Home ক্যাম্পাস খবর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০১৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০১৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি


বিশ্ববিদ্যায়ল পরিক্রমা ডেস্ক :

আমার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।

অনেক শঙ্কা, সন্দেহ ও বিতর্কের পথপরিক্রমায় প্রায় তিন দশক পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আগামী ১১ মার্চ ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইন্শাআল্লাহ্। কোনো সন্দেহ নেই, এ দীর্ঘ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় তথা জাতি যত সংখ্যক অধিকতর দক্ষ ও নেতৃত্বের গুণাবলি সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব পেতে পারত তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে এ বঞ্চনার সংস্কৃতি থেকে আমরা বের হতে সক্ষম হব। ডাকসু নির্বাচন যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ‘ক্যালেন্ডার ইভেন্ট’-এ পরিণত হয় সেজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আন্তরিক সদিচ্ছা ও সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

(পৃষ্ঠা-২)

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর জনাব মোঃ আবদুল হামিদ, মাননীয় আদালতের নির্দেশনা, গণমাধ্যম, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমাজের বুদ্ধিদীপ্ত গণতন্ত্রমনস্ক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে আমরা উৎসাহব্যঞ্জক অনুপ্রেরণা লাভ করেছি, তাগিদ অনুভব করেছি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অকৃত্রিম সদিচ্ছা ও প্রয়োজনীয় সদয় সহযোগিতা প্রদানের আন্তরিক প্রত্যয় ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়কে অধিকতর আত্মপ্রত্যয়ী করেছে। আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আজ এ মুহূর্তে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি যে, দল-মত নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানসহ নির্বাচনী সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সকলে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করছেন। অবাধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি ও গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্রভূমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্ম-সংস্কৃতির মতাদর্শের এক বিরাট পরিবার। পরস্পরের মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, পরমতসহিষ্ণুতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই গণতন্ত্রের মূল দর্শন। গঠিত কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত ও সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণবিধি ২০১৯ কার্যকর রয়েছে। এ আচরণবিধি যথাযথভাবে পালন করা সংশ্লিষ্ট সকলের নৈতিক দায়িত্ব। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরের শিক্ষার্থীসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী ও সংগঠনসমূহ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থেকে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধাশীলতায় গণতান্ত্রিক আচরণের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমি সেজন্য আমাদের প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে, প্রত্যাশা করব, তাদের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা যেন সব সময়ে অব্যাহত থাকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক দর্শন এবং ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্রের মূল দর্শনের মধ্যে এক চমৎকার মিল রয়েছে; আর তা হলোÑ মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের উদার, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধ। ঐতিহ্যবাহী, গৌরবময় আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তার প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মনের অজান্তেই এই অসাধারণ দর্শন ও মূল্যবোধ উপহার দেয়। ভিন্ন মতাদর্শ একটি সমাজের সৌন্দর্য। আর ভিন্ন মতাদর্শ টিকে থাকতে পারে একমাত্র উদারনৈতিক, মানবিক ও অসাম্প্র্রদায়িক সমাজে। এরূপ সমাজে উগ্রতা, কট্টরবাদিতা পরাজিত হয়; আর মানবিক ও উদার মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সুমহান ঐতিহ্য সমুন্নত থাকবেÑএই আমাদের আহ্বান।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজের ও অপরের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার প্রয়োগ করে সমগ্র জাতির জন্য অতীতের ন্যায় একটি মহান আদর্শের উদাহরণ ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, নিঃসন্দেহে, সৃষ্টি করবেÑ এ বিশ্বাস আমি রাখি। মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিণতি জয়-পরাজয়কে ধৈর্য ও শ্রদ্ধাশীল চিত্তে মেনে নেয়া এক উদার মানবিক মূল্যবোধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ মূল্যবোধের কোনো ঘাটতি আছে বলে কেউ যাতে মনে করতে না পারে সে-বিষয়ে সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ক্যাম্পাসে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল পরিবেশ যাতে কোনোক্রমেই বিঘিœত না হয় সে-বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ করে প্রক্টরিয়াল টিম সতর্ক থাকবে। নির্বাচনের দিন এবং এর আগে ও পরে প্রক্টরিয়াল টিমকে বিশেষ সহয়তা প্রদানের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ-বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।

(পৃষ্ঠা-৩)

এ দাবি করা তুলনামূলক কঠিন যে, নির্বাচনের সকল কর্মযজ্ঞ ও আয়োজন একেবারেই ত্রুটিমুক্ত, নিখুঁত। অনিচ্ছাকৃত বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি হয়তো রয়েছে। তবে এতটুকু জোর দিয়ে বলা যায় যে, চিফ রিটানিং অফিসার ও তাঁর টিম, হলসমূহের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ, আমাদের সহকর্মীবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই। দীর্ঘ আটাশ বছর পর এ ধরনের গুরুত্ববহ বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন করতে পদে পদে আমাদের বিভিন্ন বিষয় নতুন করে ভাবতে হয়েছে, সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে। গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধিসহ সবকিছুতেই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় রাখতে হয়েছে নতুন করে। প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে; এর সুফল প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে গভীরভাবে অনুভূত হবে। এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইশতাধিক সম্মানিত সহকর্মী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষ জনবল হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছেন। তাই ভবিষ্যতে আরো সুষ্ঠু ও নিখাদ ব্যবস্থাপনায় ডাকসু নির্বাচন পরিচালিত হওয়ার পথ তৈরি হলোÑ একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায়।

যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অবশ্যই জয়যুক্ত করতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে, নির্বাচনের সময়ে ও নির্বাচন-উত্তরকালে যাতে বিদ্যমান শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে, তার জন্য ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় সমর্থন ও সচেতন প্রয়াস কামনা করছি। দীর্ঘদিন পর আমাদের প্রিয় শিক্ষার্থীরা নুতন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। তাদের অভিনন্দন জানাই। তাদের এই মহৎ যাত্রা চিরঞ্জীব হোক। ঐতিহ্যমণ্ডিত আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক।