফিকেট বিক্রি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে নামে বেনামে প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়, উচ্ছৃঙ্খল জীবনাচার, জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদদ প্রদান ইত্যাদি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি সরকারের বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা, দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিভাগ (BIUF) কর্তৃক অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে মাওলানা সাদেক ও তার সাঙ্গপাঙ্গের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করার সুপারিশ করে।

স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি : মহাখালীস্থ স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড Public Trust এর মূলনীতি পরিপন্থী এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর মূলনীতি পরিপন্থী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডও ভেঙ্গে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ট্রাস্টি বোর্ড ২টি ব্যবসায়ী পরিবারের পারিবারিক ট্রাস্ট ব্যাতিত কিছুই নয়। তাছাড়া জন্মলগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত বৈধ কোন প্রোভিসি এবং ট্রেজারার নাই। বর্তমানে যিনি ট্রেজারারের দায়িত্বে আছেন তিনি ট্রাস্টের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ায় এবং তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ট্রেজারার পদের যোগ্য না হওয়ায় ইতিপূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার উক্ত পদের প্রার্থিতা বাতিল করে। তারপরও তিনি অনেকটা গায়ের জোরে ট্রেজারারের পদ দখল করে আছেন। অভিযোগ রয়েছে যে, জন্মলগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ বানিজ্য ও পদোন্নতি বানিজ্য চলে আসছে। বিজনেস বিভাগের প্রধানকে অনৈতিক ভাবে প্রফেসর পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যদিও তিনি প্রফেসর পদে জন্য প্রয়োজনীয় নর্ম পূরণে সক্ষম নন্। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েট থেকে পাশ করা লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা লোকদের নিয়োগ দিয়ে কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একজন যোগ্য ব্যক্তিকে কৌশলে বিজনেস ফ্যাকাল্টি থেকে বাদ দিয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা উপাচার্যের পুত্রের বন্ধুকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

রয়েল ইউভার্সিটি অব ঢাকা : বনানীতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রীর নামে নাম করণের আবেদন ইউজিসিতে জমা দেওয়া আছে। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর সর্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কোন সুযোগ নাই। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত।

বেসরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে সঠিক পদ্ধতিতে নিয়মানুযায়ী চলে তা নিশ্চিত করনে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় যুগপৎ ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠে নেমেছে, যা উচ্চ শিক্ষা পরিমন্ডলে সুশৃংখলতার আবাস দিচ্ছে।